Ajker Patrika

তিন বছর আলোচনার পর ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তিতে একমত যুক্তরাজ্য-ভারত

অনলাইন ডেস্ক
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: পিটিআই
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: পিটিআই

দীর্ঘ তিন বছর আলোচনার পর যুক্তরাজ্য ও ভারত একটি বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে ব্রিটিশ হুইস্কি, গাড়ি ও অন্যান্য পণ্যের ভারতে রপ্তানি সহজ হবে এবং ভারতের তৈরি পোশাক ও জুতার ওপর যুক্তরাজ্যে কর কমবে। ব্রিটিশ সরকার একে ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ উল্লেখ করে জানিয়েছে, এই চুক্তিতে অভিবাসন নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও কোনো ছাড় বা নতুন নিয়ম নেই।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ‘এই চুক্তি অর্থনীতিকে চাঙা করবে এবং ব্রিটিশ জনগণ ও ব্যবসার জন্য সুফল বয়ে আনবে।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্য ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪২.৬ বিলিয়ন পাউন্ড। সরকার বলছে, নতুন চুক্তির মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে এই বাণিজ্য আরও ২৫.৫ বিলিয়ন পাউন্ড বাড়বে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একে ‘ঐতিহাসিক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও পারস্পরিক লাভজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের অর্থনীতিতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন ও প্রবৃদ্ধিতে গতি আনবে।

যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও শিল্প দপ্তরের তথ্যমতে, চুক্তিটি কার্যকর হতে আরও এক বছর সময় লাগতে পারে। তবে কার্যকর হলে ভারত থেকে আসা বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক হ্রাস পাবে, যার মধ্যে রয়েছে— পোশাক ও জুতা, হিমায়িত চিংড়ি মাছসহ খাদ্যপণ্য, গয়না ও রত্নপাথর।

অন্যদিকে, ভারতীয় বাজারে যেসব ব্রিটিশ পণ্যে শুল্ক কমবে, সেগুলো হলো— জিন ও হুইস্কি, অ্যারোস্পেস, ইলেকট্রিক ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, কসমেটিকস। এ ছাড়া ব্রিটিশ খাদ্যপণ্য যেমন— ভেড়ার মাংস, স্যামন মাছ, চকলেট ও বিস্কুট।

চুক্তির ফলে আগে ১৫০ শতাংশ শুল্ক থাকা হুইস্কির ওপর শুল্ক অর্ধেকে কমে ৭৫ শতাংশ হবে, এবং পরবর্তী বছরগুলোতে আরও কমানো হবে। এই চুক্তির আওতায় সেবা খাত ও সরকারি কেনাকাটায় ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির প্রতিযোগিতার সুযোগও বাড়বে।

যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্যসচিব জোনাথন রেনল্ডস বলেন, ‘এই চুক্তির সুফল ব্রিটিশ ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য ব্যাপক।’ তিনি গত সপ্তাহে লন্ডনে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে চুক্তির চূড়ান্ত আলোচনায় অংশ নেন।

ভারত সরকার বলছে, ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হওয়ার পর এটি দেশটির সবচেয়ে বড় ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি।

চুক্তির আওতায় ভারত ও যুক্তরাজ্যের কিছু কর্মী তিন বছরের জন্য জাতীয় বিমা (ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স) অব্যাহতির সুযোগ পাবেন। ভারতের সরকার একে ‘অভূতপূর্ব অর্জন’ বলে উল্লেখ করেছে।

ভারতের প্রতিষ্ঠান থেকে যুক্তরাজ্যে সাময়িকভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মী এবং একইভাবে যুক্তরাজ্যের কর্মীরা ভারতে কাজ করলে, তারা শুধু নিজ নিজ দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর (সোশ্যাল সিকিউরিটি কন্ট্রিবিউশন) দেবেন—দুই দেশে নয়।

এ ধরনের ‘ডাবল কন্ট্রিবিউশন কনভেনশন’ যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৭টি দেশের সঙ্গে রয়েছে।

তবে বিরোধীদলীয় নেতারা এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে সরকারের সমালোচনা করেছেন। কনজারভেটিভ পার্টির কেমি ব্যাডেনোক বলেন, লেবার সরকার ‘দ্বৈত করের’ দ্বৈতনীতি চালু করছে। তিনি গত মাসে বাজেটে ঘোষিত নিয়োগকর্তার জাতীয় বিমা হারে বৃদ্ধির দিকটি তুলে ধরেন।

শ্যাডো ট্রেড সেক্রেটারি অ্যান্ড্রু গ্রিফিথ বলেন, ‘লেবার যেখানে চুক্তি করে, সেখানেই যুক্তরাজ্য হারে।’

লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের উপনেতা ডেইজি কুপার বলেন, ‘ভারতীয় কর্মীরা যুক্তরাজ্যে আসলে কোম্পানিগুলো যেন কর না দেয়, তা শোনা উদ্বেগজনক।’ তিনি এই চুক্তির ওপর সংসদে ভোট চাওয়ার দাবি জানান।

ভারতকে কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়েছে এবং যুক্তরাজ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দেখছে।

যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য লবিস্ট সংস্থা সিবিআইয়ের প্রধান নির্বাহী রেইন নিউটন-স্মিথ এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এই চুক্তি প্রটেকশনিজমের যুগে আশার আলো।’

কমিউনিকেশনস প্রতিষ্ঠান এসইসি নিউগেট-এর এলি রেনিসন, যিনি আগে সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ছিলেন, তিনি বলেন, ভারতের বাজারের আকার, প্রবৃদ্ধির গতি ও প্রবেশে উচ্চ বাধা বিবেচনায় এই চুক্তি হতে পারে ‘গেম-চেঞ্জার’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত