প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার আধুনিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হয়েছে। প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর, আজ রোববার রাজধানী দামেস্ক পতনের মধ্য দিয়ে তাঁর শাসন নাটকীয়ভাবে শেষ হয়। এতদিন এই আসাদকে অপ্রতিরোধ্যই মনে হচ্ছিল। গৃহযুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত সিরিয়া হয়ে উঠেছিল আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক শক্তিগুলোর জন্য একটি যুদ্ধক্ষেত্র।
২০০০ সালে, মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। তাঁর বাবা, হাফিজ আল-আসাদ, তিন দশক ধরে কঠোর হস্তে সিরিয়া শাসন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর বাশারকে নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পেশায় একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, লন্ডনে শিক্ষিত এবং প্রযুক্তি-প্রেমী বাশার প্রথমদিকে একজন আধুনিক, উদারপন্থী নেতা হিসেবে চিহ্নিত হন। ধীরে ধীরে তিনিও হয়ে ওঠেন নৃশংস।
শুরুতে ‘দামেস্ক বসন্ত’ নামে পরিচিত এক স্বল্প সময়ের কর্মসূচিতে তিনি কয়েক ডজন রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেন। এতে করে দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কিছুটা খোলামেলা পরিবেশ তৈরি করেন। তখন সিরিয়ার নাগরিকেরা তাঁর শাসনে নতুন সম্ভাবনার আশা দেখেছিলেন।
এরপর ২০০১ সালে, যখন ১ হাজারের বেশি বুদ্ধিজীবী গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে একটি পিটিশনে সই করেন, তখন সরকারের গোপন পুলিশ ব্যবস্থা দ্রুত তা দমন করে। এরপরই বাশার তাঁর বাবার মতো দমনমূলক নীতি অনুসরণ করতে শুরু করেন।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছালে জনগণের মধ্যে বড় আকারে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হলেও, সরকারের কঠোর দমননীতি বিদ্রোহকে সহিংস গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেয়।
আসাদ তাঁর বাবার মতো শক্তি প্রদর্শন করতে থাকেন। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে সহিংস সামরিক অভিযান চালানো হয়। সিরিয়ার সেনাবাহিনী, ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া এবং রাশিয়ার সহায়তায় আসাদ সরকার বিরোধীদের দমন করার জন্য ব্যাপক বোমা হামলা এবং বিধিনিষেধ ব্যবহার করে।
জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করে, আসাদের শাসনে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। সিরিয়ার সরকারি বন্দিশিবিরগুলোতে নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
গৃহযুদ্ধের কারণে ৫ লাখের বেশি মানুষ নিহত হন এবং ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। দেশটির পূর্ববর্তী ২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকই এখন শরণার্থী, যাদের অনেকেই জর্ডান, তুরস্ক, লেবানন এবং ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আকস্মিক অভিযান চালায়। সরকারি বাহিনী দ্রুত পরাজিত হয় এবং আসাদের সরকার টিকে থাকার শেষ আশাটুকুও হারায়। রাশিয়া এবং ইরান, যারা আগে আসাদকে সমর্থন দিয়েছিল, এবার সাহায্যে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হয় তারা।
আসাদ পালিয়ে গেছেন। তিনি এখন কোথায় কেউ জানে না। ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানী দামেস্ক বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আসাদের পতনের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের প্রায় ৫৪ বছরের শাসনের ইতি ঘটে।
১৯৭০ সালে হাফিজ আল-আসাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। সোভিয়েত মডেলের অর্থনীতি ও কঠোর দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে তিনি তাঁর শাসন দৃঢ় করেন।
বাশার আল-আসাদ প্রথমে তাঁর বাবার বিপরীত একটি ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তাঁর শাসনের প্রতিটি ধাপে দেখা গেছে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তিনি বাবার মতোই নৃশংস নীতিগুলো অবলম্বন করেছেন।
আসাদের পতনের পর সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখনো অন্ধকারে। ক্ষমতার শূন্যতা এবং কোনো সুস্পষ্ট উত্তরাধিকারীর অভাবে দেশটি নতুন সংঘাতের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং দেশের ভৌগোলিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। কুর্দি নেতৃত্বাধীন উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এবং বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া নিয়ে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন করে প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে।
আসাদের শাসনামল সিরিয়ার জন্য শিক্ষা এবং বিপর্যয়ের এক যুগ। নতুন নেতৃত্ব কীভাবে দেশকে গড়ে তুলবে, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
আরব নিউজ অবলম্বনে
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার আধুনিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হয়েছে। প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর, আজ রোববার রাজধানী দামেস্ক পতনের মধ্য দিয়ে তাঁর শাসন নাটকীয়ভাবে শেষ হয়। এতদিন এই আসাদকে অপ্রতিরোধ্যই মনে হচ্ছিল। গৃহযুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত সিরিয়া হয়ে উঠেছিল আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক শক্তিগুলোর জন্য একটি যুদ্ধক্ষেত্র।
২০০০ সালে, মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। তাঁর বাবা, হাফিজ আল-আসাদ, তিন দশক ধরে কঠোর হস্তে সিরিয়া শাসন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর বাশারকে নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পেশায় একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, লন্ডনে শিক্ষিত এবং প্রযুক্তি-প্রেমী বাশার প্রথমদিকে একজন আধুনিক, উদারপন্থী নেতা হিসেবে চিহ্নিত হন। ধীরে ধীরে তিনিও হয়ে ওঠেন নৃশংস।
শুরুতে ‘দামেস্ক বসন্ত’ নামে পরিচিত এক স্বল্প সময়ের কর্মসূচিতে তিনি কয়েক ডজন রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেন। এতে করে দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কিছুটা খোলামেলা পরিবেশ তৈরি করেন। তখন সিরিয়ার নাগরিকেরা তাঁর শাসনে নতুন সম্ভাবনার আশা দেখেছিলেন।
এরপর ২০০১ সালে, যখন ১ হাজারের বেশি বুদ্ধিজীবী গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে একটি পিটিশনে সই করেন, তখন সরকারের গোপন পুলিশ ব্যবস্থা দ্রুত তা দমন করে। এরপরই বাশার তাঁর বাবার মতো দমনমূলক নীতি অনুসরণ করতে শুরু করেন।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছালে জনগণের মধ্যে বড় আকারে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হলেও, সরকারের কঠোর দমননীতি বিদ্রোহকে সহিংস গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেয়।
আসাদ তাঁর বাবার মতো শক্তি প্রদর্শন করতে থাকেন। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে সহিংস সামরিক অভিযান চালানো হয়। সিরিয়ার সেনাবাহিনী, ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া এবং রাশিয়ার সহায়তায় আসাদ সরকার বিরোধীদের দমন করার জন্য ব্যাপক বোমা হামলা এবং বিধিনিষেধ ব্যবহার করে।
জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করে, আসাদের শাসনে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। সিরিয়ার সরকারি বন্দিশিবিরগুলোতে নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
গৃহযুদ্ধের কারণে ৫ লাখের বেশি মানুষ নিহত হন এবং ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। দেশটির পূর্ববর্তী ২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকই এখন শরণার্থী, যাদের অনেকেই জর্ডান, তুরস্ক, লেবানন এবং ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আকস্মিক অভিযান চালায়। সরকারি বাহিনী দ্রুত পরাজিত হয় এবং আসাদের সরকার টিকে থাকার শেষ আশাটুকুও হারায়। রাশিয়া এবং ইরান, যারা আগে আসাদকে সমর্থন দিয়েছিল, এবার সাহায্যে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হয় তারা।
আসাদ পালিয়ে গেছেন। তিনি এখন কোথায় কেউ জানে না। ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানী দামেস্ক বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আসাদের পতনের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের প্রায় ৫৪ বছরের শাসনের ইতি ঘটে।
১৯৭০ সালে হাফিজ আল-আসাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। সোভিয়েত মডেলের অর্থনীতি ও কঠোর দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে তিনি তাঁর শাসন দৃঢ় করেন।
বাশার আল-আসাদ প্রথমে তাঁর বাবার বিপরীত একটি ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তাঁর শাসনের প্রতিটি ধাপে দেখা গেছে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তিনি বাবার মতোই নৃশংস নীতিগুলো অবলম্বন করেছেন।
আসাদের পতনের পর সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখনো অন্ধকারে। ক্ষমতার শূন্যতা এবং কোনো সুস্পষ্ট উত্তরাধিকারীর অভাবে দেশটি নতুন সংঘাতের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং দেশের ভৌগোলিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। কুর্দি নেতৃত্বাধীন উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এবং বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া নিয়ে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন করে প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে।
আসাদের শাসনামল সিরিয়ার জন্য শিক্ষা এবং বিপর্যয়ের এক যুগ। নতুন নেতৃত্ব কীভাবে দেশকে গড়ে তুলবে, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
আরব নিউজ অবলম্বনে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) একটি কৌশলগত অর্থনৈতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র চুক্তি।
৩ ঘণ্টা আগে২০১৬ সালের অক্টোবরে প্যারিসে এক ভয়াবহ ডাকাতির শিকার হন মার্কিন রিয়েলিটি তারকা কিম কারদাশিয়ান। সেই ঘটনার বিচারে চলমান মামলায় আজ মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন তিনি। আদালতে কিম জানান, ঘটনার সময় তিনি নিশ্চিত ছিলেন, তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হবে।
৪ ঘণ্টা আগেনির্দোষ হয়েও প্রায় চার দশক ধরে জেল খাটছেন পিটার সুলিভান। শেষ পর্যন্ত তিনি মুক্তি পেলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ব্রিটেনের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘতম ভুল রায়। ১৯৮৭ সালে ২১ বছর বয়সী ডায়ান সিনডালকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন সুলিভান।
৫ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ইতিহাসের অন্যতম বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে হোয়াইট হাউস। চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সরবরাহ করবে, যার মূল্য প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলার।
৫ ঘণ্টা আগে