Ajker Patrika

৯০% মৃত্যুই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে, তবু নেই জাতীয় কর্মপরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ২৩: ৫৯
৯০% মৃত্যুই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে, তবু নেই জাতীয় কর্মপরিকল্পনা

দেশে নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের পরেই জরায়ুমুখ ক্যানসারের স্থান। আর এ ধরনের ক্যানসারে মৃত্যুর ৯০ শতাংশই ঘটছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এর পেছনে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবায় সীমিত প্রবেশাধিকার, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার সুবিধা গড়ে না ওঠার মতো সংকট। যেখানে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা পেলে এই রোগ সেরে যায়।

শনিবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে জরায়ুমুখের ক্যানসার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালে এই ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছে বিশ্বে ৩ লাখের বেশি নারীর। শতকরা ৯০ ভাগ মৃত্যু হয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এতে প্রতিফলিত হয় বৈশ্বিক অসাম্যের চিত্র। 

যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৫ লাখ ৭০ হাজার নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার নারী এতে মারা যান।

মার্চ ফর মাদার (জননীর জন্য পদযাত্রা) নামের প্ল্যাটফর্ম ‘জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে বৈশ্বিক কৌশল: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে এই ক্যানসার নির্মূলে একটি সমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১৫ বছরের নিচের কিশোরীদের ৯০ ভাগকে এইচপিভি টিকাদান, ৩৫ ও ৪৫ বছর বয়সে নারীদের ৭০ ভাগকে উচ্চমানের স্ক্রিনিং (শনাক্তকরণ) এবং জরায়ুমুখের ক্যানসার ও ক্যানসার পূর্বাবস্থার রোগীদের ৯০ ভাগের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বানের পর ২০২০ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে এই কৌশল গৃহীত হয়। 

আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য দেন মার্চ ফর মাদার মোর্চার প্রধান সমন্বয়কারী ক্যানসার রোগতত্ত্ববিদ ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। তিনি বলেন, ‘জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রায় শতভাগের সঙ্গে এইচপিভি নামের ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্পর্ক আছে। তাই এই ক্যানসারের প্রাথমিক প্রতিরোধে এইচপিভি টিকাদান অতি জরুরি। পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর, যেমন বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে সন্তানধারণ, বেশি সন্তানের মা হওয়া, ঘন ঘন সন্তান প্রসব, ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা— এসব বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।’

বাংলাদেশ এত ঝুঁকিতে থাকার পরও জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি এবং জাতীয় ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক রাসকিন বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যানসার স্ক্রিনিং এমনকি উন্নয়নশীল দেশেও বাস্তবায়ন সম্ভব। গত ১৫ বছরে এই লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশের নিচে সফলতা অর্জন করা গেছে। এর প্রধান কারণ জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় জাতীয় ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি হিসেবে প্রণীত ও পরিচালিত না হওয়া, জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সম্পৃক্ত না হওয়া, প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধানসহ  স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ধাপে বিকেন্দ্রীকরণ না করা।’

দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা অসচ্ছল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দুঃসাধ্য। অথচ এই জনগোষ্ঠীই এ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার অধিকতর ঝুঁকিতে থাকেন। রোগতত্ত্ববিদ তাসকিন বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল অর্থনৈতিক নাগালের বাইরে। রাজধানীকেন্দ্রিক সরকারি চিকিৎসা তেমনিভাবে ভৌগোলিক নাগালের বাইরে। সারা দেশ থেকে আগত বিপুলসংখ্যক ক্যানসার রোগীর দীর্ঘ অপেক্ষমাণ তালিকা তো আছেই।’

তবে আশার কথা হলো, আটটি বিভাগীয় শহরে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে। রোববার (৯ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। একনেকে অনুমোদিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত ক্যানসার প্রতিরোধ ও গবেষণাসহ ক্যানসারের সাতটি বিশেষায়িত বিভাগ এখানে চালু হলে ক্যানসার সেবা সাধারণ মানুষের নাগালে আনার একটি ধাপ অগ্রসর হবে।  

জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ দেশের সার্বিক ক্যানসার সেবা উন্নয়ন সুষম ও সর্বজনীন  করতে ব্যাপক আলোচনা, পর্যালোচনা, সব অংশীজনের অংশগ্রহণ ও চলমান কার্যক্রমকে একটি জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এনে ঢেলে সাজানো দরকার বলেও মনে করেন এই রোগতত্ত্ববিদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নবনিযুক্ত পরিচালক অধ্যাপক স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।  সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট গাইনি অনকোলজি ও কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত