Ajker Patrika

ভারতে উপরাষ্ট্রপতির আকস্মিক পদত্যাগের পেছনে কি বিজেপির হাত

অনলাইন ডেস্ক
ভারতের সদ্য সাবেক উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের সদ্য সাবেক উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর গত সোমবার হঠাৎ করেই স্বাস্থ্যগত পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু তাঁর এই ঘোষণার আগেই রাজনৈতিক অঙ্গনে ধারাবাহিক কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা তাঁর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশোবন্ত বর্মার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধারের ঘটনার পর তাঁর অপসারণ চেয়ে বিরোধী দল রাজ্যসভায় প্রস্তাব আনলে তা গ্রহণ করেন ধনকর। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার চেয়েছিল এই ইস্যুতে নিজেরাই নেতৃত্ব দিতে। সরকারের পক্ষ থেকে একটি পৃথক প্রস্তাবও তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে বিরোধীদের স্বাক্ষরও নেওয়া হয় এবং সেটি লোকসভায় তোলার পরিকল্পনা ছিল।

কিন্তু ধনকর রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিরোধীদের প্রস্তাব গ্রহণ করে ফেলেন। এতে সরকার একেবারেই বিস্মিত হয় এবং এরপরের কয়েক ঘণ্টায় একের পর এক সিদ্ধান্তে ঘটনা এমন মোড় নেয় যে, শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন উপরাষ্ট্রপতি।

এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটল, যার মাত্র ৬ মাস আগে ধনকরের বিরুদ্ধেই বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল। এখন তাঁর সেই পদক্ষেপে কয়েকটি বিরোধী দল সমর্থন জানালেও, সরকারপক্ষে ক্ষোভ তৈরি হয়। বিজেপি এমপিরা জানান, ধনকর আগেও অনেকবার ‘সীমা লঙ্ঘন’ করেছেন।

সূত্র জানায়, ধনকর যখন বিরোধীদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তখন তিনি সরকারকে কিছুই জানাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র বলেছেন, ‘সরকার যদি জানত, তাহলে শাসক দলের এমপিরাও প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতেন।’

ধনকর বিরোধীদের প্রস্তাব গ্রহণের পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা। এরপর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কার্যালয়ে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্যসভার সব বিজেপি এমপিকে ডাকা হবে। প্রতি ১০ জন করে এমপিকে আলাদা করে ডেকে একটি গোপনীয় প্রস্তাবে স্বাক্ষর করানো হয়। পরে এনডিএ জোটের অন্য এমপিদের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়।

সকলকে বলা হয়, চার দিন দিল্লিতেই অবস্থান করতে এবং এই বিষয় নিয়ে মুখ না খুলতে। এরপর, যখন ধনকরকে জানানো হয় যে, সরকারের পক্ষ থেকেও একটি মোশন প্রস্তুত এবং এমপিরা তাতে স্বাক্ষর করেছেন, তখন পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। পরে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা বিভিন্ন দলে ভাগ করে এমপিদের ডেকে জানান, ধনকর কীভাবে সরকারের জন্য বারবার অস্বস্তির কারণ হয়েছেন। এর আগে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর বা রাজ্যপাল থাকাকালেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন।

এই নাটকীয়তার মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে উপরাষ্ট্রপতির অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে ধনকরের পদত্যাগপত্র প্রকাশিত হয়। এখনো দুই বছর মেয়াদ বাকি থাকলেও পদত্যাগের সিদ্ধান্তে সবাই চমকে যান। প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুকে পাঠানো চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আমি নিজের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে এই পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’

ধনকর আরও লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁদের সহায়তা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি ভারতের ইতিহাসের এক রূপান্তরমূলক সময়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, এটি আমার জন্য সম্মানের।’

প্রেসিডেন্ট মুর্মু ধনকরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে তাঁর পদত্যাগের বিষয়ে লিখেন, ‘জগদীপ ধনকর জি নানা ভূমিকায় দেশের সেবা করেছেন, তাঁর সুস্বাস্থ্য কামনা করি।’

তবে কংগ্রেস বলছে, সরকার আরও মার্জিতভাবে বিষয়টি সামাল দিতে পারত এবং এই আকস্মিক পদত্যাগের বিষয়ে আরও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। রাজ্যসভার কংগ্রেস সদস্য বিবেক তঙ্কা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘এটা খুব অপ্রত্যাশিত। যেভাবে পদত্যাগটা হলো, তা কাম্য ছিল না। তিনি সুস্থ ছিলেন, হাসিখুশি মেজাজে ছিলেন। দুপুরে হঠাৎ কিছু একটা ঘটে, হয়তো কোনো অপমানবোধ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

কংগ্রেস নেতা কেসি ভেনুগোপাল বলেন, ‘সরকারকে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেন উপরাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলেন।’ এমনকি ধনকরের কট্টর সমালোচক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘আমি বেশি কিছু বলতে চাই না, তবে ধনকর সুস্থ ছিলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত