Ajker Patrika

‘টাইপ ৫ ডায়াবেটিস’ নামে স্বীকৃতি পেল কম বয়সীদের মারাত্মক এক রোগ

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ কয়েক দশক গবেষণা ও বিতর্কের পর এবার একটি নতুন ধরনের ডায়াবেটিসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ)। ‘টাইপ ৫ ডায়াবেটিস’ হিসেবে চিহ্নিত এই রোগ মূলত অপুষ্টিজনিত এবং সাধারণত কমবয়সী, হালকা-গড়নের ও অপুষ্টিতে ভোগা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে দেখা যায়। বিশেষ করে, এশিয়া ও আফ্রিকার নিম্ন ও মধ্যবিত্ত সমাজেই এর প্রকোপ বেশি।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, এই ডায়াবেটিসের ধরনটি প্রথম লক্ষ্য করা হয়েছিল ১৯৫৫ সালে জ্যামাইকাতে। পরে ১৯৮৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘ম্যালনিউট্রিশন-রিলেটেড ডায়াবেটিস মেলিটাস’ নামে স্বীকৃতি দিলেও ১৯৯৯ সালে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে সেই স্বীকৃতি তুলে নেওয়া হয়।

অবশেষে গত ৮ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে আইডিএফ এই রোগটিকে নতুন নাম দেয়—টাইপ ৫ ডায়াবেটিস। ‘ম্যাচুরিটি অনসেট ডায়াবেটস অব দ্য ইয়াং’ নামেও এটি পরিচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বজুড়ে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এদের অধিকাংশই কম ওজনের তরুণ-তরুণী, যাদের ‘বডি মাস ইনডেক্স’ ১৯-এর নিচে থাকে। রোগটি আবার বংশগতও। যদি একজন পিতা-মাতার মধ্যে এই জেনেটিক মিউটেশন থাকে, তবে সন্তানেরও তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০ শতাংশ।

‘টাইপ ৫ ডায়াবেটিস’ সাধারণ টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো নয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে শরীরে একেবারেই ইনসুলিন তৈরি হয় না এবং টাইপ ২ সাধারণত স্থূলতা ও জীবনযাত্রার কারণেই হয়ে থাকে। অন্যদিকে টাইপ ৫ হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। এই রোগে প্যানক্রিয়াসের বিটা সেলগুলো ঠিকভাবে কাজ করে না, ফলে ইনসুলিন উৎপাদন হয় অত্যন্ত কম। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের ভুল করে টাইপ ১ ডায়াবেটিস হিসেবে ধরে নিয়ে ইনসুলিন দেওয়া হয়, যা তাদের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে।

মেরেডিথ হকিন্স, নিউইয়র্কের আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ২০০৫ সালে প্রথম এই রোগটির সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি বলেন, ‘এই রোগটি বহু বছর ধরে ভুলভাবে নির্ণীত ও অবহেলিত ছিল।’ ২০১০ সালে তিনি গ্লোবাল ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে ব্যাপক গবেষণা শুরু হয় এই অজানা ধরনের ডায়াবেটিস নিয়ে।

দীর্ঘ গবেষণার ফলেই ২০২২ সালে নিশ্চিত হওয়া যায়, ‘টাইপ ৫ ডায়াবেটিস’ আসলে একটি স্বতন্ত্র ধরনের রোগ, যার চিকিৎসাপদ্ধতি আলাদা হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে এই রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা-পদ্ধতি এখনো নির্ধারিত হয়নি এবং অনেক রোগী ডায়াগনোসিসের এক বছরের মধ্যেই মারা যান।

তবে হকিন্সের মতে, এই রোগে আক্রান্তদের খাদ্যতালিকায় উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, কম কার্বোহাইড্রেট ও যথাযথ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এখন যেহেতু রোগটি একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে, তাই এটির বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও চিকিৎসাপদ্ধতি উন্নয়নে বৈশ্বিক উদ্যোগ গড়ে ওঠার আশা করছেন গবেষকেরা।

টাইপ ৫ ডায়াবেটিসের স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা উন্নয়নশীল বিশ্বের লাখো মানুষের জন্য এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত