Ajker Patrika

৫০ শতাংশ শুল্কের মধ্যেও হঠাৎ আমেরিকায় ভারতের রপ্তানি বাড়ল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

আমেরিকায় ভারতের পণ্য রপ্তানি গত মাসে (অক্টোবর) ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক এখনো কার্যকর থাকলেও গত পাঁচ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো সেপ্টেম্বরের তুলনায় ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি ১৪.৫ শতাংশ বেড়ে ৬.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর আগে রাশিয়ার তেল কেনার অভিযোগে গত ২৭ আগস্ট থেকে ২৫ শতাংশ জরিমানা সহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ভারতের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছিল।

তবে হঠাৎ করে রপ্তানি আবারও বেড়ে যাওয়ার পেছনে দুটি বড় কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলো আমেরিকা থেকে বার্ষিক এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) আমদানি বাড়াতে রাজি হয়েছে। সোমবারের (১৭ নভেম্বর) ঘোষণা অনুযায়ী, দেশটির মোট বার্ষিক এলপিজি চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ এখন আমেরিকা থেকে আসবে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী এটিকে ‘ঐতিহাসিক উন্নয়ন’ বলে অভিহিত করেছেন। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প প্রশাসন চা, কফি, মসলা-সহ বেশ কিছু কৃষিপণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এর ফলে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভারতীয় কৃষিপণ্য শুল্কমুক্ত হয়ে যাবে।

তারপরও সামগ্রিক চিত্র এখনো উদ্বেগজনক। অক্টোবরে ভারতের মোট পণ্য রপ্তানি বছরের হিসেবে ১১.৮ শতাংশ কমেছে। শীর্ষ ২০টি বাজারের মধ্যে ১৫ টিতেই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে। দিল্লির থিংক ট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (টিআরআই)-এর অজয় অবাস্তব বলেছেন, ‘স্মার্টফোন, ওষুধের মতো শুল্কমুক্ত খাতগুলো ভালো করেছে বলে ধারণা, তবে এটা এখনো অনুমানের পর্যায়ে। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমেরিকায় রপ্তানি ২৮.৪ শতাংশ কমেছে, এতে প্রতি মাসে ২.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে।’

এদিকে বিগত মাসগুলোতে শুল্ক আরোপের জের ধরে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে যে বাণিজ্য উত্তেজনা শুরু হয়েছিল, তা কমে আসার ইঙ্গিত এখন স্পষ্ট। মাসখানেক আগেও রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে আটকে থাকা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা এখন দ্রুত এগোচ্ছে। সোমবার ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা দা হিন্দুকে জানিয়েছেন, চুক্তির প্রথম ধাপ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

তবে এর মধ্যে কূটনৈতিক জটিলতাও রয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিল্লি সফর করবেন। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল তেল কিনেছে। গত বছর রাশিয়া থেকে ৫২.৭ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত তেল কেনা হয়, যা দেশটির ক্রয় করা মোট তেলের ৩৭ শতাংশ। ট্রাম্প বারবার বলেছেন, ভারত রাশিয়ার তেল কমাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যদিও দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে এটা স্বীকার করেনি।

তবু বোঝা যাচ্ছে, দুই দেশই বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত করতে আগ্রহী। শুল্ক যুদ্ধের ছায়া ক্রমশ সরে যাচ্ছে এবং আগামী মাসগুলোতে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ