Ajker Patrika

পথের পাঁচালির জন্য অস্কার পাননি সত্যজিৎ

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৩: ০১
Thumbnail image

ঢাকা: বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথিতযশা নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের জন্ম হয়েছিল আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে। অজস্র অর্জনে ভরপুর বিশ্ববরেণ্য এ নির্মাতার ক্যারিয়ার। প্রথম বাঙালি চলচ্চিত্রকার হিসেবে সত্যজিৎ রায় বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার অর্জন করেন।

অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, সত্যজিৎ রায় তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র জন্য অস্কার পেয়েছিলেন। এ তথ্যটি সঠিক নয়। কোনো নির্দিষ্ট চলচ্চিত্রের জন্য নয়, পরিচালনাসহ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯১ সালে অস্কার কমিটি তাঁকে ‘আজীবন সম্মাননা’ দেয়।

অসুস্থতার কারণে তিনি পুরস্কার মঞ্চে উপস্থিত থাকতে পারেননি। মৃত্যুশয্যায় তার অস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতির ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীকালে অস্কার অনুষ্ঠানে দেখানো হয়। এই পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন।

১৯৫৭ সালে ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিটি ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পায়। ছবিটি অস্কারের বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েও একটিমাত্র ভোটের জন্য সেরার পুরস্কার ফসকে যায়। মেহবুব খান পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন নার্গিস, সুনীল দত্ত, রাজেন্দ্র কুমার ও রাজ কুমার। ছবিটি মূলত একই পরিচালকের আওরাত (১৯৪০) ছবির রিমেক।

অস্কার মনোনয়ন পাওয়া প্রথম ভারতীয় সিনেমা 'মাদার ইন্ডিয়া'।১৯৮৮ সালে মিরা নায়ার পরিচালিত ‘সালাম বোম্বে’ ছবিটি দ্বিতীয় ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে মনোনয়ন লাভ করে। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মানজনক ক্যামেরা ডি’অর পুরস্কার জিতে নেয়।

অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিল মিরা নায়ার পরিচালিত 'সালাম বােম্বে'।২০০১ সালে আশুতোষ গোয়ারিকার পরিচালিত ও আমির খান অভিনীত ‘লগান’ ছবিটি বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়। ‘টাইম’ ম্যাগাজিন লগানকে বিশ্বের সেরা চলচ্চিত্রগুলোর একটি বলে আখ্যায়িত করে। তৃতীয় ভারতীয় ছবি হিসেবে অস্কার মনোনয়ন পায় লগান।

২০০১ সালে অস্কার মনোনয়ন পায় আশুতোষ গোয়ারিকরের 'লগান' সিনেমা।তবে তিন তিনবার মনোনয়ন পেলেও এখন পর্যন্ত কোনও ভারতীয় ছবি অস্কার জিতে নিতে পারেনি।

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম অস্কার পাওয়া ব্যক্তি ভানু আথাইয়া।বেশ কয়েকজন ভারতীয় হলিউডে কাজ করে অস্কারের মঞ্চে উঠেছেন। ভানু আথাইয়া ১৯৮৩ সালে স্যার রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ‘গান্ধী’ ছবিতে কস্টিউম ডিজাইনের জন্য জিতে নেন অস্কার পুরস্কার। উপমহাদেশে তিনিই প্রথম এ পুরস্কার অর্জন করেন।

অস্কার হাতে এআর রহমান। ছবি: সংগৃহীত২০০৯ সালে পরিচালক ড্যানি বয়েলের পরিচালনায় ‘স্লামডগ মিলিওনার’ ছবিতে সুরকার হিসেবে অস্কারের মঞ্চে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের পুরস্কারটি ঝোলায় ভরেন এআর রহমান। ওই ছবিতেই ‘জয় হো’ গানটির জন্য সেরা গীতিকার বিভাগে যৌথভাবে অস্কার বিজয়ী হন গুলজার ও এআর রহমান। একই ছবিতেই সাউন্ড ডিজাইনার বিভাগে অস্কার পুরস্কার জেতেন আরেক ভারতীয় রেসুল পোকুট্টি।

চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী (১৯৫৫) ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব ডকুমেন্টারি’ পুরস্কার। পথের পাঁচালী, অপরাজিত (১৯৫৬) ও অপুর সংসার (১৯৫৯)– এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত, এবং এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী সত্যজিতের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে বহুল স্বীকৃত। তবে সত্যজিতের কোনো একক ছবিই অস্কারের মনোনয়ন বোর্ডে জায়গা পায়নি।   

কিশোরগঞ্জে সত্যজিতের পৈত্রিক ভিটার ধ্বংসাবশেষ।সত্যজিৎ রায়ের আদি পৈত্রিক ভিটা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে। সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং বাবা সুকুমার রায় দুজনেরই জন্ম এখানে।

১৯৯২ সালে হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে অসুস্থ সত্যজিৎ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সে অবস্থা থেকে তার স্বাস্থ্য আর ভালো হয়নি। মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে গুরুতর অসুস্থ ও শয্যাশায়ী অবস্থায় তিনি তার জীবনের শেষ পুরস্কার ‘সম্মানসূচক অস্কার’ গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ মৃত্যুবরণ করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত