Ajker Patrika

ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে চীনা শহর, কয়েক লাখ মানুষের প্রাণহানি

আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৪, ১১: ৫৫
ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে চীনা শহর, কয়েক লাখ মানুষের প্রাণহানি

তারিখটা ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই। তখনো ভোর হয়নি। ঘড়ির কাঁটায় ৩টা ৪২ মিনিট। চীনের খনি ও শিল্প শহর তাংশানের বেশির ভাগ বাসিন্দা তখন গভীর ঘুমে অচেতন। এ সময়ই ভয়াবহ এক ভূমিকম্প আঘাত হানল শহরটির ওপর। ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলো বাঁচার চেষ্টা করার পর্যন্ত সুযোগ পেল না। সরকারি হিসাবেই তাংশান ও এর আশপাশের এলাকার ২ লাখ ৪২ হাজার মানুষ মারা পড়ে এই ভূমিকম্পে।

তাংশানের এই ভূমিকম্পকে মনে করা হয় গত কয়েক শ বছরের মধ্যে হওয়া সবচেয়ে ভয়ানক ভূমিকম্পগুলোর একটি হিসেবে। এটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬।

চীনের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পাবেন, ভূমিকম্প এখানে নিয়মিতই আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হয়েছে। চীনের সংস্কৃতি, বিজ্ঞানেও এর প্রভাব চোখে পড়ে। চীনারাই প্রথম কার্যকর ভূকম্পমাপক যন্ত্র বা সিসমোমিটার উদ্ভাবন করে।

অবশ্য ভূমিকম্পের আগের দু-এক দিন অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটেছে বলে ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে জানান বেঁচে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দারা। কুয়ার পানির স্তর ওঠানামা করছিল। ইঁদুরদের দিনের বেলা দলবেঁধে আতঙ্কিতভাবে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। মুরগিরা খাবার খাচ্ছিল না। তবে তিনটা ৪২ মিনিটে যখন ভূমিকম্পটি আঘাত হানে, তখন বেশির ভাগ মানুষ শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিল। ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পে তাংশানের ৯০ শতাংশ দালান-কোঠা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়।

বেইজিং থেকে প্রায় ৬৮ মাইল পূর্বে অবস্থান তাংশান শহরটির। সরকারিভাবে ২ লাখ ৪২ হাজার মানুষ মারা গেছে বলা হলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সূত্রের দেওয়া তথ্য বলছে সংখ্যাটা সাড়ে ৬ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। ৭ লাখের বেশি মানুষ আহত হয় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে। 

তাংশান শহরের দক্ষিণ অংশে ভূমিকম্পের প্রধান ধাক্কাটি লাগে। কম্পন অনুভূত হয়েছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু থেকে ৬৮০ মাইল (১১০০ কিলোমিটার) দূরে পর্যন্ত। একই দিনে শহরটির উত্তর-পূর্বে প্রায় ৪৩ মাইল (৭০ কিলোমিটার) দূরে লুয়ানজিয়ান শহরে একটি বড় আফটার শক হয়। এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। এতে নতুন করে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়াদের উদ্ধারের প্রচেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হয়।

এখন তাংশান ফল্ট বা চ্যুতি নামে পরিচিত আগে অজানা একটি ফল্ট থেকে ভূমিকম্পটির সৃষ্টি হয়। ইয়ন শান-ইয়ান শান পার্বত্য বেল্টের সঙ্গে ক্যাংডং ফল্ট সিস্টেমের সংযোগস্থলের কাছে এর অবস্থান।

ভূমিকম্পটি হয় গ্রীষ্মের মাঝামাঝিতে। বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘরের ভেতর থেকে বেঁচে যাওয়া অনেক মানুষকে বুকে ভর দিয়ে ধূলি-ধূসরিত, রক্তরঞ্জিত ও নগ্ন অবস্থায় বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ভূমিকম্পে তাংশানের বিভিন্ন কারখানার বিস্ফোরক প্রজ্বলিত হয়ে অগ্নিকাণ্ড হয়। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শহর ও আশপাশের রেললাইন ও রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যায়। 

তিয়ানজিংয়ে স্থাপিত তাংশান ভূমিকম্পের স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি: উইকিপিডিয়াআকস্মিক এত বড় একটি বিপর্যয় সামাল দেওয়া মোটেই সহজ কাজ ছিল না। ভূমিকম্পের পরদিন থেকে চীনা সরকার হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ ফেলা শুরু হলো শহরটিতে। ১ লাখ সেনার পাশাপাশি ৩০ হাজার চিকিৎসা কর্মী এবং ৩০ হাজার নির্মাণশ্রমিককেও পাঠানো হলো বিধ্বস্ত এলাকাটিতে। এই ভূমিকম্পে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে।

তবে শহরটিকে পুনরায় নির্মাণ করা হয়। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে গজিয়ে ওঠা নতুন শহরে বর্তমানে ২০ লাখের মতো মানুষের বাস।

সূত্র: হিস্ট্রি ডট কম, ব্রিটানিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত