Ajker Patrika

দিল্লিতে অবৈধ অভিবাসী ধরপাকড়, ৪৬ বাংলাদেশি আটক

অনলাইন ডেস্ক    
Thumbnail image
দিল্লিতে অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত করতে দ্বারে দ্বারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ছবি: পিটিআই

দিল্লিতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী শনাক্তকরণ ও ফেরত পাঠাতে দুই মাসব্যাপী অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এই অভিযানে গত ১০ থেকে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৬ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বসবাস অথবা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থেকে যাওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এই ৪৬ জনের মধ্যে ৩৬ জনকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, আর বাকি ১০ জন তাদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও থেকে গিয়েছিল। এদিকে, গ্রেপ্তার বেশ কয়েকজনকে এরই মধ্যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিম জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সুরেন্দ্র চৌধুরী জানান, ঢাকার জাহাঙ্গীর শেখ এবং পারিনা বেগম দম্পতি বনাঞ্চল পেরিয়ে ভারতে ঢুকে সেখান থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে দিল্লিতে প্রবেশ করেছিল। তিনি আরও বলেন, ‘জাহাঙ্গীর জানিয়েছে—দিল্লিতে স্থায়ী হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে যান স্ত্রী-সন্তানদের আনতে। তারা তাদের বাংলাদেশি পরিচয়পত্র ধ্বংস করে দিল্লির রঙ্গপুরিতে অবৈধভাবে বসবাস করছিল।’

অন্য এক অভিযানে গত শনিবার ফতেপুর বেরির আরজান গড় মেট্রো স্টেশনের কাছে সাত বাংলাদেশি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে পাঁচজন নারী। বাকি দুজনের নাম মোহাম্মদ উমর ফারুক (৩৩) এবং রিয়াজ মিঞা ওরফে রিমন খান (২০)। তাদের সবাইকে এফআরআরওর কাছে ফেরত পাঠানোর জন্য হস্তান্তর করা হয় বলে জানান দক্ষিণ জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অঙ্কিত চৌহান।

দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা ১০ ডিসেম্বর দিল্লি পুলিশ ও সরকারকে অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত ও ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই অভিযানের সময় ১৬ হাজার ৬৪৫ জনকে যাচাই করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫ হাজার ৭৪৮ জনের নথি বৈধ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, ৮৫১ জনের নথি এখনো যাচাই প্রক্রিয়াধীন।

দিল্লির এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ৮৫১ জন ‘সন্দেহজনক’ অভিবাসীর যাচাই প্রক্রিয়া চলছে। যাদের বর্তমান নথিপত্র (পর্চা-১২) তাদের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, বা ঝাড়খণ্ডে বাসিন্দা হিসেবে উল্লেখ করেছে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকাগুলোতে—যেগুলো অনেক ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি—বিশেষ দল পাঠানো হয়েছে। বিএসএফ ইউনিটগুলোর সঙ্গে সমন্বয় ও অনুমোদনের ভিত্তিতে যাচাই চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্বারে দ্বারে গিয়ে যাচাই করা হচ্ছে এবং নথি সংশ্লিষ্ট রাজ্যে প্রেরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে ম্যানুয়াল যাচাইয়ের জন্য বিশেষ দল পাঠানো হচ্ছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যাচাইয়ের অন্তর্ভুক্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, বিহার এবং ঝাড়খণ্ড।

দিল্লি পুলিশ একটি অবৈধ অভিবাসন চক্রকেও শনাক্ত করেছে, যারা বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ এবং জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র (যেমন—আধার ও ভোটার কার্ড) পেতে সহায়তা করে। গত সপ্তাহে এই ধরনের একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে সাতজন ভারতীয় নাগরিক এবং পাঁচজন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী। দক্ষিণ জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার চৌহান বলেন, ২১ অক্টোবর সঙ্গম বিহারে সেন্তু শেখ ওরফে রাজা হত্যার তদন্তের সময় এই গ্রেপ্তার করা হয়।

কিছু ফেরত পাঠানো অভিবাসীকে ভারতে আবারও প্রবেশ করতে দেখা গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার চৌধুরী ফেরদৌস মোল্লার (৫০) একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশের মাদারীপুরের বাসিন্দা এবং একজন অপরাধী, যাকে ২০০৪ সালে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে পুনরায় ভারতে প্রবেশ করেন। তাঁকে সম্প্রতি আরকে পুরম এলাকায় পাওয়া যায়। যেখানে তিনি মিথ্যাভাবে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হিসেবে দাবি করেন। চৌধুরী বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি মাদারীপুরের বাসিন্দা এবং দোকান ও খাবারের হোটেলে কাজ করতেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত