Ajker Patrika

২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তাইওয়ান

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ২০
২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তাইওয়ান

তাইওয়ানের বিগত ২৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে আজ বুধবার। দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিতি এই দ্বীপদেশ ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। ভূমিকম্পের পরপর সুনামি সতর্কতা জারি করা হলেও পরে তা নামিয়ে নেওয়া হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ওয়েদার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, তাইওয়ানের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলের কাছের হুয়ালিয়েন অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র সাড়ে ১৫ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে জাপান ও ফিলিপাইন থেকেও। 

স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যমগুলো ভূমিকম্পের এপিসেন্টার বা উৎপত্তিস্থলে নিকটবর্তী অঞ্চল হুয়ালিয়েনের জনবহুল পূর্ব কাউন্টিতে বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ফুটেজ দেখিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ধসে পড়া ভবনের নিচে কিছু লোক আটকা পড়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যু বা আহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। 
 
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ওয়াকিনাওয়ার দক্ষিণ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ছোট সুনামি তরঙ্গ আছড়ে পড়েছে। অবশ্য দেশটির দাবি, রিখটার স্কেলে তাইওয়ানে সংঘটিত ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৭। অন্যদিকে, ফিলিপাইনের সিসমোলজি এজেন্সি বেশ কয়েকটি প্রদেশের উপকূলীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি সতর্কতা জারি করেছে। 

তাইপেইয়ের সিসমোলজি সেন্টারের পরিচালক উ চিয়েন-ফু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ বুধবার সকালে তাইওয়ানের পূর্ব দিকে যে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে, তা ছিল ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।’ এ সময় তিনি দ্বীপদেশটিতে সংঘটিত ১৯৯৯ সালের একটি ভূমিকম্পের কথা উল্লেখ করেন। 

উ চিয়েন-ফু আরও বলেন, ‘ভূমিকম্পটি ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি ও বেশ অগভীরে উৎপন্ন হয়েছে। এটি সমগ্র তাইওয়ান ও উপকূলীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোতেও অনুভূত হয়েছে...১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পের পর এটি বিগত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।’ উল্লেখ্য, সে বছর ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ২ হাজার ৪০০ জন মারা গিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলা উপকূলে জব্দ ট্যাংকারের তেল ‘রেখে দেবেন’ ট্রাম্প, কারাকাস বলছে ‘জলদস্যুগিরি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩২
ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে একটি বিদেশি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে একটি বিদেশি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলা উপকূল থেকে একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে মার্কিন বাহিনী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই তথ্য জানিয়েছেন। এটি নিকোলাস মাদুরোর সরকারের ওপর ওয়াশিংটনের চাপ আরও জোরদার করার স্পষ্ট ইঙ্গিত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এইমাত্র ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি ট্যাংকার জব্দ করেছি। একটি বিশাল ট্যাংকার। খুব বড়। সত্যি বলতে গেলে যা এ যাবৎকালে সবচেয়ে বড় জব্দ।’ ট্যাংকার জব্দ করার ভিডিও প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জাহাজটিকে ‘ভেনেজুয়েলা ও ইরান থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাযুক্ত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত একটি অপরিশোধিত তেলের ট্যাংকার’ বলে আখ্যা দেন।

নিকোলাস মাদুরো সরকার দ্রুত এই পদক্ষেপের নিন্দা করে একে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুগিরি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এর আগে, প্রেসিডেন্ট মাদুরো ঘোষণা করেছিলেন, ভেনেজুয়েলা কখনোই ‘তেল উপনিবেশে’ পরিণত হবে না। ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে আমেরিকায় মাদক পাচারের অভিযোগ এনেছে এবং বিগত মাসগুলোতে প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে একঘরে করার প্রচেষ্টা আরও তীব্র করেছে। অপরদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম প্রমাণিত তেল মজুতের অধিকারী ভেনেজুয়েলা ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে তাদের সম্পদ চুরি করার চেষ্টার পাল্টা অভিযোগ এনেছে।

এই জব্দের খবরে স্বল্পমেয়াদি সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেওয়ায় বুধবার ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম সামান্য বেড়ে যায়। বিশ্লেষকদের সাবধানবাণী, এই পদক্ষেপ জাহাজ পরিচালনাকারীদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে এবং ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানিতে আরও বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন–এফবিআই, প্রতিরক্ষা দপ্তর, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর এবং ইউএস কোস্ট গার্ড যৌথভাবে ট্যাংকারটি জব্দ করেছে। দেশের শীর্ষ সাবেক সরকারি কৌঁসুলি এক্সে প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘বহু বছর ধরে এই তেলের ট্যাংকারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছিল, কারণ এটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থনকারী একটি অবৈধ তেল শিপিং নেটওয়ার্কে জড়িত ছিল।’

বন্ডির শেয়ার করা ফুটেজে দেখা যায়, একটি সামরিক হেলিকপ্টার বিশাল জাহাজের ওপর চক্কর কাটছে এবং সেনারা দড়ি ব্যবহার করে জাহাজের ডেকে নামছে। ক্লিপটিতে ইউনিফর্ম পরা পুরুষদের সশস্ত্র অবস্থায় জাহাজে ঘোরাফেরা করতেও দেখা যায়। বিবিসির মার্কিন সহযোগী সিবিএস-কে এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই অভিযানে ব্যবহৃত হেলিকপ্টারগুলো ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, যা বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী এবং গত মাসে ক্যারিবীয় অঞ্চলে পাঠানো হয়েছিল।

এই অপারেশনে দুটি হেলিকপ্টার, ১০ কোস্ট গার্ড সদস্য ও ১০ জন মেরিনস, তার সঙ্গে বিশেষ বাহিনী যুক্ত ছিল। সিবিএস-কে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই অভিযান সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং ট্রাম্প প্রশাসন এমন আরও পদক্ষেপের কথা ভাবছে।

সাংবাদিকেরা ট্যাংকারের তেলের কী হবে—জিজ্ঞেস করলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা তা রাখব, মনে হয়... আমি ধরে নিচ্ছি আমরা তেলটা রেখে দেব।’

মেরিটাইম রিস্ক অর্গানাইজেশন সংস্থা ভ্যানগার্ড টেক জাহাজটিকে স্কিপার নামে শনাক্ত করেছে এবং তাদের বিশ্বাস জাহাজটি দীর্ঘদিন ধরে নিজের অবস্থান ‘স্পুফিং’ বা মিথ্যা অবস্থান প্রচার করে আসছিল। সিবিএস-এর খবর অনুযায়ী, হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর জন্য রাজস্ব তৈরি করা কথিত তেল পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে মার্কিন ট্রেজারি দপ্তর ২০২২ সালে স্কিপারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধনীদের মার্কিন নাগরিকত্ব দেবে ‘ট্রাম্প গোল্ড কার্ড’, মূল্য ১০ লাখ ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কমপক্ষে ১০ লাখ ডলারের বিনিময়ে এই ভিসা পাবেন বিদেশি ধনীরা। ছবি: ট্রুথ সোশ্যাল
কমপক্ষে ১০ লাখ ডলারের বিনিময়ে এই ভিসা পাবেন বিদেশি ধনীরা। ছবি: ট্রুথ সোশ্যাল

অবশেষে ধনী বিদেশিদের জন্য ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা প্রোগ্রাম চালু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কমপক্ষে ১০ লাখ ডলারের বিনিময়ে এই দ্রুতগতির ভিসা পাবেন বিদেশিরা।

গতকাল বুধবার ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, এই কার্ডের মাধ্যমে ‘যোগ্য ও যাচাইকৃত’ মানুষের জন্য নাগরিকত্বের সরাসরি পথ তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘খুবই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত! আমাদের মহান আমেরিকান কোম্পানিগুলো অবশেষে তাদের অমূল্য প্রতিভা ধরে রাখতে পারবে।’

চলতি বছরের শুরুতে ‘ট্রাম্প গোল্ড কার্ড’-এর ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মসূচির সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই ভিসা তাদের দেওয়া হবে যারা প্রমাণ করতে পারবেন যে তারা দেশটির জন্য ‘উল্লেখযোগ্য উপকার’ বয়ে আনবেন।

একদিকে এইচ-১বি ভিসার ওপর আরও কঠোর নীতিমালা আরোপ করছে ট্রাম্প প্রশাসন, অন্যদিকে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এরইমধ্যে এই গোল্ড ভিসার ঘোষণা এলো।

প্রোগ্রামটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গোল্ড কার্ডের মাধ্যমে ‘রেকর্ড সময়’ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাবে। তবে এর জন্য দিতে হবে ১০ লাখ ডলার দিতে হবে, যা ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যথেষ্ট উপকারী এর প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।

ওয়েবসাইট আরও জানায়, এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কর্মী স্পনসর করলে তাদের ২০ লাখ ডলার দিতে হবে সঙ্গে অতিরিক্ত ফিও।

শিগগিরই ৫০ লাখ ডলারের বিনিময়ে ‘প্লাটিনাম’ সংস্করণও আসছে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যা বিশেষ কর ছাড়ের সুবিধা দেবে।

সাইটে আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীর পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সরকারকে বাড়তি ফিও দিতে হতে পারে। আবেদন পর্যালোচনার আগে সবাইকে ১৫ হাজার ডলারের অফেরতযোগ্য প্রসেসিং ফি দিতে হবে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণার পর থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছে গোল্ড কার্ড কর্মসূচিটি। কিছু ডেমোক্রেটের অভিযোগ, এটি ধনী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেবে, যা অন্যদের প্রতি অন্যায্য।

তখন এই ভিসাকে গ্রিন কার্ডের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, গোল্ড কার্ড বিশেষভাবে ‘উচ্চ-স্তরের’ পেশাজীবীদের লক্ষ্য করে তৈরি। আমরা বিচক্ষণ, উৎপাদনশীল মানুষ চাই।

ট্রাম্প বলেন, ‘যারা ৫০ লাখ ডলার দিতে পারে, তারা চাকরি সৃষ্টি করবে। এটি দারুণ বিক্রি হবে। এটি একপ্রকার সস্তা সুযোগ।’

ট্রাম্প প্রশাসন এখন অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যাপক সম্পদ বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ১৯টি দেশের নাগরিকদের অভিবাসন আবেদন গ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে মার্কিন সরকার। এমনকি আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন নিষ্পত্তিও স্থগিত করেছে।

পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকালে অনুমোদিত হাজার হাজার আবেদন পুনর্বিবেচনা করার ঘোষণা দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মার্কিন সামরিক বাহিনীর ব্যয়ের জন্য রেকর্ড ৯০১ বিলিয়ন ডলারের বাজেট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১৫
মার্কিন সামরিক বাহিনীর ব্যয়ের জন্য ৯০১ বিলিয়ন ডলারের বাজেট করেছে কংগ্রেস। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন সামরিক বাহিনীর ব্যয়ের জন্য ৯০১ বিলিয়ন ডলারের বাজেট করেছে কংগ্রেস। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এক বিস্তৃত প্রতিরক্ষানীতি বিল পাস করেছে। এই বিলে বার্ষিক সামরিক ব্যয়ের জন্য রেকর্ড ৯০১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ) নামের এই বিলের পক্ষে ৩১২ জন ও বিপক্ষে ১১২ জন আইনপ্রণেতা ভোট দেন। বিলটি এখন বিবেচনার জন্য উচ্চকক্ষ সিনেটে পাঠানো হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে সেটিও পাস হয়ে যাবে।

২০২৬ অর্থবছরের জন্য এই ৯০১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ব্যয়। চলতি বছরের মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যা অনুরোধ করেছিলেন, তারচেয়ে ৮ বিলিয়ন ডলার বেশি। গত রোববার উন্মোচিত ৩ হাজার ৮৬ পাতার সুবিশাল এই বিলে এনডিএএর গতানুগতিক বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত আছে। যেমন চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সামরিকভাবে প্রতিযোগিতা করার জন্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত ব্যবস্থা। এতে মার্কিন সেনাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি এবং সামরিক ঘাঁটির আবাসনের উন্নতি।

আইনপ্রণেতারা আরও কয়েকটি বিধান জোর করে বিলটিতে যুক্ত করেছেন, যা রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে ইউরোপের সুরক্ষায় ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ় করবে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়াকে প্রতিহত করতে ইউক্রেনকে আগামী দুই বছর ধরে প্রতিবছর ৪০০ মিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেওয়া।

অন্য একটি ব্যবস্থার ফলে পেন্টাগনকে ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ না করে ইউরোপে কমপক্ষে ৭৬ হাজার সেনা ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন রাখতে হবে। তবে এ বছরের বিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অপছন্দের কয়েকটি কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত উদ্যোগগুলোতে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের তহবিল কেটে নেওয়া হয়েছে।

আইনপ্রণেতারা ছুটি কাটাতে যাওয়ার আগেই বিলটি সিনেটে পাস করানোর লক্ষ্য নিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করবেন। এনডিএএ হলো এমন কয়েকটি প্রধান আইনের অন্যতম, যা সাধারণত দুই দলের ব্যাপক সমর্থন পায় এবং ১৯৬১ সালে এটি প্রণয়নের পর থেকে প্রতিবছরই কংগ্রেসে পাস হয়ে আসছে।

তবে এই বছর বিলটি পাসের প্রক্রিয়া স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কঠিন ছিল। কারণ, রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছিল। ভোটের আগে উভয় দলের সদস্যরাই তাঁদের সতীর্থ আইনপ্রণেতাদের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা আইনটিকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধ জানান, যদিও তাঁদের বিলের কিছু কিছু বিষয়ে আপত্তি ছিল।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা মাইক হানা জানিয়েছেন, ‘কিছু উল্লেখযোগ্য ভিন্নমত’ থাকা সত্ত্বেও বিলটি ‘খুব সহজেই পাস হয়ে গিয়েছে’। এনিডিএএর মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো—ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কথিত মাদক পাচারকারী জাহাজে মার্কিন সামরিক বাহিনীর চালানো প্রাণঘাতী হামলাগুলো নিয়ে আরও বেশি স্বচ্ছতার দাবি।

হানা বলেন, বিলটির ‘খুব লক্ষণীয়’ একটি অংশ হলো, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের ভ্রমণ তহবিলের ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি যদি ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলার বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশ না করেন, তাহলে এই অর্থ কেটে নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে আইনপ্রণেতাদের কাছে হামলার সম্পাদনাবিহীন ভিডিও এবং আক্রমণ চালানোর আদেশগুলো পর্যালোচনা করার সুযোগ দেওয়া।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে প্রথম হামলা ঘোষণা করার পর থেকে ২২টি পরিচিত হামলায় কমপক্ষে ৮৬ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট এই হামলাগুলোকে মাদকবিরোধী প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা হিসেবে তুলে ধরলেও আন্তর্জাতিক ও মার্কিন আইন উভয় অনুসারেই এগুলো অবৈধ বলে ব্যাপকভাবে বিবেচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোদির সঙ্গে রাহুলের ৮৮ মিনিটের বৈঠক, কী আলোচনা হলো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দীর্ঘ ৮৮ মিনিট বৈঠক করেছেন রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দীর্ঘ ৮৮ মিনিট বৈঠক করেছেন রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এক বিরল বৈঠক করেছেন গতকাল বুধবার। ৮৮ মিনিটের এই বৈঠক ভারতীয় পার্লামেন্টের অলিন্দে জল্পনার পারদ চড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে শীতকালীন অধিবেশন চলছে। প্রধান তথ্য কমিশনারের পদের প্রার্থী নিয়ে দুই নেতার বসার কথা জানা ছিল। তবে এত দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হবে, এমনটা কেউ ভাবেননি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, নিয়ম মোতাবেক—তথ্য কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও ভিজিল্যান্স বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী মনোনীত একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা।

এবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত মন্ত্রী ছিলেন অমিত শাহ। সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী দুপুর ১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান এবং বৈঠক শুরু হয় ১টা ৭ মিনিটে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা যত গড়িয়েছে, ততই ভ্রু কুঁচকেছে এবং এমপিরা বৈঠকের অন্যান্য সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।

৮৮ মিনিট পর রাহুল গান্ধী বেরিয়ে এলে জানা যায়, আলোচনা শুধু প্রধান তথ্য কমিশনারের নিয়োগ নিয়ে নয়, বরং আটজন তথ্য কমিশনার ও একজন ভিজিল্যান্স কমিশনারের নিয়োগ নিয়েও হয়েছিল। সূত্রের খবর, রাহুল সব কটি নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন এবং লিখিতভাবে তাঁর অসন্তোষ পেশ করেছেন। তাঁর এই ভিন্নমত প্রকাশের মূল কারণ হলো—প্রতিনিধিত্ব নিয়ে উদ্বেগ এবং বাছাই-মানদণ্ড নিয়ে ভিন্নমত।

এ ধরনের বৈঠকে বিরোধী দলনেতার পক্ষ থেকে আপত্তি আসা স্বাভাবিক বলেই মনে করা হয়। সূত্রগুলো জানিয়েছে, এর আগে যখন মল্লিকার্জুন খাড়গে বা রাহুল গান্ধী বিরোধী প্রতিনিধি হিসেবে এই বৈঠকগুলোতে উপস্থিত থেকেছেন, তখন তাঁরা আপত্তি জানিয়েছিলেন।

বিরোধী দলনেতা যুক্তি দিয়ে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে, ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ যে সব সম্প্রদায়ের, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি তদারকির দায়িত্বে থাকা এই পদগুলোর প্রস্তাবিত তালিকায় তারা ‘কার্যত অনুপস্থিত।’ কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী বৈঠকটিকে কাজে লাগিয়েছেন সেই শর্টলিস্টের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানাতে, যেখানে দলিত, আদিবাসী, ওবিসি/ইবিসি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে আসা প্রার্থীদের ‘প্রায়-মোট অনুপস্থিতি’ রয়েছে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, রাহুল গান্ধী আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদগুলোর জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের জাতিগত তথ্য চেয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, আবেদনকারী গোষ্ঠীর ৭ শতাংশেরও কম মানুষ ‘বহুজন সম্প্রদায়’ থেকে এসেছেন। জানা গেছে, তিনি কমিটিকে বলেছেন, অংশগ্রহণের এই মাত্রা নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গভীর প্রশ্ন তুলছে। কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে, জবাবদিহির কাঠামো গঠনকারী তদারকি সংস্থাগুলোতে প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর প্রবেশকে সীমাবদ্ধ করা কাঠামোগত বাধাগুলো নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।

যদিও সরকার আবেদনকারী বা মনোনীত প্রার্থীদের জাতিগত বিভাজন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নির্বাচন প্রক্রিয়াটি একটি ‘উন্নত পর্যায়ে’ রয়েছে।

এদিকে, পার্লামেন্টের অলিন্দে ওই ৮৮ মিনিটের বৈঠকে কী হলো, তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন বা সিআইসি-তে প্রধান তথ্য কমিশনারসহ মোট ৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এই কর্মকর্তারা আরটিআই আবেদনকারীদের দায়ের করা অভিযোগ ও আপিলগুলোর নিষ্পত্তি করেন এবং তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন।

গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত হীরালাল সামারিয়া ভারতের প্রধান তথ্য কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর অবসরের পর থেকে এই পদটি শূন্য। বর্তমানে কেবল দুজন তথ্য কমিশনার—আনন্দী রামালিঙ্গম ও বিনোদ কুমার তিওয়ারি—কাজ সামলাচ্ছেন। সিআইসি-এর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তাদের কাছে অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা ৩০ হাজার ৮৩৮।

চূড়ান্ত নিয়োগ শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তথ্য অধিকার আইনের ১২ (৩) ধারা অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী হলেন নির্বাচন কমিটির সভাপতি। প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারদের বাছাই এবং নাম সুপারিশ করার জন্য এই কমিটিতে আরও থাকেন বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী মনোনীত একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত