Ajker Patrika

অসহায়দের অক্সিজেন দিতে দামি গাড়ি বেচে দিয়েছেন তিনি

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১৭: ৫৪
অসহায়দের অক্সিজেন দিতে দামি গাড়ি বেচে দিয়েছেন তিনি

ঢাকা: মুম্বাইয়ের ৫৬ বছর বয়সী মারিয়া মেহরা গত রোববার বাড়িতে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ওইদিন তাঁর অক্সিজেন লেভেল ৭৬-এ নেমে যায়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শয্যার অভাবে চিকিৎসা পাননি মারিয়া। অক্সিজেন না পাওয়া মারিয়ার হতাশ পরিবার হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে হাসপাতালে একটি শয্যা অথবা শুধু একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার। পরে মারিয়ার ভগ্নিপতি জ্যাকসন কাদরাস মধ্যরাতের দিকে শাহনেওয়াজ শাহ আলম শেখের কাছ থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগার করে আনেন। এক ঘণ্টা পর কাদরাস মুম্বাইয়ের মালাদের একটি হাসপাতালে শয্যা পান।

জ্যাকসন আল জাজিরাকে বলেন, শাহনেওয়াজ ভাই আমাদের কাছে সব। তিনি আমার স্ত্রীর বড় বোনের জীবন বাঁচিয়েছেন।

৩২ বছর বয়সী শাহনেওয়াজ 'করোনা যুদ্ধকক্ষ' নামে একটি দল গঠন করেছেন। এই দলটি মুম্বাইয়ে গুরুতর করোনা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করে। গত বছরের মে মাসে শাহনেওয়াজের বন্ধুর করোনা আক্রান্ত এক অন্তঃসত্ত্বা আত্মীয় হাসপাতালের গেটেই মারা যান। কারণ তিনি সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি। এই ঘটনা নাড়িয়ে দেয় শাহনেওয়াজকে। এরপর তিনি তাঁর সঞ্চয় দিয়ে কিনে ফেলেন ৩০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার।

এ নিয়ে আল জাজিরাকে শাহনেওয়াজ বলেন, আমার বন্ধু তাঁর আত্মীয়কে হারিয়েছে। কারণ তখন হাসপাতালে করোনা রোগীর এতোই চাপ ছিল যে চিকিৎসকরা তার দিকে নজর দিতে পারেননি। এরপর আমি অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি না করা পর্যন্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে থাকি।

shahnewaz03তবে ভারতের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়তে থাকে। মাত্র ৩০টি সিলিন্ডারে আর কুলিয় উঠতে পারছিলেন না শাহনেওয়াজ। অবশেষে নিজের দামি গাড়িটি (এসইউভি) বিক্রি করে দেন। সেই টাকা দিয়ে কিনে ফেলেন আরও ১৭০টি সিলিন্ডার। এখন তার কাছে রয়েছে ২০০টি সিলিন্ডার। আর আছে ২০ জনের একটি সদাসক্রিয় দল। এই সামান্য সামর্থ্য দিয়েই এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন শাহনেওয়াজ। সাহায্য সহযোগিতা করেছেন অসংখ্য মানুষকে।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর এখন পর্যন্ত ছয় শতাধিক মানুষকে সাহায্য করেছেন শাহনেওয়াজ। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, প্রতিদিন আমরা শত শত ফোন পাচ্ছি। কখনো কখনো সাহায্য করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফিরিয়ে দিতে হয়।

এরই মধ্যে এলাকায় 'অক্সিজেন ম্যান' হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছেন শাহনেওয়াজ। তিনি বলেন, মহানবীর (সা.) জীবন তাঁকে এই উদ্যোগ নিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তার আশা, ভারতে মুসলিমদের নিয়ে যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে সেটি তিনি মুছে দিতে পারবেন।

shahnewaz 01

শাহনেওয়াজের মতো হাজার হাজার ভারতীয় মুমূর্ষু করোনা রোগী এবং তাঁদের পরিবারকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসছেন। অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সহায়তা করছেন।

দুই সপ্তাহ ধরে ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে গেলে হেল্পলাইনে পরিণত হয়েছে। সেখানে করোনা আক্রান্ত পরিবারগুলো হাসপাতালের শয্যা, অক্সিজেন, প্লাজমা এবং অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভিরের খোঁজ করছেন। যে যেভাবে পারছেন যথাসাধ্য সাহায্য করছেন।

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁওয়ে থাকেন ৫৫ বছর বয়সী ঈশ্বর। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গত শনিবার তাঁর অক্সিজেন লেভেল ৬৫–এ নেমে আসে।

shahnawaz1

ঈশ্বরের ২২ বছর বয়সী কন্যা প্রিয়া জানান, ওই পরিস্থিতিতে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন কারণ হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে প্রিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহায়তা চান। মানসি হানসা নামে একজন স্বেচ্চাসেবক তাঁর সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন।

৩০ বছর বয়সী আইনজীবী হানসা ভারতের একটি অনলাইন গ্রুপে স্বেচ্ছাসেকের কাজ করেন। তিনি মুমূর্ষু করোনা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং হাসপাতালের শয্যার ব্যবস্থা করে দেন। এ নিয়ে হানসা আল জাজিরাকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে মানুষ জানতো না একটি অক্সিজনে কনসেন্ট্রেটর কী। আর আজকে মানুষ বাড়িতেই আইসিইউ বানিয়ে ফেলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত