Ajker Patrika

২২ বছরের অপেক্ষা শেষে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ

আনোয়ার সোহাগ, ঢাকা
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪১
শেখ মোরসালিনের গোলে ভারতকে ১-০ গোলে হারাল বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শেখ মোরসালিনের গোলে ভারতকে ১-০ গোলে হারাল বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

অবশেষে এল সেই মুহূর্ত। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই গ্যালারিতে ছড়িয়ে পড়ল আনন্দ। হামজা চৌধুরী লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। শমিত শোম জড়িয়ে ধরলেন কিউবা মিচেলকে। এমন জয়ের তৃপ্তি পেতে কত বছরের অপেক্ষা করতে হয়েছে, তা নিশ্চয়ই জানেন। তারপরও বলে দিই—অপেক্ষাটা ২২ বছরের।

২০০৩ সালে মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে এসেছিল সর্বশেষ। জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ মুন্নার আত্মা যেন ভর করেছিল শেখ মোরসালিনের ওপর। তাঁর গোলেই যে ভারতকে ২২ বছর পর ১–০ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ‘সি’ গ্রুপ থেকে মূলপর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা আগেই শেষ হয়ে যায় হাভিয়ের কাবরেরার দলের। আগের ৪ ম্যাচে দুটি ড্রয়ের বিপরীতে একটিতেও আসেনি জয়ের দেখা। তবু সংবাদ সম্মেলনে জয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন কাবরেরা। যা বলেছিলেন তা করেও দেখালেন। এই জয় পাহাড়সম বোঝাও যেন নামিয়ে দিল তাঁর কাঁধ থেকে। হামজা–শমিতকে নিয়ে জিততে না পেরে কতশত সমালোচনাই না শুনতে হয়েছিল তাঁকে। তবু বিশ্বাস হারাননি।

বিশ্বাস হারাননি হামজা–শমিতরাও। আরেকজনের কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়। নেপাল ম্যাচে তিনি খেলতে পারেননি চোটের কারণে। ভারত ম্যাচের আগে পুরোদমে অনুশীলন করতে পেরেছেন দুবার। সেই মোরসালিন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সময় নেন ১১ মিনিট। নিজেদের অর্ধে তাঁর কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ছুটতে থাকেন রাকিব হোসেন। আকাশ মিশ্রকে গতিতে পরাস্ত করে আড়াআড়ি পাসে মোরসালিনের দিকে বাড়ান তিনি। মোরসালিনও চতুরতার সঙ্গে তাঁর প্রথম স্পর্শে ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধুর দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল পাঠান জালে। পুরো স্টেডিয়াম ফেটে উল্লাসে বাংলাদেশের জার্সিতে ২১ ম্যাচে এটি তাঁর সপ্তম গোল।

ব্যবধানটা আরও বাড়তে পারত শুরুতেই। ১৪ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে রাকিবের বাড়ানো ক্রস মোরসালিনের কাছে পৌঁছানোর আগেই তালুবন্দী করেন সান্ধু। বাংলাদেশের জন্য ছোটখাট এক ধাক্কা হয়ে আসে তারিক কাজীর চোট। ২৭ মিনিটে তাই তাঁকে তুলে নিয়ে শাকিল আহাদ তপুকে নামান কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।

৩১ মিনিটে গোলরক্ষক মিতুল মারমার বিপদে ফেলতে বসেছিলেন বাংলাদেশকে। হামজা চৌধুরী না থাকলে সেখানে সমতায় ফিরতে পারত ভারত। পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ডান কর্নার ফ্লাগে কাছে গিয়ে লো বিল্ডআপে গড়বড় করে ফেলেন মিতুল। তাঁর হাফ ক্লিয়ারেন্সের লং বল গিয়ে পড়ে লালিয়ানজুয়ালা চাংতের কাঁছে। বক্সের বাইরে থেকে তাঁর নেওয়া শটে বাধা হয়ে দাঁড়ান হামজা। হেড করে কর্নারের বিনিময়ে বাংলাদেশকে গোলহজমের হাত থেকে বাঁচান তিনি।

এরপরই খানিকটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মাঠে। শোল্ডার চ্যালেঞ্জের পর থ্রো করতে যাওয়া বিক্রম প্রতাপকে বাধা দেন তপু বর্মণ। তাতে তাঁর দিকে তেড়ে আসেন নিখিল প্রভু ও ম্যাকারটন নিকসন। জটলা মধ্যেই মোরসালিন ধাক্কা মেরে বসেন নিখিল। তাই তপু ও নিখিল দুজনেই দেখেন হলুদ কার্ড।

ভারতের কয়েকটি আক্রমণ সামলে ৪৪ মিনিটে সুযোগ আসে হামজার কাছে। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর ভলি অবশ্য লক্ষ্য খুঁজে পায়নি। তা বাদ দিলে প্রথমার্ধে একেবারেই নির্ভুল ছিলেন হামজা। মাঠের সবক্ষেত্রে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ বেশ সফলতার সঙ্গে কাটিয়ে ওঠেন লেস্টার সিটিতে খেলা এই মিডফিল্ডার। বাংলাদেশও তাই বিরতিতে যায় এগিয়ে থাকার স্বস্তি নিয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে ভারত। একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। স্বাগতিকেরাও সেভাবে গুছিয়ে খেলতে পারছিল না। ৪৯ মিনিটে সুরেশ সিংয়ের বাঁকানো ফ্রি কিকে রাহুল ভেকের হেড পোস্টের অনেকটা বাইরে দিয়ে চলে যায়। চার মিনিট মহেশ সিংয়ের ভলিও একই পরিণতি পায়।

মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত প্রায় কোণঠাসা করে রাখছিল বাংলাদেশের রক্ষণ। গোলদাতা মোরসালিনকে আর রাখার প্রয়োজন না করায় ৭১ মিনিটে বদলি করান কাবরেরা। মাঠে নামান শাহরিয়ার ইমনকে। ৭৯ মিনিটে হঠাৎই আক্রমণের দৃশ্যপটে আসেন শাকিল। কিন্তু বক্সের বাইরে থেকে তাঁর নেওয়া শট সান্ধু তালুবন্দী করেন সহজেই। দুই মিনিট পরই ইমনের ক্রসে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের হেড সন্দেশ ঝিঙ্গনের ঘাড়ে না লাগলে হয়তো গোলের দেখা পেত বাংলাদেশ।

সময় যত ঘনিয়ে আসছিল, ততই বাড়তে থাকে হৃদস্পন্দন। ভারতের একের পর এক হৃদয় কাঁপিয়ে দেওয়া আক্রমণ শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। ভারতের কাছেই তো ২২ বছরে কতবার তীরে এসে তরি ডোবাতে হয়েছে কতবার। না, এবার মিতুল তা হতে দেননি। শুরুর ভুল শুধরে শেষ মুহূর্তে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান গোলপোস্টে। অক্ষত রাখেন জাল। তাঁর শেষের এই পারফরম্যান্স সুযোগ করে দেয় জয়গান গাওয়ার। ২২ বছর পর ভারতকে হারিয়ে ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ স্লোগানে তৃপ্তি নিয়ে সমর্থকদের বাড়ি ফেরার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭ কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে নীতিগত সিদ্ধান্ত, অধ্যাদেশ চূড়ান্তের অপেক্ষা

হঠাৎ বেশ কটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট ডাউন, যা জানা গেল

এনবিআর সদস্য বদিউল আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দিল্লি সফরে এক দিন আগেই ঢাকা ছাড়লেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

গ্রাহক সেজে গ্রামীণ ব্যাংকের ফটকে ককটেল ঝুলিয়ে উধাও দুই নারী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতকে হারানোর কৃতিত্ব পুরো দলকে দিলেন বাংলাদেশ কোচ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জয়ের পর এমন হাসি লেগে আছে কাবরেরার মুখে। ছবি: বাফুফে
জয়ের পর এমন হাসি লেগে আছে কাবরেরার মুখে। ছবি: বাফুফে

শেখ মোরসালিন, রাকিব হোসেন নয়তো হামজা চৌধুরী— এমনই কিছু উত্তর আসবে বলে মনে হচ্ছিল। কিন্ত না হাভিয়ের কাবরেরা আলাদা করে কারও নাম বললেন না। বরং ভারতকে হারানোর কৃতিত্বটা পুরো দলকেই দিলেন বাংলাদেশ কোচ।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ‘সি’ গ্রুপের নিয়মরক্ষার ম্যাচ ছিল। তবে লড়াইটা যখন বাংলাদেশ–ভারতের তখন তা সবকিছু ছাপিয়ে যায়। মঙ্গলবার ২২ বছর পর ভারতকে হারানোর তৃপ্তি পেল বাংলাদেশ। শেখ মোরসালিনের গোলে জয় এসেছে ১–০ ব্যবধানে।

কাবেরেরাও যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। এমন একটি জয়ের আশ্বাস কতবারই তো দিতে হয়েছে তাঁকে। এবার যখন নিশ্চয়তাই দিয়ে ফেললেন ম্যাচের আগের দিন তখন আর কোনো ভুল করলেন না।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমার পক্ষে একজনের নাম বলা সম্ভব নয়। আমি কাউকেই আলাদা করে বলতে পারছি না। কারণ এটা দলের বিষয় ছিল। আর অনেক সময় যারা ততটা আলোচনায় থাকে না, যেমন সাদউদ্দিন, সোহেল, ইমন, রাকিব, ফাহিম, তপু জুনিয়র বেঞ্চ থেকে নেমে অসাধারণ ছিল। কিন্তু সত্যি বলতে সবাই। অবশ্যই হামজা, অবশ্যই শমিত—সবাই। এমনকি মিতুল যে কিছুদিন ধরে বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। কিছু ভুল করার পর ফিরে আসা সহজ নয়। তাই আজ দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ই অসাধারণ ছিল।’

ভারত ম্যাচের ক্যাম্প শুরুর আগে বাবা হওয়ার অনুভূতি পান কাবরেরা। কদিনের ব্যবধানে আবারও তাঁর মুখে তৃপ্তির হাসি। তিনি বলেন, ‘আমি জয় পেয়ে খুশি, খুব খুশি। কিন্তু আবারো বলছি. সবচেয়ে খুশি খেলোয়াড়দের জন্য। আর একটা বিষয় আমরা আগে বলেছি আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলাম, কারণ আমাদের সক্ষমতা আছে। আর আজকের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো এটা এই দলের জন্য স্বাভাবিক হওয়া উচিত। ভারতকে যেকোনো সময় হারানোর সামর্থ্য আছে আমাদের এবং আমরা সাফের যেকোনো দলকেই হারানোর সামর্থ্য রাখি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭ কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে নীতিগত সিদ্ধান্ত, অধ্যাদেশ চূড়ান্তের অপেক্ষা

হঠাৎ বেশ কটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট ডাউন, যা জানা গেল

এনবিআর সদস্য বদিউল আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দিল্লি সফরে এক দিন আগেই ঢাকা ছাড়লেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

গ্রাহক সেজে গ্রামীণ ব্যাংকের ফটকে ককটেল ঝুলিয়ে উধাও দুই নারী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এফএ কাপ নাকি ভারতকে হারানো, কোনটা বড় হামজার কাছে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ১১
ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে কোচের সঙ্গে হামজা চৌধুরী। ছবি: বাফুফে
ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে কোচের সঙ্গে হামজা চৌধুরী। ছবি: বাফুফে

লেস্টার সিটির দুজন কর্মকর্তা ঢাকায় এসেছেন হামজা চৌধুরীকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র বানাতে। নিজের জনপ্রিয়তা নিয়ে তাঁদের অল্প বিস্তর ধারণা দিয়ে রেখেছিলেন হামজা। যদিও শুরুতে বিশ্বাস করতে দ্বিধা হচ্ছিল। ঢাকায় পা রাখার পর সেটা হাওয়া মিলিয়ে যায়। আজ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় দেখাটা তাঁদের কাছে অভূতপূর্ব লাগার কথা।

জয়টা যে হামজার কাছেও অনন্য। শেখ মোরসালিনের গোলে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতকে ১-০ ব্যবধানে বাংলাদেশ হারালেও বড় নায়ক হিসেবে হামজার নামই নিতে হবে সবার আগে। মাঠের সর্বত্র নিজের দ্যুতি ছড়িয়ে এক মাস্টারক্লাস উপহার দিয়েছেন তিনি। এনে দিয়েছেন ২২ বছর পর ভারতকে হারানোর আনন্দ। সেই আনন্দ কি ছাড়িয়ে গেছে লেস্টার সিটির হয়ে ২০২০-২১ মৌসুমে এফএ কাপ জেতার মুহূর্ত।

হামজা অবশ্য সোজাসুজি উত্তর দিলেন না। তবে ভারতের বিপক্ষে পাওয়া জয়কে কোনোভাবে ছোটও করেননি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে তো অবশ্যই এগিয়ে। আজ ১৮ কোটি মানুষকে আমরা খুশি করেছি। বিশ্বের আর কোথাও এটা তুলনা করা যায় না। তাই হ্যাঁ, এটা এফএ কাপ জয়ের সমতুল্যই বলা যায়।’

হামজা আরও বলেন, ‘আমরা আগের ম্যাচগুলোর মতো শেষ মিনিটে ম্যাচ হারিনি বা পয়েন্ট হাতছাড়া করিনি, কারণ আমরা সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করেছিলাম যে সবাই একসঙ্গে থাকলে আমরা পরিস্থিতি সামলে নিতে পারব। আমি খুবই খুশি, বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্য, সব খেলোয়াড়দের জন্য এবং স্টাফদের জন্য। এই ফলাফলের পেছনে এত কাজ করা হয়েছে যে এই দল এমন বড় কিছুর যোগ্যই ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭ কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে নীতিগত সিদ্ধান্ত, অধ্যাদেশ চূড়ান্তের অপেক্ষা

হঠাৎ বেশ কটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট ডাউন, যা জানা গেল

এনবিআর সদস্য বদিউল আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দিল্লি সফরে এক দিন আগেই ঢাকা ছাড়লেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

গ্রাহক সেজে গ্রামীণ ব্যাংকের ফটকে ককটেল ঝুলিয়ে উধাও দুই নারী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১৮ কোটি মানুষকে খুশি করতে পেরেছি: হামজা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ১১
শিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতকে হারিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশ দলের উল্লাস। ছবি: বাফুফে
শিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতকে হারিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশ দলের উল্লাস। ছবি: বাফুফে

শুধু কি সমর্থক আর খেলোয়াড়। সাংবাদিকদের মধ্যেও ছড়িয়ে গেল এই জয়ের রোমাঞ্চ। ২২ বছরের অপেক্ষা বলে কথা। দুই ম্যাচেই জয়ের সাক্ষী হয়েছেন গুটিকয়েকজন। তাঁরা খানিকটা নস্টালজিক হলেন প্রেসবক্সে বসে। এর আগে বারবার শেষ মুহূর্তের ভারতের কাছে হারের বেদনা যে ছুঁয়েছে তাঁদের মনেও।

আজ শুধুই আনন্দে আহ্লাদ হওয়ার দিন। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতকে ১–০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে যখন কোচ হাভিয়ের কাবরেরার সঙ্গে হামজা চৌধুরী এলেন করতালি দিয়ে সম্মান জানানো হলো তাঁদের। চুইঙ্গাম চিবোতে চিবোতে হামজাও জানালেন উচ্ছ্বাসের কথা। জাতীয় স্টেডিয়ামে জয়সূচক গোলটি শেখ মোরসালিনের হলেও নেপথ্যে বড় অবদান হামজারই। মাঠে তিনি ঠিক সেটাই করেছেন, যা তাঁর করা উচিত ছিল। বল নিয়ে যা করতে চেয়েছিলেন, সবকিছু করেছেন সুনিপুণভাবে। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এই মিডফিল্ডার।

এই জয় তাঁর চেয়ে বেশি আর কেইবা চেয়েছিল। ১৮ কোটি মানুষকে আনন্দ দিতে পেরে তাই তো তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন তিনি। লেস্টার সিটির হয়ে এফএ কাপ জেতার অভিজ্ঞতা আছে হামজার। তবে ভারতকে হারানোর সুখটা এর চেয়েও বড়। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন কারণে তো অবশ্যই এগিয়ে। আজ ১৮ কোটি মানুষকে আমরা খুশি করেছি। বিশ্বের আর কোথাও এটা তুলনা করা যায় না। তাই হ্যাঁ, এটা এফএ কাপ জয়ের সমতুল্যই বলা যায়।’

জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেকের পর থেকেই ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে দুর্দান্ত। দলীয় ব্যর্থতার কারণে সেসব ফিকে হয়ে যায়। হামজা জানালেন ধৈর্যই হলো সবকিছুর মূল। তা না থাকলে স্বপ্নই বা পূরণ হয় কীভাবে, ‘অবশ্যই, স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ইনশা আল্লাহ, খুব তাড়াতাড়ি আমরা বড় কোনো টুর্নামেন্টেও কোয়ালিফাই করব। আমরা এখন প্রমাণ করেছি আমরা সক্ষম। শুধু সময় আর ধৈর্য দরকার। আমাদের দলে অনেক কম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। দর্শক পূর্ণ স্টেডিয়ামে খেলা বিশাল চাপের।’

দুই দলের কেউই খুব একটা গোছানো ফুটবল খেলেনি। তবে মানসিকতা ভারতের চেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। হামজা তাই শোনালেন, ‘আমি আর শমিত শোম একটু দেরিতে যোগ দিয়েছি।আমরা এসে শুধু কিছুটা মান, কিছুটা মানসিকতা যোগ করার চেষ্টা করেছি। আজ (গতকাল) আমরা সেই মানসিকতাই দেখিয়েছি। শেষ চার ম্যাচে শেষ ধাপে হোঁচট খাচ্ছিলাম। এবার উল্টোটা হলো—হয়তো বল পায়ে ততটা ভালো ছিলাম না, কিন্তু দেখিয়েছি আমরা কতটা স্থিতিশীল হতে পারি।’

কাবরেরা মুখেও একই কথা, ‘বহু ট্যাকটিক্যাল পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু অনেক সময়ই পরিকল্পনা উল্টো পথে যায়। আমরা ভেবেছিলাম বল দখলে আধিপত্য করব, কিন্তু পারিনি। তবে এটিই আজকের জয়ের বড় দিক, পরিস্থিতি আমাদের বিপক্ষে গেলেও আমরা মানিয়ে নিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭ কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে নীতিগত সিদ্ধান্ত, অধ্যাদেশ চূড়ান্তের অপেক্ষা

হঠাৎ বেশ কটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট ডাউন, যা জানা গেল

এনবিআর সদস্য বদিউল আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দিল্লি সফরে এক দিন আগেই ঢাকা ছাড়লেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

গ্রাহক সেজে গ্রামীণ ব্যাংকের ফটকে ককটেল ঝুলিয়ে উধাও দুই নারী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিম্বাবুয়েকে হারাতে পাকিস্তানের এত কষ্ট

ক্রীড়া ডেস্ক    
জিম্বাবুয়েকে হারাতে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলেছে পাকিস্তান। ছবি: ক্রিকইনফো
জিম্বাবুয়েকে হারাতে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলেছে পাকিস্তান। ছবি: ক্রিকইনফো

পাকিস্তানের ম্যাচে কি নাটক না হয়ে কি পারে! সংস্করণ, প্রতিপক্ষ যা-ই হোক, ম্যাচের বাঁক বদলে যায় বারবার। ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা যে তাদের নামের পাশে জুড়ে গেছে, সেটার এক ঝলক আজ দেখাল রাওয়ালপিন্ডিতে।

রাওয়ালপিন্ডিতে পরশু তৃতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে পাকিস্তান সিরিজ জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে। কিন্তু লঙ্কানদের ধবলধোলাইয়ের পর পাকিস্তানের ব্যস্ততা তো শেষ হয়নি। একই মাঠে আজ শুরু হলো পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজ। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে পাকিস্তান।

জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৪৮ রানের লক্ষ্যে নেমে আজ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা পাকিস্তানের রান তোলার গতিও অনেক কম ছিল। ৯.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ৫৪ রানে পরিণত হয় পাকিস্তান। যাঁদের মধ্যে দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান (১৬) ও সাইম আইয়ুব (২২) দুই অঙ্ক পেরোতে পেরেছেন। অধিনায়ক সালমান আলী আঘা ১ রান করেছেন। বাবর আজম আউট হয়েছেন শূন্য রানে।

চাপে পড়া পাকিস্তানকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন ফখর জামান ও উসমান খান। পঞ্চম উইকেটে ৩৯ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। ১৬তম ওভারের শেষ বলে রিচার্ড এনগারাভাকে র‍্যাম্প শট করতে গিয়ে ফখর (৪৪) ক্যাচ তুলে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ে উইকেটরক্ষক ব্রেন্ডন টেলরের হাতে। এক পর্যায়ে শেষ ১০ বলে ১৫ রানের সমীকরণের সামনে এসে দাঁড়ায় পাকিস্তানের। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ব্রায়ান বেনেট ক্যাচটা ধরতে পারলে ১৮.৩ ওভারে ৬ উইকেটে পরিণত হতো পাকিস্তান। কিন্তু বেনেট ক্যাচ ছেড়েছেন। পাকিস্তান চার বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে।

ষষ্ঠ উইকেটে ২১ বলে ৩৬ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়েন নাওয়াজ ও উসমান। ৯ রানে বেঁচে যাওয়া নাওয়াজ ২১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন। ১২ বলের ইনিংসে মেরেছেন ২ চার ও ১ ছক্কা। ১২ বলে ২১ রানের পাশাপাশি বোলিংয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন পাকিস্তানের এই বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। জিম্বাবুয়ের ব্রাড ইভান্স নিয়েছেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন এনগারাভা, তিনোতেন্দা মাপোসা ও গ্রায়েম ক্রেমার।

এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আঘা। আগে ব্যাটিং পাওয়া জিম্বাবুয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৭ রান করেছে। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন ওপেনার ব্রায়ান বেনেট। ৩৬ বলের ইনিংসে মেরেছেন ৮ চার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন সিকান্দার রাজা। পাঁচ নম্বরে নেমে ২৪ বলের ইনিংসে মেরেছেন ৩ চার ও ১ ছক্কা। পাকিস্তানের বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজ ৪ ওভারে ২২ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, আবরার আহমেদ, সাইম আইয়ুব ও সালমান মির্জা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭ কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে নীতিগত সিদ্ধান্ত, অধ্যাদেশ চূড়ান্তের অপেক্ষা

হঠাৎ বেশ কটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট ডাউন, যা জানা গেল

এনবিআর সদস্য বদিউল আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দিল্লি সফরে এক দিন আগেই ঢাকা ছাড়লেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

গ্রাহক সেজে গ্রামীণ ব্যাংকের ফটকে ককটেল ঝুলিয়ে উধাও দুই নারী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত