Ajker Patrika

গরুর মাংস খাওয়ার স্বাস্থ্যকর উপায়

আলমগীর আলম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানেন আর না-ই মানেন, কোরবানির ঈদ মানেই মাংস খাওয়ার ধুম। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গরুই কোরবানি দেওয়া হয়। ফলে ঘরে ঘরে গরুর মাংসের নানান পদ তৈরি হতে থাকে ঈদের দিন থেকে। গরুর মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে, যদি তা সঠিক নিয়মে, পরিমিত এবং স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়। এটি উচ্চমানের প্রোটিন, আয়রন, জিংক, ভিটামিন বি১২ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের একটি চমৎকার উৎস। তবে অতিরিক্ত খাওয়ায় কিংবা ভুল রান্নার পদ্ধতি অনুসরণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

গরুর মাংস খাওয়ার নিয়ম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং পুষ্টিবিদদের মতে, লাল মাংস (গরু, খাসি ইত্যাদি) সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের বেশি (রান্না করা অবস্থায়) খাওয়া উচিত নয়। প্রতি সার্ভিংয়ে ১০০-১৫০ গ্রাম রান্না করা মাংস যথেষ্ট। অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে হৃদ্‌রোগ, কোলন ক্যানসার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

গরুর মাংসের চর্বিযুক্ত অংশ (যেমন রিব বা ফ্যাটি কাট) এড়িয়ে চর্বিহীন অংশ যেমন সিরলোইন, টেন্ডারলোইন, রাউন্ড বা লিন মিন্স বেছে নিন। দৃশ্যমান চর্বি ছুরি দিয়ে ছাঁটাই করে ফেলুন। চর্বিহীন মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে, যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। তবে চর্বিযুক্ত মাংস হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি অনেকটা বাড়ায়।

স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি

গ্রিলিং, বেকিং, স্টিমিং বা সেদ্ধ করা: এই পদ্ধতিগুলোতে অতিরিক্ত তেলের প্রয়োজন হয় না এবং পুষ্টি অক্ষুণ্ণ থাকে।

ভাজা এড়িয়ে চলুন: গভীর তেলে ভাজা কিংবা অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করে রান্না করলে ক্যালরি এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেড়ে যায়।

চারিং এড়ানো: অতিরিক্ত ঝলসানো বা কালো করে ভাজলে হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস (HCAs) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (PAHs) নামক ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হতে পারে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যের সঙ্গে খাওয়া

গরুর মাংসের সঙ্গে প্রচুর শাকসবজি, সালাদ (যেমন শসা, কাঁচা পেঁপে, গাজর, ক্যাপসিকাম), ফাইবারযুক্ত খাবার (যেমন লাল চাল) খেতে পারেন। এটি হজমে সহায়তা করে এবং পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখে। মাংসের সঙ্গে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট (যেমন শুধু সাদা ভাত বা রুটি) এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, এতে হজমের সমস্যা হয়।

লবণ ও মসলার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়াতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাংসে এক চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ অথবা আধা চা-চামচ লবণ যথেষ্ট। প্রক্রিয়াজাত মসলা এড়িয়ে প্রাকৃতিক মসলা; যেমন আদা, রসুন, হলুদ, জিরা, ধনিয়া ব্যবহার করুন।

স্বাস্থ্য বিবেচনায়

উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদ্‌রোগ, গাউট (ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা) বা কিডনি রোগ থাকলে মাংস এড়িয়ে চলুন। গর্ভবতী নারীদের জন্য আয়রন ও প্রোটিনের প্রয়োজন হলেও মাংস ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে এবং এর পরিমাণ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

কাঁচা মাংসের সংস্পর্শে আসা ছুরি, কাটিং বোর্ড ও পাত্র গরম পানি ও সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। মাংস ভালোভাবে রান্না করুন (অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমপক্ষে ৭০ ডিগ্রি সে.) যাতে ব্যাকটেরিয়া ইকোলি বা স্যালমোনেলা ইত্যাদি ধ্বংস হয়।

সবচেয়ে নিরাপদ মাংস

কাঁচা মাংস গরম পানিতে ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিন। এতে মাংসে থাকা কোনো রক্ত যেন না থাকে। তারপর যেভাবে খুশি সেভাবে খেতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকবে। কালিয়া, কালাভুনা, গ্রিল, কাবাব—যেভাবেই খান না কেন, সমস্যা হবে না। কাঁচা বা আধা রান্না করা মাংসে ব্যাকটেরিয়া (যেমন স্যালমোনেলা) থাকতে পারে। পানিতে সেদ্ধ করলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা আর থাকবে না।

গরুর মাংস আপনার স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে, যদি চর্বিহীন মাংস আপনি বেছে নিতে পারেন। তবে অতিরিক্ত তেল বা লবণ এড়িয়ে চলতে হবে এবং সালাদ ও শাকসবজির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ খাবার হিসেবে গ্রহণ করুন।

পরামর্শ দিয়েছেন: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন বলেই কি জামিন পেলেন না অধ্যাপক আনোয়ারা

হঠাৎ ব্যাংকের ভেতরে সবাই অচেতন

সৌদি আরবে পুরুষের ‘অবাধ্য’ হলে নারীর যে পরিণতি হয়

নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মোর্শেদের স্ত্রী জুঁইকে দুদকে তলব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত