Ajker Patrika

খাবার থেকে ভিটামিন নিন

জাকিয়া নাজনীন
Thumbnail image

ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার প্রবণতা আমাদের দেশে বেশ ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, স্বাভাবিকভাবে খাবারের সঙ্গে যে ভিটামিন গ্রহণ করা হয়, আমাদের জন্য তা-ই যথেষ্ট হওয়ার কথা। সে জন্য আগে খাবার থেকেই ভিটামিন নেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রয়োজন হলেই কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার পানিতে ধুয়ে তারপর কাটুন অথবা খানআমরা দুটি উৎস থেকে খাবার গ্রহণ করি—এটি উদ্ভিজ্জ ও অন্যটি প্রাণিজ। এই খাবারগুলোয় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে। সেই ভিটামিনগুলোর কিছু পানিতে দ্রবণীয় আবার কিছু চর্বিতে দ্রবণীয়। এ, ডি, ই এবং কে হচ্ছে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। ভিটামিন বি এবং সি হচ্ছে পানিতে দ্রবণীয়।
চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো যখন আমরা প্রাণিজ উৎস থেকে গ্রহণ করি, তা শরীর মোটামুটিভাবে শোষণ করতে পারে। কিন্তু উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া ভিটামিনগুলো শরীর সব সময় শোষণ করতে পারে না। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ভিটামিন এ-এর কথা। এটি মূলত বিটা ক্যারোটিন, যা গাজর ও মিষ্টিকুমড়ায় পাওয়া যায়। এগুলো থেকে বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ-তে পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন হয় চর্বির মাধ্যমে। সেগুলো  রান্নার সময় যে তেল ব্যবহার করা হয় তার মাধ্যমে আমাদের শরীর ভালোভাবে ভিটামিন এ শুষে নিতে পারে। যাঁরা এ-জাতীয় সবজি সেদ্ধ করে খান, তাঁরা পুরো পুষ্টি পাওয়ার জন্য সেদ্ধ সবজির ওপর তেল ছড়িয়ে খেতে পারেন।

 এ ছাড়া অন্যান্য ভিটামিন, যেমন ভিটামিন বি এবং সি এগুলো আমাদের শরীরে নিশ্চিত করতে পারছি কি না, সেটা ভাবতে হবে। আমরা অনেকেই লাল চালের ভাত খাই। এতে ভিটামিন বি থাকে। এটি পানিতে দ্রবণীয়। মাটিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের মধ্যেও আর্সেনিক থাকে। চাল থেকে আর্সেনিকের পরিমাণ কমানোর জন্য চাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভালো করে কচলে ধুয়ে নিতে হবে। তাতে চাল থেকে আর্সেনিক পানির সঙ্গে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ভিটামিন বি যেহেতু পানিতে দ্রবণীয়, সে ক্ষেত্রে সেটিও কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় পানির সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে কি না, এমন প্রশ্ন জাগতে পারে। এ জন্য ভাত রান্নার সময় মাড় না ফেলে বসা ভাত রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।

ভিটামিন এ মূলত বিটা ক্যারোটিন, যা গাজরে পাওয়া যায়এবার আসি ভিটামিন সি প্রসঙ্গে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। লেবু কেটে রেখে দিলে তা অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে। ফলে এর মধ্যে যে রাসায়নিক উপাদানগুলো থাকে, সেগুলো পাল্টাতে থাকে। এ জন্য ঠিক খাওয়ার সময়ই লেবু কাটতে হবে। আবার সালাদে লেবুর রস ব্যবহার করলে তা বেশিক্ষণ টেবিলে না রাখাই ভালো। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন আছে এমন সবজি কেটে যখন ধুয়ে নেওয়া হয়, তখন অধিকাংশ ভিটামিনই পানিতে ধুয়ে চলে যায়। এ জন্য আগে ভালোভাবে ধুয়ে তারপর সবজি কেটে রান্না করতে হয়। আলুতে খুব সামান্য পরিমাণ ভিটামিন সি আছে। সেটুকুও চাইলে রক্ষা করা যায়। সে জন্য আলু খোসাসহ রান্না করতে হবে।

এভাবে বিভিন্ন খাবারের মধ্যকার ভিটামিনগুলো যদি আমরা যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারি তাহলে আলাদা করে কোনো ভিটামিন সম্পূরক নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে শরীরে যদি কোনো ভিটামিনের বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেয়, তখন সম্পূরকের প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকের পরামর্শমতো ভিটামিন সেবন করতে হবে।

লেখক: পুষ্টিবিদ ও হোলস্টিক লাইফস্টাইল মোডিফায়ার, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত