Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই কি রাশিয়া এশিয়ায় সব হারাচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক
তবে কি স্রেফ ইউক্রেন ধরে রাখতে গিয়েই এশিয়ায় সব কৌশলগত মিত্র হারাচ্ছেন পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
তবে কি স্রেফ ইউক্রেন ধরে রাখতে গিয়েই এশিয়ায় সব কৌশলগত মিত্র হারাচ্ছেন পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের সাবেক সোভিয়েত মিত্র আর্মেনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে চিড় ধরছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মস্কো আর্মেনিয়াকে দেওয়া বেশ কিছু প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। রাশিয়া এই বিষয়টি স্বীকার করলেও, মস্কো ইয়েরেভানকে (আর্মেনিয়ার রাজধানী) এমন দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সতর্ক করেছে যাদের মস্কো শত্রু মনে করে।

প্রতিদ্বন্দ্বী আজারবাইজান ও তুরস্কের মাঝে অবস্থিত আর্মেনিয়া বিগত কয়েক দশক ধরে অস্ত্রের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। দেশটি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আজারবাইজানের সঙ্গে নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে সংঘাতে লিপ্ত। আর্মেনিয়ার পশ্চিম প্রতিবেশী তুরস্ক আজারবাইজানকে সমর্থন দেয়। আজারবাইজান যেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, সেখানে আর্মেনিয়ার সিংহভাগ মানুষ খ্রিষ্টান।

ইউক্রেনের সঙ্গে তিন বছরের যুদ্ধের কারণে রাশিয়া তার আঞ্চলিক মিত্রদের পাশে দাঁড়াতে পারেনি। প্রথমে রাশিয়া সিরিয়ায় মিত্র হারিয়েছে। দেশটিতে বাশার আল-আসাদের শাসন পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত বিদ্রোহীদের সৃষ্ট গৃহযুদ্ধে ভেঙে পড়েছে। গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করেছেন। সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পর্ক ছিল। পরে তিনি গোষ্ঠীটির সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করেন এবং বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিয়ে আসাদের পতন ঘটান। তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র সৌদি আরবও বাশার আল-আসাদের পতনে অংশ নেয়। আসাদ পরিবার পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করেছে। এই দেশটি মস্কোর জন্য একটি কৌশলগত ঘাঁটি ছিল।

সিরিয়ার পর রাশিয়া এখন আর্মেনিয়াতেও বাধা পাচ্ছে। দেশটি এখন আর্মেনিয়ার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করতে পারছে না। এমনকি আর্মেনিয়া যেসব অস্ত্রের জন্য অর্থ পরিশোধ করেছে, সেগুলোও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এর ফলে ইয়েরেভান অন্যান্য বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্মেনিয়া বেশির ভাগ অস্ত্র কেনার জন্য ফ্রান্স ও ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। ভারতের মতো দেশের কাছ থেকে সরবরাহ রাশিয়ার অনুমোদন পেলেও, আর্মেনিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক মস্কোর জন্য একটি অশনিসংকেত। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গত বুধবার আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরারাত মির্জোয়ানের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি মস্কোর পক্ষ থেকে চুক্তি বিলম্বের বিষয়টি স্বীকার করেন। লাভরভ বলেন, কিছু আদেশ বাতিলও করা হয়েছে। তিনি এই পরিস্থিতির জন্য সম্মিলিত পশ্চিমাদের সঙ্গে ‘অস্তিত্বের লড়াইকে’ দায়ী করেন।

লাভরভ বলেন, ‘আমরা বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে অতীতের মতো আমাদের পুরো ইউরোপের সঙ্গে লড়াই করতে বাধ্য হতে হচ্ছে।’ তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোকে ‘নাৎসি স্লোগান’ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য অভিযুক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আর্মেনীয় বন্ধুরা বোঝেন যে, এমন পরিস্থিতিতে আমরা সময় মতো আমাদের সমস্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে পারি না।’

ফ্রান্সের সঙ্গে আর্মেনিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নিয়ে সতর্ক করে লাভরভ বলেন, মস্কো ইয়েরেভানের অন্য দেশ থেকে অস্ত্র কেনার বিরোধিতা না করলেও, পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর তাদের নির্ভরতা নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগ বাড়ছে আর্মেনিয়ার দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত দিকনির্দেশনা নিয়ে।

লাভরভ বলেন, ‘যখন কোনো মিত্র দেশ শত্রু শিবিরের নেতৃত্ব দেওয়া ফ্রান্সের মতো একটি দেশের দিকে ঝুঁকে তখন তা প্রশ্ন তৈরি করে।’ এ সময় লাভরভ আরও বলেন, ফ্রান্সের ‘প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীরা রাশিয়ার প্রতি খোলাখুলি ঘৃণা প্রকাশ করেন’ এবং তাই যখন কোনো মিত্র দেশ তাদের প্রতি ঝুঁকে যায়, ‘তখন তা প্রশ্ন তৈরি করে।’

লাভরভের এই মন্তব্য কেবল মস্কোর অস্ত্র সরবরাহের অক্ষমতার কারণেই নয়, বরং ইয়েরেভানের সঙ্গে তার ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক দ্রুত অবনতি হওয়ার কারণেও তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও আর্মেনিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার মিত্র রয়ে গেছে, তবে সম্মিলিত পশ্চিমের সঙ্গে ইয়েরেভানের দ্রুত বর্ধনশীল সম্পর্ক মস্কোর জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আর্মেনিয়া রাশিয়ার স্বার্থের বিরুদ্ধেও কাজ করেছে। দেশটি কার্যকরভাবে যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থায় (সিএসটিও) অংশগ্রহণ বন্ধ করে দেয়। এই জোট রাশিয়ার নেতৃত্বে সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোর একটি নিরাপত্তা চুক্তি। এ ছাড়া, কারাবাখ অঞ্চলে রাশিয়ার সমর্থনের অভাবের কারণেও আর্মেনিয়া ক্ষুব্ধ। ইয়েরেভান মস্কোর শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, আজারবাইজানের আকস্মিক সামরিক অভিযান এবং ২০২৩ সালে অঞ্চলটি দখল করার পর কারাবাখ থেকে পালিয়ে আসা ১ লাখেরও বেশি জাতিগত আর্মেনীয়দের রক্ষা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনা যাঁকে ঢাকায় ‘হত্যা করলেন’, তিনি ময়মনসিংহে জীবিত!

চরফ্যাশন থেকে গেটিসবার্গ কলেজ

জীবিত ভাইকে জুলাই আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলায় সাক্ষীও দুই ভাই, নেপথ্যে যা জানা গেল

নগদে স্ত্রীর চাকরি, স্বার্থের সংঘাতে জড়ালেন নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মুর্শেদ

যুক্তরাষ্ট্রে সি চিন পিংয়ের মেয়েকে বহিষ্কারের দাবি, হঠাৎ কেন এই বিতর্ক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত