অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন। নেতানিয়াহুর দাবি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘আমাদের চোখের সামনে, একের পর এক দেশ ও অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছেন।’ তাই তাঁকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া উচিত।
এদিকে ট্রাম্প নিজেও দীর্ঘদিন ধরে এই পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে আসছেন। তাঁর দাবি, ইসরায়েল-ইরান থেকে শুরু করে রুয়ান্ডা-কঙ্গো, ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে শান্তি স্থাপনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য!
কিন্তু গাজায় সংঘাত যখন তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই শান্তি পুরস্কার কি ট্রাম্পের ভাগ্যে জুটবে? তিনি কি এই পুরস্কারের যোগ্য? এ বিষয়ে পাঁচজন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়েছে দা কনভারসেশন। চলুন, জানি—ট্রাম্পের সম্পর্কে কী বলছেন এই বিশেষজ্ঞরা।
অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল, আরবান অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ স্কুলের অ্যাডজাঙ্কট সিনিয়র ফেলো এমা সর্টিস। ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য নেতানিয়াহুর মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টির কড়া সমালোচনা করেছেন এমা। তিনি এটিকে ‘কুকুরের প্রদর্শনীতে হায়েনাকে নামানোর’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।
সর্টিস বলেন, ‘ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য নন।’ তিনি মনে করেন, এ বিষয়ে আলোচনা করতে বাধ্য করাটাই প্রমাণ করে, সবকিছুকে নিজের মতো করে বদলে নেওয়ার ক্ষমতা ট্রাম্পের আছে।
সর্টিস বলেন, ‘গাজায় কোনো শান্তি নেই। ইরানে শান্তি নেই। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নেই। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যও ট্রাম্পের আগ্রহ বা মনোযোগ নেই। তাঁর প্রশাসন কূটনীতির জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বা বিনিয়োগ করতে রাজি নয়। উপরন্তু, তিনি যুদ্ধবিরোধীও নন।’
এমা সর্টিস প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এটা কেমন শান্তি? এর জন্য তাঁকে নোবেল দিতে হবে?’
সর্টিস মনে করেন, ট্রাম্পের ‘ট্রফি’ (নোবেল) পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রশ্রয় দিলে হয়তো তিনি অল্প সময়ের জন্য খুশি হতে পারেন। কিন্তু এর ফলে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার তার সব বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। একই সঙ্গে এটি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ট্রাম্পের অবজ্ঞাকেই সমর্থন করবে।
আলি মামৌরি, ডেকিন ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের রিসার্চ ফেলো। মামৌরি বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির (নেতানিয়াহু) দ্বারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা ‘একটি নজিরবিহীন বিদ্রূপ’। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না।
মামৌরির মতে, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস মধ্যস্থতায় ট্রাম্পের ভূমিকা একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল। এর ফলে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর মতো কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। কিন্তু মামৌরি মনে করেন, এই অর্জন একটি উল্লেখযোগ্য মূল্যে এসেছে। এই চুক্তিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনি ইস্যুকে এক পাশে সরিয়ে রেখেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মূল কারণ হিসেবে স্বীকৃত এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের বিষয়ে কয়েক দশকের আন্তর্জাতিক ঐকমত্যকে উপেক্ষা করেছে।
মামৌরি আরও বলেন, ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলের এমন নীতিগুলোকে খোলাখুলি সমর্থন করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে ব্যাপকভাবে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্ত করার প্রস্তাব। গাজায় ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয়ের মুখে তাঁর নীরবতাও ছিল সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এমন কর্মকাণ্ডের পর ট্রাম্পকে নোবেলের জন্য মনোনীত করা আসলেই বিদ্রূপ।
ইয়ান পারমিটার, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের গবেষক। পারমিটার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য নেতানিয়াহুর মনোনয়নকে ‘তোষামোদ’ হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্প নিজেও এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের দাবি করছেন, যা তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামা প্রথম মেয়াদেই পেয়েছিলেন।
কিন্তু ওবামা ও ট্রাম্পের মধ্যে কে কতটুকু সফল
২০০৯ সালে ওবামা পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ‘নতুন আবহ’ তৈরির জন্য, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন। পারমিটার প্রশ্ন তোলেন, ওবামার সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো ফলপ্রসূ না হওয়ায় ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে এসে কী ধরনের দাবি করতে পারেন?
ট্রাম্প এ বছর দুটি সংঘাত সমাধানের কৃতিত্ব দাবি করেছেন—প্রথমে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দাবি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি দুই দেশের সামরিক বাহিনীর আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে।
রুয়ান্ডা-ডিআর কঙ্গো সংঘাত—এই দুই দেশের বিরোধ দীর্ঘদিনের। দেশ দুটি জুনে ওভাল অফিসে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, কাতার এই চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপারটি লুকিয়েছে।
পারমিটারের মতে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে ট্রাম্পের চাপের কারণে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, এই দাবি তিনি যুক্তিসংগতভাবেই করতে পারেন। তবে ট্রাম্পের বড় পরীক্ষা হলো গাজা যুদ্ধ। এই সংঘাতকে তাঁর নোবেল দাবির সঙ্গে যোগ করতে হলে, কেবল একটি যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট হবে না।
পারমিটারের মতে, ট্রাম্পকে একটি অস্থায়ী বিরতির চেয়ে বেশি কিছু অর্জন করতে নেতানিয়াহুকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তাঁকে অবশ্যই যুদ্ধের স্থায়ী অবসানে বাধ্য করতে হবে এবং সব ইসরায়েলি জিম্মিকেও মুক্তি দিতে হবে।
এ ছাড়া ট্রাম্প যদি নেতানিয়াহুকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান নিয়ে গুরুতর পদক্ষেপ নিতে রাজি করাতে পারেন, তাহলে সেটি সত্যিকারের নোবেল পাওয়ার মতো একটি অর্জন হবে। পারমিটারের মতে, ‘ট্রাম্প এখনো সেই অবস্থানে পৌঁছাননি।’
জেসমিন-কিম ওয়েস্টেনডর্ফ, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং ইনিশিয়েটিভ ফর পিসবিল্ডিংয়ের সহপরিচালক। জেসমিনও ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড এর বিপরীত।
জেসমিন বলেন, ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তি স্থাপনকারী’ হিসেবে ঘোষণা করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তাঁর অভিযোগ, ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা, সহিংস সংঘাত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন উসকে দিয়েছেন।
জেসমিন মনে করিয়ে দেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার মূলত সশস্ত্র সংঘাত কমানো, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে ২০১১ সালে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে যৌন সহিংসতার ব্যবহার বন্ধে কাজের জন্য নাদিয়া মুরাদ ও ডেনিস মুকওয়েগের কথা বলেন জেসমিন।
জেসমিন-কিম ওয়েস্টেনডর্ফের স্পষ্ট মত, ট্রাম্প কোনো শান্তি স্থাপনকারী নন এবং তিনি এই পুরস্কারের যোগ্যও নন।
শাহরাম আকবরজাদেহ, ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন ফোরামের পরিচালক। আকবরজাদেহ বলেন, ‘নেতানিয়াহু আমাদের বিশ্বাস করাতে চান, ট্রাম্প একজন শান্তি স্থাপনকারী। এর চেয়ে মিথ্যা আর কিছু হতে পারে না। তাঁর হাত রক্তে রঞ্জিত। এরপরও ট্রাম্প নিজেকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য মনে করেন, এটি তাঁর বাস্তবতাবিবর্জিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ।’
আকবরজাদেহ অভিযোগ করেন, গাজার যুদ্ধ ২০ মাসে গড়িয়েছে। ট্রাম্প এখনো এই সংঘাত বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এটা কোনো শান্তি স্থাপনকারীর কাজ হতে পারে?’ আকবরজাদেহের ভাষায়, ‘ট্রাম্পের শান্তির ধারণা হলো কবরস্থানের শান্তি।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন। নেতানিয়াহুর দাবি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘আমাদের চোখের সামনে, একের পর এক দেশ ও অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছেন।’ তাই তাঁকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া উচিত।
এদিকে ট্রাম্প নিজেও দীর্ঘদিন ধরে এই পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে আসছেন। তাঁর দাবি, ইসরায়েল-ইরান থেকে শুরু করে রুয়ান্ডা-কঙ্গো, ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে শান্তি স্থাপনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য!
কিন্তু গাজায় সংঘাত যখন তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই শান্তি পুরস্কার কি ট্রাম্পের ভাগ্যে জুটবে? তিনি কি এই পুরস্কারের যোগ্য? এ বিষয়ে পাঁচজন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়েছে দা কনভারসেশন। চলুন, জানি—ট্রাম্পের সম্পর্কে কী বলছেন এই বিশেষজ্ঞরা।
অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল, আরবান অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ স্কুলের অ্যাডজাঙ্কট সিনিয়র ফেলো এমা সর্টিস। ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য নেতানিয়াহুর মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টির কড়া সমালোচনা করেছেন এমা। তিনি এটিকে ‘কুকুরের প্রদর্শনীতে হায়েনাকে নামানোর’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।
সর্টিস বলেন, ‘ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য নন।’ তিনি মনে করেন, এ বিষয়ে আলোচনা করতে বাধ্য করাটাই প্রমাণ করে, সবকিছুকে নিজের মতো করে বদলে নেওয়ার ক্ষমতা ট্রাম্পের আছে।
সর্টিস বলেন, ‘গাজায় কোনো শান্তি নেই। ইরানে শান্তি নেই। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নেই। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যও ট্রাম্পের আগ্রহ বা মনোযোগ নেই। তাঁর প্রশাসন কূটনীতির জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বা বিনিয়োগ করতে রাজি নয়। উপরন্তু, তিনি যুদ্ধবিরোধীও নন।’
এমা সর্টিস প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এটা কেমন শান্তি? এর জন্য তাঁকে নোবেল দিতে হবে?’
সর্টিস মনে করেন, ট্রাম্পের ‘ট্রফি’ (নোবেল) পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রশ্রয় দিলে হয়তো তিনি অল্প সময়ের জন্য খুশি হতে পারেন। কিন্তু এর ফলে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার তার সব বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। একই সঙ্গে এটি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ট্রাম্পের অবজ্ঞাকেই সমর্থন করবে।
আলি মামৌরি, ডেকিন ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের রিসার্চ ফেলো। মামৌরি বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির (নেতানিয়াহু) দ্বারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা ‘একটি নজিরবিহীন বিদ্রূপ’। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না।
মামৌরির মতে, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস মধ্যস্থতায় ট্রাম্পের ভূমিকা একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল। এর ফলে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর মতো কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। কিন্তু মামৌরি মনে করেন, এই অর্জন একটি উল্লেখযোগ্য মূল্যে এসেছে। এই চুক্তিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনি ইস্যুকে এক পাশে সরিয়ে রেখেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মূল কারণ হিসেবে স্বীকৃত এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের বিষয়ে কয়েক দশকের আন্তর্জাতিক ঐকমত্যকে উপেক্ষা করেছে।
মামৌরি আরও বলেন, ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলের এমন নীতিগুলোকে খোলাখুলি সমর্থন করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে ব্যাপকভাবে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্ত করার প্রস্তাব। গাজায় ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয়ের মুখে তাঁর নীরবতাও ছিল সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এমন কর্মকাণ্ডের পর ট্রাম্পকে নোবেলের জন্য মনোনীত করা আসলেই বিদ্রূপ।
ইয়ান পারমিটার, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের গবেষক। পারমিটার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য নেতানিয়াহুর মনোনয়নকে ‘তোষামোদ’ হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্প নিজেও এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের দাবি করছেন, যা তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামা প্রথম মেয়াদেই পেয়েছিলেন।
কিন্তু ওবামা ও ট্রাম্পের মধ্যে কে কতটুকু সফল
২০০৯ সালে ওবামা পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ‘নতুন আবহ’ তৈরির জন্য, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন। পারমিটার প্রশ্ন তোলেন, ওবামার সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো ফলপ্রসূ না হওয়ায় ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে এসে কী ধরনের দাবি করতে পারেন?
ট্রাম্প এ বছর দুটি সংঘাত সমাধানের কৃতিত্ব দাবি করেছেন—প্রথমে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দাবি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি দুই দেশের সামরিক বাহিনীর আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে।
রুয়ান্ডা-ডিআর কঙ্গো সংঘাত—এই দুই দেশের বিরোধ দীর্ঘদিনের। দেশ দুটি জুনে ওভাল অফিসে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, কাতার এই চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপারটি লুকিয়েছে।
পারমিটারের মতে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে ট্রাম্পের চাপের কারণে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, এই দাবি তিনি যুক্তিসংগতভাবেই করতে পারেন। তবে ট্রাম্পের বড় পরীক্ষা হলো গাজা যুদ্ধ। এই সংঘাতকে তাঁর নোবেল দাবির সঙ্গে যোগ করতে হলে, কেবল একটি যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট হবে না।
পারমিটারের মতে, ট্রাম্পকে একটি অস্থায়ী বিরতির চেয়ে বেশি কিছু অর্জন করতে নেতানিয়াহুকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তাঁকে অবশ্যই যুদ্ধের স্থায়ী অবসানে বাধ্য করতে হবে এবং সব ইসরায়েলি জিম্মিকেও মুক্তি দিতে হবে।
এ ছাড়া ট্রাম্প যদি নেতানিয়াহুকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান নিয়ে গুরুতর পদক্ষেপ নিতে রাজি করাতে পারেন, তাহলে সেটি সত্যিকারের নোবেল পাওয়ার মতো একটি অর্জন হবে। পারমিটারের মতে, ‘ট্রাম্প এখনো সেই অবস্থানে পৌঁছাননি।’
জেসমিন-কিম ওয়েস্টেনডর্ফ, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং ইনিশিয়েটিভ ফর পিসবিল্ডিংয়ের সহপরিচালক। জেসমিনও ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড এর বিপরীত।
জেসমিন বলেন, ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তি স্থাপনকারী’ হিসেবে ঘোষণা করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তাঁর অভিযোগ, ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা, সহিংস সংঘাত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন উসকে দিয়েছেন।
জেসমিন মনে করিয়ে দেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার মূলত সশস্ত্র সংঘাত কমানো, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে ২০১১ সালে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে যৌন সহিংসতার ব্যবহার বন্ধে কাজের জন্য নাদিয়া মুরাদ ও ডেনিস মুকওয়েগের কথা বলেন জেসমিন।
জেসমিন-কিম ওয়েস্টেনডর্ফের স্পষ্ট মত, ট্রাম্প কোনো শান্তি স্থাপনকারী নন এবং তিনি এই পুরস্কারের যোগ্যও নন।
শাহরাম আকবরজাদেহ, ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন ফোরামের পরিচালক। আকবরজাদেহ বলেন, ‘নেতানিয়াহু আমাদের বিশ্বাস করাতে চান, ট্রাম্প একজন শান্তি স্থাপনকারী। এর চেয়ে মিথ্যা আর কিছু হতে পারে না। তাঁর হাত রক্তে রঞ্জিত। এরপরও ট্রাম্প নিজেকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য মনে করেন, এটি তাঁর বাস্তবতাবিবর্জিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ।’
আকবরজাদেহ অভিযোগ করেন, গাজার যুদ্ধ ২০ মাসে গড়িয়েছে। ট্রাম্প এখনো এই সংঘাত বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এটা কোনো শান্তি স্থাপনকারীর কাজ হতে পারে?’ আকবরজাদেহের ভাষায়, ‘ট্রাম্পের শান্তির ধারণা হলো কবরস্থানের শান্তি।’
ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরানের রাজনৈতিক বিভাজন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের বিরুদ্ধে এবার সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে উৎখাত করে অভ্যুত্থান পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে।
৬ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি দিনের আলোয় জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ-এর কর্মকর্তা কর্নেল ইভান ভোরোনিচকে। এই হত্যার পরপরই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা কিয়েভবাসীর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
৭ ঘণ্টা আগেইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত সিরীয় প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে বিমান হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হামলায় অন্তত একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেভারতের সর্বোচ্চ সুন্নি ধর্মীয় নেতা শেখ আবুবকর আহমদের হস্তক্ষেপে ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নার্স নিমিষা প্রিয়ার শাস্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ২০১৭ সালে এক ইয়েমেনি নাগরিককে হত্যার দায়ে নিমিষার মৃত্যুদণ্ড নির্ধারিত ছিল আজ বুধবার, ১৬ জুলাই। তবে শেষ মুহূর্তে কূটনৈতিক ও ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে ইয়েমেন
৮ ঘণ্টা আগে