Ajker Patrika

৪ দিন আগে নিখোঁজ কিশোরের অর্ধগলিত লাশ মিলল দিয়াবাড়ির লেকে

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
লেক থেকে কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
লেক থেকে কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর তুরাগের দিয়াবাড়ি থেকে এক দিনের ব্যবধানে আরও এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বেলা দেড়টার দিকে উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ির ৩ নম্বর ব্রিজসংলগ্ন লেক থেকে অর্ধগলিত মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে, গতকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে দিয়াবাড়ির ঝোপ থেকে শান্ত (১৬) নামের এক কিশোরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের সময় তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। পরে জানিয়েছে, সে কাফরুলে পরিবারের সঙ্গে থাকত। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে।

এদিকে, আজ উদ্ধার হওয়া মৃত কিশোরের নাম আতিক হাসান (১৩)। সে চাঁদপুর সদরের ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে। বর্তমানে সে শাহবাগের হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজা এলাকায় থাকত।

র‍্যাব ও পুলিশ জানিয়েছে, ১৪ নভেম্বর শাহবাগ এলাকা থেকে আতিক নিখোঁজ হয়। সেদিনই পরিবার শাহবাগ থানায় নিখোঁজ জিডি করে। জিডির সূত্র ধরে র‍্যাব-৩ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং এ ঘটনায় চারজনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাবের সহযোগিতায় পুলিশ লেক থেকে আজ মরদেহটি উদ্ধার করে। আটক ব্যক্তিরা জানিয়েছে, তারা ওই কিশোরকে অপহরণের পর পরিবারের থেকে মুক্তিপণ দাবি করেছিল।

এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সাদ্দাম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শাহবাগ থানা এলাকা থেকে ১৪ নভেম্বর আতিককে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে মুক্তিপণের দাবিতে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

নিহতের শরীরের আঘাতের চিহ্ন আছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসি সাদ্দাম বলেন, ‘আতিকের শরীর অনেকটা গলে গেছে। চার দিন থেকে লাশটি পানিতে পড়ে ছিল। তাই তেমন একটা বোঝা যাচ্ছে না।’

এ ঘটনায় আটক প্রসঙ্গে এসি সাদ্দাম বলেন, ‘আমরা জানতে পারছি, র‍্যাব-৩ চারজনকে আটক করেছে। যখন জিডি হয়েছিল, তখন থেকেই র‍্যাব কাজ করতে ছিল। তারপর যখন আসামিদের আটক করা হয়, তখন তারা র‍্যাবকে জানিয়েছে, দিয়াবাড়ির লেকে তার লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে।’

এ ঘটনায় মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আইনানুগ ব্যবস্থা কোন থানায় নেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো একটি ঘটনা যে স্থানে শুরু হয়, সেই থানায় গ্রহণ করা যায়। আবার যেখানে শেষ হয়, সেখানেও করা হয়। এ বিষয়ে দুই থানা-পুলিশ আলোচনা করে যেখানে ভালো হবে, সেখানেই মামলা হবে।’

মুক্তিপণ দাবি ও আটককৃতদের পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাব-৩-এর ভারপ্রাপ্ত মিডিয়া কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। মিডিয়ায় বলার মতো এখনো সময় হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রামেক হাসপাতাল: অসহায়ের সহায় আলেয়া

  • ২০০৬ সালে অস্থায়ী নিয়োগে আয়া হিসেবে হাসপাতালে কাজ শুরু করেন আলেয়া।
  • ২০১২ সাল থেকে অজ্ঞাতনামা রোগীদের একান্ত আপনজন হয়ে ওঠেন তিনি।
  • তাঁর আগ্রহেই ৭ শয্যার আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল অজ্ঞাতনামা রোগীদের অস্থায়ী ওয়ার্ডে এক রোগীকে সেবা দিচ্ছেন  আলেয়া বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল অজ্ঞাতনামা রোগীদের অস্থায়ী ওয়ার্ডে এক রোগীকে সেবা দিচ্ছেন আলেয়া বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিন কত রোগী ভর্তি হয়। তাদের কেউ কেউ আসে একেবারে পরিচয়হীন। সঙ্গে স্বজন থাকে না, মেলে না ঠিকানা। সে সব মানুষের স্বজন হয়ে ওঠেন আলেয়া। পরম মমতায় সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন তাদের। এভাবে সেবা দিতে গিয়ে কতজনের মা হয়ে উঠেছেন, হয়েছেন মেয়ে।

আর কেনই-বা স্বজন হয়ে উঠবেন না; শুধুই কি সেবা দেন তিনি। না। কারও চোখের কোণে জমে থাকা পানিও পরম মমতায় মুছে দেন আলেয়া বেগম। প্রায় এক যুগ এভাবেই অজ্ঞাতনামা রোগীদের স্বজন হয়ে উঠেছেন তিনি।

আলেয়ার বাড়ি রাজশাহী নগরের হেতেমখাঁ কারিগরপাড়ায়। ২০০৬ সালে তিনি আয়া হিসেবে হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। চাকরি স্থায়ী নয়। প্রতিবছর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় কিছু জনবল নেয়। সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবেই কাজ করেন তিনি। এ বছর তাঁর নিয়োগ হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে সে পরিচয় ছাপিয়ে অজ্ঞাতনামা রোগীদের কাছে আলেয়া হয়ে উঠেছেন একান্ত আপনজন।

আগে হাসপাতালের ওয়ার্ডের সামনেই বারান্দায় এসব রোগীদের সেবা দিয়ে যেতেন আলেয়া। গত বছর হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ তাঁকে আলাদা একটি ওয়ার্ডই করে দিয়েছেন। অজ্ঞাতনামা রোগীদের অস্থায়ী ওয়ার্ড নামে সেই ওয়ার্ডে রয়েছে সাতটি শয্যা। এত দিন আলেয়া একাই পরিচয়হীন রোগীদের সামলে এসেছেন। ওয়ার্ডের সঙ্গে দুজন নারী সহকারীও পেয়েছেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সাতটি শয্যায় রয়েছে রোগী। ওয়ার্ডটি বেশ পরিচ্ছন্ন। দুই বছরের ছেলেকে কোলে নিয়েই রোগীদের সেবা করছেন আলেয়া বেগম। এক বৃদ্ধের পায়ের ব্যান্ডেজ খুলতে খুলতে বলছিলেন, পায়ের ভেতর কতগুলো পোকা ছিল, আজকে নাই। আরাম হয়েছে?’ প্রশ্ন করেন বৃদ্ধকে। বৃদ্ধ হ্যাঁসূচক মাথা নাড়েন।

অন্য বিছানায় থাকা বৃদ্ধ আলেয়াকে দেখিয়ে বলেন, ‘আমার মেয়ে।’ পাশে হেসে উঠে আলেয়া বলেন, ‘নিজের নাম-পরিচয় বলতে পারে না; কিন্তু আমাকে মেয়ে ভাবে।’ বলতে বলতে তাঁর চোখের কোণেও জমে আনন্দাশ্রু। পাশে একটি শয্যায় শুয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন আরেক বৃদ্ধা। তাঁকে তুলে ওষুধ খাইয়ে দেন আলেয়া। অন্য শয্যায় পায়ে দগদগে ক্ষত নিয়ে এক তরুণী। যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আলেয়া বললেন, ‘তিন মাস ধরে আছে। যাওয়ার জায়গা নাই। মনে হচ্ছে, একেও আমার বল্টুর মতো বাড়িতে নিয়ে যাওয়া লাগবে।’

বল্টু ছেলে হয়ে উঠেছে আলেয়ার। এক যুগ আগে কিশোর বল্টুর দুটি পা ট্রেনে কাটা পড়ে। সুস্থ করে তোলার পর রেখে দেন নিজের কাছে। ওই তরুণীর বিষয়ে আলেয়া বললেন, ‘এই মেয়েটার যাওয়ার কোনো জায়গা নাই। সুস্থ হলে সে আমার বাড়িতে থাকতে পারে। আগে বাসাবাড়িতে কাজ করত। সুস্থ হয়ে দরকার হলে তা-ই করবে।’

আলেয়া জানান, এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহায়তা নিয়ে এ রোগীদের নাম-ঠিকানাও বের করছেন তিনি। তারপর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আগে অনেক অজ্ঞাতনামা রোগী মারা যাওয়ার পর লাশ মর্গে রেখে সিআইডির মাধ্যমে আঙুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় বের করা হতো। সেটা দেখে আমি হাসপাতালের পরিচালকের কাছে চিঠি লিখি। অনুরোধ করি, মৃত্যুর পর এভাবে পরিচয় বের না করে আগেই সেটা করলে আমরা তাদের পরিবারের কাছে ফেরাতে পারব। পরিচালক আমার অনুরোধ গ্রহণ করে সিআইডির সঙ্গে কথা বলেন। এখন আমি একটা অনুরোধ করে চিঠি লিখলেই সিআইডির সদস্যরা এসে আঙুলের ছাপ নিয়ে যান। অনেকের পরিচয় মেলে। আবার অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র করা থাকে না বলে আঙুলের ছাপ দিয়েও পরিচয় পাওয়া যায় না।’

আলেয়া জানান, এই রোগীদের সেবার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করে। এ জন্য হাসপাতালে অবস্থিত সমাজসেবা অফিস থেকে কিছুটা সহযোগিতা পাওয়া যায়। আলেয়া বলেন, তিনি যত দিন হাসপাতালে থাকবেন, তত দিন এভাবেই অজ্ঞাতনামা রোগীদের সেবা করে যাবেন। বললেন, ‘নাম না থাকুক, তারাও তো মানুষ। তাদেরকেও তো দেখতে হবে।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আলেয়া যা করছে, তা অত্যন্ত মানবিক। তার কাজ যাতে সুন্দরভাবে হয়, সে জন্য আলাদা একটা ওয়ার্ডই করে দিয়েছি। তার সঙ্গে আরও দুজনকে দিয়েছি। তাদের বেতন যেন নিয়মিত হয়, সেটা নিশ্চিত করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিমেন্ট নয়, বালু দিয়ে জিও ব্যাগ বোঝাই

  • নানা অভিযোগ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
  • ভাঙনকবলিত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন।
  • ১ হাজার ৮৯৫টি জিও ব্যাগ দেওয়ার কথা।
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি 
বরগুনার আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন রোধে প্রস্তুত করে রাখা জিও ব্যাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরগুনার আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন রোধে প্রস্তুত করে রাখা জিও ব্যাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার আমতলীতে তাফালবাড়িয়া নদীসংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ভর্তির কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জিও ব্যাগ ভর্তিতে বালুর সঙ্গে পরিমাণমতো সিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে না। এ কাজের ঠিকাদার পটুয়াখালী জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান টিটু। ঘটনাটি উপজেলার উত্তর সোনাখালী এলাকার।

জানা গেছে, গত ৩০ বছর আমতলী উপজেলার উত্তর সোনাখালী এলাকার তাফালবাড়িয়া নদীসংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙনের ঘটনা ঘটছে। বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি প্রবেশ করায় ওই এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। ২০২২ সালে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলে ওই নদীর ভাঙন রোধের চেষ্টা করে। কিন্তু দুই বছরের মাথায় জিও ব্যাগ সরে গিয়ে পুনরায় ভাঙন শুরু হয়।

ভাঙন রোধ ও বাঁধ রক্ষায় বরগুনা পাউবো এ বছরের জুন মাসে উদ্যোগ নেয়। ১২০ মিটার নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ কাজ দেয় ঠিকাদার মনিরুজ্জামান টিটুকে। প্রাক্কলনে ১ হাজার ৮৯৫টি জিও ব্যাগ ধরা হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই জিও ব্যাগ ভর্তিতে ছয় বস্তা বালুর সঙ্গে এক বস্তা সিমেন্ট মেলানোর কথা থাকলেও ঠিকাদার তা মেলাচ্ছেন না। এ ছাড়াও চুক্তি অনুসারে পাইলিং করছেন না ঠিকাদার। পাইলিংয়ে নিম্নমানের ড্রাম সিট ও গাছের গুঁড়ি দেওয়া হচ্ছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার এর মধ্যে ৪৯৫টি ব্যাগ ভর্তি করেছেন। এর মধ্যে ১৩৮ ব্যাগে কোনো সিমেন্টই দেওয়া হয়নি। অবশিষ্ট ব্যাগে দায়সারা সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঠিকাদার প্রভাব খাটিয়ে ভাঙন স্থানের নদী থেকেই বালু উত্তোলন করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা সম্প্রতি কাজের অনিয়মের বিষয়ে বরগুনা পানিউবোর কাছে অভিযোগ দেয়। মঙ্গলবার পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার ও উপসহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান পরিদর্শনে এসে কাজ বন্ধ করে দেন।

অভিযুক্ত ঠিকাদার মনিরুজ্জামান টিটু জিও ব্যাগ ভর্তিতে কাজের অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এসে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি ঠিকমতো তদারকি করতে পারলে এমন অনিয়ম হতো না।’

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান বলেন, অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশন শেষে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হান্নান প্রধান বলেন, অভিযোগ পেয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এবং উপসহকারী প্রকৌশলী পাঠিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাজে যে অনিয়ম রয়েছে, ওইগুলোও ঠিক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পরীক্ষায় প্রথম, ঘুষ না দেওয়ায় ফের বিজ্ঞপ্তি

  • ১০ লাখ ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে ডিসি ও অধ্যক্ষসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা।
  • জবাব না দেওয়ায় নিয়োগের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা।
গনেশ দাস, বগুড়া 
পরীক্ষায় প্রথম, ঘুষ না দেওয়ায় ফের বিজ্ঞপ্তি

বগুড়ায় একটি মাদ্রাসার গবেষণাগার বা ল্যাব সহকারী পদে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পরও ঘুষের ১০ লাখ টাকার দাবি পূরণ না করায় এক যুবককে চাকরি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আদালতে মামলা করেছেন চাকরিবঞ্চিত ওই যুবক। মামলা করার পর আদালত কৈফিয়ত তলব করলেও কোনো জবাব না দেওয়ায় নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

মামলায় বিবাদী করা হয়েছে বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি), নামুজা এসএসআই ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সাতজনকে।

জানা গেছে, বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকার শাহাদত হোসাইন গত ৯ অক্টোবর বগুড়ার প্রথম জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। তিনি নামুজা এসএসআই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় গবেষণাগার বা ল্যাব সহকারী পদে চাকরিপ্রার্থী ছিলেন।

বাদী অভিযোগ করেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি গবেষণাগার বা ল্যাব সহকারী পদে চাকরির আবেদন করেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ৩৪ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং তাঁকে নিয়োগ কমিটি স্বাক্ষরিত ফলাফল বিবরণী সরবরাহ করা হয়।

এরপর গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রুস্তম আলী মোবাইল ফোনে বাদীকে মাটিডালি মোড়ে একটি হোটেলে ডেকে নেন। সেখানে ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতিতে নিয়োগপত্র দেওয়ার আগে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তাঁরা। বাদী টাকা দিতে অস্বীকার করায় গত ৬ অক্টোবর স্থানীয় পত্রিকায় আবারও ওই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ৬ অক্টোবর বিকেলে জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার সঙ্গে দেখা করে ঘুষ দাবির বিষয়টি জানান বাদী। এ সময় জেলা প্রশাসক দুর্ব্যবহার করে চাকরিপ্রার্থীকে কক্ষ থেকে বের করে দেন। পরে শাহাদত হোসেন ঘুষ দাবির বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিয়ে রিসিভ কপি নেন। এরপর ৯ অক্টোবর আদালতে মামলা করেন।

ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রুস্তম আলী বলেন, ‘ঘুষ দাবির বিষয়টি সঠিক নয়। এমনকি ওই চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে আমার দেখা পর্যন্ত হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী তারিখে আদালতে জবাব দাখিল করব।’

জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ বলেন, ‘নামুজা এসএসআই ফাজিল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। চাকরিপ্রার্থীর কাছে ঘুষ দাবির অভিযোগটি পেয়েছি। নতুন জেলা প্রশাসক যোগদান করেছেন, তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, আদালত বিবাদীদের সাত দিনের সময় দিয়ে কৈফিয়ত তলব করেছিলেন। কিন্তু বিবাদীরা কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালত নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ দিয়েছেন। ২০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ রয়েছে।

বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা ১৬ নভেম্বর বদলির কারণে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে বগুড়া জেলাজজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) শফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘মামলার বিষয়ে আমার জানা আছে। ডিসির ব্যক্তিগত নামে মামলা হয়নি। পদের ওপর এ ধরনের অসংখ্য মামলা হয়ে থাকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর-ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য নারায়ণগঞ্জের সড়ক-মহাসড়ক

  • তিন মাসে চুরি-ছিনতাইয়ের ৬৮ মামলা।
  • পুলিশের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
  • জনবলসংকটের মধ্যেও নিয়মিত টহল চালানো হয়, দাবি পুলিশের।
শরিফুল ইসলাম তনয়, সিদ্ধিরগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চোর-ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সড়ক-মহাসড়ক। বিশেষ করে রাত হলেই বেড়ে যায় দুর্বৃত্তদের উৎপাত। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গত তিন মাসে ৫১টি চুরি এবং ১৭টি ছিনতাইয়ের মামলা করা হয়েছে; কিন্তু বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি। আইনি জটিলতা এড়াতে অনেকেই মামলা করা থেকে বিরত থাকেন। এ ছাড়া থানা থেকে প্রতিকার না পাওয়ার কথাও বলছেন অনেকে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, চলন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে অস্ত্রের মুখে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। ফলে রাতের বেলায় আতঙ্ক নিয়ে সড়ক-মহাসড়ক পার হতে হয়।

সাইনবোর্ড এলাকার ব্যবসায়ী মাসুম বলেন, আগে জায়গায় জায়গায় পুলিশের চেকপোস্ট ছিল, নিরাপত্তা ভালো ছিল। এখন সড়কে পুলিশ থাকে না বললেই চলে। সিএনজিচালক আবুল কালাম বলেন, সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হয় নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের ভুইগর চানমারি এলাকায়। একসময় রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি চালালেও এখন চালাই ৮টা পর্যন্ত। অটোরিকশাচালক পারভেজ বলেন, শহরে ছিনতাইকারী বেড়েছে। আগে সড়কে অনেক পুলিশ দেখা যেত। এখন তাদের ডাকলেও আসতে চায় না। পুলিশ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে এ সংকট কমে যেত।

স্থানীয়রা বলছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে রাতে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্টগুলো তৎপর ছিল। তবে বর্তমানে আগের মতো পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায় না। এর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। তবে পুলিশ বলছে, পরিবহন ও জনবল সংকটের মধ্যেও তারা নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চুরি-ছিনতাই রোধেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বছরখানেক আগে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান নূর। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একদল লোক সাদাপোশাকে এসে অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা নিয়ে যায়। ঘটনার পর দ্রুত থানা-পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে জিডি করি; কিন্তু এখনো কিছু ফেরত পাইনি।’

ইমাম হাসান নামের আরেক সংবাদকর্মী বলেন, মহাসড়ক এখন অরক্ষিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। সন্ধ্যা হলেই ছিনতাইকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। অটোরিকশা বা সিএনজিতে চলাচলের সময় অন্যদের মধ্যে কে ছিনতাইকারী আর কে সাধারণ মানুষ—তা বোঝার সুযোগ নেই। পুলিশের কাছ থেকেও তেমন সহযোগিতা মেলে না।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চিহ্নিত কিছু স্থানে আমাদের টহল দল সব সময় অবস্থান করে। ছিনতাই রোধে প্রায়ই বিশেষ অভিযান চালানো হয়। পুলিশের তৎপরতা না থাকলে অপরাধের মাত্রা আরও বেশি হতো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত