Ajker Patrika

মিয়ানমারে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৯: ২২
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ক্ষতিগ্রস্ত প্যাগোডা। ছবি: এপি
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ক্ষতিগ্রস্ত প্যাগোডা। ছবি: এপি

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইং শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার (১০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার গভীরে। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের প্রভাব থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মিয়ানমারের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়াতে পারে। এদিকে থাইল্যান্ডে এখনো ৭০ জনের বেশি নির্মাণশ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

নেপিডোর একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: এএফপি
নেপিডোর একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: এএফপি

মিয়ানমারের সামরিক প্রধান মিন অং হ্লাইং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ছবি: এএফপি
মিয়ানমারের সামরিক প্রধান মিন অং হ্লাইং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ছবি: এএফপি

অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন আহতরা। ছবি: এএফপি
অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন আহতরা। ছবি: এএফপি

আহত এক তরুণী। ছবি: এএফপি
আহত এক তরুণী। ছবি: এএফপি

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক রাস্তা। ছবি: এএফপি
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক রাস্তা। ছবি: এএফপি

নেপিডোর প্যাগোডাগুলোর পাশাপাশি একটি বৌদ্ধবিহারের বিশাল অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: এএফপি
নেপিডোর প্যাগোডাগুলোর পাশাপাশি একটি বৌদ্ধবিহারের বিশাল অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: এএফপি

থাইল্যান্ডের রাজধানীতে ব্যাংককের একটি ভবন ধসের পর ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স
থাইল্যান্ডের রাজধানীতে ব্যাংককের একটি ভবন ধসের পর ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে মানবিক সংকট আরও গভীর

ভূমিকম্পের আগেই মিয়ানমারের মানবিক পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত দেশটিতে এখন ভূমিকম্প পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত সাগাইং অঞ্চল বর্তমানে গৃহযুদ্ধের একটি প্রধান রণক্ষেত্র। এই অঞ্চলি প্রজাতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের শক্ত ঘাঁটি। যারা ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

গৃহযুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। ক্ষুধা ও খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভূমিকম্পের আগেই জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল, এই বছর দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় দুই কোটি মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হবে। ভূমিকম্প পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

বিবিসির একটি সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাগাইংসহ সমগ্র মিয়ানমারে বিভিন্ন গোষ্ঠীর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে; যা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমকে অত্যন্ত জটিল করে তুলবে। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সেনাবাহিনী বর্তমানে দেশের মাত্র এক-চতুর্থাংশের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। স্বাধীন মিডিয়া কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য কমে যাওয়ায় মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এখন হাজারো মানুষ উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় সংঘর্ষ এবং যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘ এবং অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারে জরুরি সাহায্য পাঠানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু জান্তা সরকারের নিষেধাজ্ঞা এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চলমান সংঘাতের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত পর্যাপ্ত সাহায্য না পৌঁছায়, তাহলে মিয়ানমারে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত