Ajker Patrika

২১ দিন ছিলাম, কোনো চিকিৎসা পাইনি: চক্ষু হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসার আশায় ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও চিকিৎসক না পেয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে একে একে চলে গেছেন সব রোগী। তাঁদেরই একজন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রাশিদুল ইসলাম। তিনি চলে যাওয়ার সময় বললেন, ‘২১ দিন ছিলাম, কোনো চিকিৎসা পাইনি। ঈদের পর আবার আসব ভাবছি।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র। হাসপাতালের প্রধান ফটকে মাত্র তিনজন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। প্লাটুন কমান্ডার শাহ আলম জানান, হাসপাতালের নিরাপত্তায় রয়েছেন ৪২ জন আনসার সদস্য, কিন্তু চিকিৎসক, নার্স বা অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আর আসছেন না।

কিছু দিন আগেও কয়েকজন রোগী ভর্তি ছিলেন, কিন্তু কেউ চিকিৎসা না পেয়ে তাঁরা চলে গেছেন। সর্বশেষ যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৯ জনও ফিরে গেছেন বাড়িতে। শুধু জুলাইয়ের আন্দোলনে আহত কয়েকজন এখনো হাসপাতালে অবস্থান করছেন।

বিক্রমপুরের আনিসুর রহমান চিকিৎসার জন্য এক মাস ধরে তদবির করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভর্তি ছিলাম ১৫ দিন, ছানি অপারেশন হয়েছে, এরপর রেটিনার চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু মারামারির পর সপ্তাহখানেক বসে থেকে চলে যাচ্ছি।’

হাসপাতালটি গত ২৮ মে থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়ে। জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মীরা আর হাসপাতালে আসছেন না। সংঘর্ষের পর জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের দাবির মুখে গত রোববার পরিচালক আবুল খায়েরকে ছুটিতে পাঠানো হয়, ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয় জানে আলমকে। তবে তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গোটা হাসপাতাল এখন নীরব, ফাঁকা ও জনশূন্য। চিকিৎসক-নার্সদের দেখা নেই, হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষে তালা, ফার্মেসিও বন্ধ। রোগীদের বেডে নোংরা চাদর পড়ে আছে, ময়লা-আবর্জনায় ভরে আছে ফ্লোর। টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। চারতলায় আহত কয়েকজন অবস্থান করলেও অন্য ফ্লোরগুলো ‘ভুতুড়ে’ বলেই মনে হয়।

মূল ফটক ও পাশের একটি গেট তালাবদ্ধ; শুধু একটি গেট খোলা আছে, যেখানে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। গেটে দাঁড়িয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।

ঘটনার পর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও সেবাদানকারী কর্মীরা আক্রান্ত হন। এরপর তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় থেকেই এই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকেরা সেবা দিয়ে আসছিলেন। তবে ২৯ মে থেকে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম শুরুর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে, তবে সবকিছু ঠিক হতে হয়তো আরও সময় লাগবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত