রাজীব কুমার সাহা
আমাদের দৈনন্দিন ভাষা ব্যবহারে একটি অতিপরিচিত শব্দবন্ধ হলো ‘জগদ্দল পাথর’। যাপিত জীবনের দুঃসহ কোনো পরিস্থিতিতে আমরা সচরাচর এ শব্দবন্ধটির ব্যবহার লক্ষ করি। কিন্তু এই জগদ্দল পাথর আসলে কী? এটা কি বিশেষ কোনো পাথর? এর কি আদৌ কোনো অস্তিত্ব আছে? আর এটি কেনই-বা এত যন্ত্রণাদায়ক পাথর? তবে চলুন আজ জানব, জগদ্দল পাথরের আদ্যোপান্ত।
জগদ্দল ও পাথর শব্দ দুটো মিলে তৈরি হয়েছে জগদ্দল পাথর শব্দবন্ধটি। এটি বিশেষ্য পদ। আমরা যদি জগদ্দল শব্দটি খেয়াল করি তাহলে দেখব, ‘জগৎ’ এবং ‘দল’ শব্দ মিলে তৈরি হয়েছে ‘জগদ্দল’ শব্দটি। জগদ্দল বিশেষণ পদ। ‘দল’ শব্দটির ব্যুৎপত্তির দিকে তাকালে আমরা দেখব, শব্দটি এসেছে দলন (√দল্+অন) থেকে। যার অর্থ মর্দন, চূর্ণীকরণ বা নিপীড়ন। জগদ্দল শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো জগৎকে দলনে সক্ষম এমন ক্ষমতাধর, জগতের দলনকর্তা প্রভৃতি।
সুতরাং জগদ্দল পাথরের অর্থ হলো জগৎকে দলনে সক্ষম এমন গুরুভার পাষাণ বা সরানো বা নড়ানো যায় না এমন অতিশয় ভারী পাথর। সুতরাং এখান থেকে সহজেই অনুমেয় যে এ পাথর কতটা ওজনদার, যা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকেও দলিত করতে পারে। এ তো গেল এই শব্দবন্ধের আক্ষরিক অর্থের কথা। এবার আসি এর আলংকারিক অর্থে।
আলংকারিক অর্থে জগদ্দল পাথরের অর্থ হলো যে পাথর দলিত করে বা পীড়া দেয় এবং যে পাথরের ভার বহন করা অতি কষ্টকর। আবার অন্যভাবে বলা যায়, এই শব্দবন্ধ বিশাল গুরুভার তথা অত্যন্ত ভারী অর্থেও প্রযুক্ত। সাধারণত যখন কোনো দুঃসহ বেদনা বা অসীম কষ্ট জগদ্দলের মতো পাথরস্বরূপ বুকের ভেতর চেপে বসে, তখন সচরাচর এ শব্দবন্ধটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। যেমন ‘অকালপ্রয়াত সন্তানের শোক বাবার বুকে জগদ্দল পাথর হয়ে আছে।’ অর্থাৎ এ শোক বা অকালপ্রয়াত সন্তানের স্মৃতিরাশি বাবার বুকে জগদ্দল পাথরের মতো আটকে আছে, যা থেকে কোনোভাবেই মুক্তি মেলা সম্ভব নয়।
পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে আলংকারিক প্রয়োগে কখনো কখনো জগদ্দল পাথরকে ব্যক্তির সঙ্গেও প্রতিতুলনা করা হয়; অর্থাৎ তিনিই জগদ্দল পাথর যিনি কাউকে কষ্ট দেন বা নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায়ও আমরা এ শব্দবন্ধের উল্লেখ পাই। তিনি তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘ভারতবর্ষ ইংরেজের সভ্যশাসনের জগদ্দল পাথর বুকে নিয়ে তলিয়ে পড়ে রইল নিরুপায় নিশ্চলতার মধ্যে।’
আবার তাঁর যোগাযোগ উপন্যাসের এক স্থানে বলেছেন, ‘আর সংসারের উপর চেপে আছে ওর নিজের আইবুড়ো-দশা, জগদ্দল পাথর, তার যত বড় দুঃখ, তত বড় অপমান। কিছু করবার নেই, কপালে করাঘাত ছাড়া।’ পূর্বোক্ত ব্যাখ্যা অনুসারে কবিগুরুর উপরিউক্ত বাক্যদ্বয়ে ‘জগদ্দল পাথর’-এর অর্থ পাঠকের কাছে অবশ্যই সুস্পষ্ট।
প্রাসঙ্গিকভাবে পাঠকদের আরেকটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভালো তা হলো, নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল গ্রামে জগদ্দল বিহার নামে একটি বৌদ্ধবিহার রয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের ৯১৭ বছরের প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের ব্যতিক্রমধর্মী কিছু সংযোজন রয়েছে এই জগদ্দল বৌদ্ধবিহারে। এই বিহারের চারপাশেও অনেক ভারী ভারী পাথর রয়েছে।
এই পাথরগুলোর দৈর্ঘ্য এবং অবস্থানগত দিক থেকে এটিও সহজেই অনুমেয় যে এগুলো কারও পক্ষে উত্তোলন করা সম্ভব নয়। এই পাথরগুলো যেন এ ধরার বুকে ভূমিকম্প বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলস্বরূপ চেপে বসেছে। এই অবস্থাদৃষ্টেই এর নামকরণ হয়েছে জগদ্দল বৌদ্ধবিহার। ইউনেসকো ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্ভাব্য তালিকায় জগদ্দল বৌদ্ধবিহারের নাম রয়েছে।
রাজীব কুমার সাহা, আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
আমাদের দৈনন্দিন ভাষা ব্যবহারে একটি অতিপরিচিত শব্দবন্ধ হলো ‘জগদ্দল পাথর’। যাপিত জীবনের দুঃসহ কোনো পরিস্থিতিতে আমরা সচরাচর এ শব্দবন্ধটির ব্যবহার লক্ষ করি। কিন্তু এই জগদ্দল পাথর আসলে কী? এটা কি বিশেষ কোনো পাথর? এর কি আদৌ কোনো অস্তিত্ব আছে? আর এটি কেনই-বা এত যন্ত্রণাদায়ক পাথর? তবে চলুন আজ জানব, জগদ্দল পাথরের আদ্যোপান্ত।
জগদ্দল ও পাথর শব্দ দুটো মিলে তৈরি হয়েছে জগদ্দল পাথর শব্দবন্ধটি। এটি বিশেষ্য পদ। আমরা যদি জগদ্দল শব্দটি খেয়াল করি তাহলে দেখব, ‘জগৎ’ এবং ‘দল’ শব্দ মিলে তৈরি হয়েছে ‘জগদ্দল’ শব্দটি। জগদ্দল বিশেষণ পদ। ‘দল’ শব্দটির ব্যুৎপত্তির দিকে তাকালে আমরা দেখব, শব্দটি এসেছে দলন (√দল্+অন) থেকে। যার অর্থ মর্দন, চূর্ণীকরণ বা নিপীড়ন। জগদ্দল শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো জগৎকে দলনে সক্ষম এমন ক্ষমতাধর, জগতের দলনকর্তা প্রভৃতি।
সুতরাং জগদ্দল পাথরের অর্থ হলো জগৎকে দলনে সক্ষম এমন গুরুভার পাষাণ বা সরানো বা নড়ানো যায় না এমন অতিশয় ভারী পাথর। সুতরাং এখান থেকে সহজেই অনুমেয় যে এ পাথর কতটা ওজনদার, যা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকেও দলিত করতে পারে। এ তো গেল এই শব্দবন্ধের আক্ষরিক অর্থের কথা। এবার আসি এর আলংকারিক অর্থে।
আলংকারিক অর্থে জগদ্দল পাথরের অর্থ হলো যে পাথর দলিত করে বা পীড়া দেয় এবং যে পাথরের ভার বহন করা অতি কষ্টকর। আবার অন্যভাবে বলা যায়, এই শব্দবন্ধ বিশাল গুরুভার তথা অত্যন্ত ভারী অর্থেও প্রযুক্ত। সাধারণত যখন কোনো দুঃসহ বেদনা বা অসীম কষ্ট জগদ্দলের মতো পাথরস্বরূপ বুকের ভেতর চেপে বসে, তখন সচরাচর এ শব্দবন্ধটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। যেমন ‘অকালপ্রয়াত সন্তানের শোক বাবার বুকে জগদ্দল পাথর হয়ে আছে।’ অর্থাৎ এ শোক বা অকালপ্রয়াত সন্তানের স্মৃতিরাশি বাবার বুকে জগদ্দল পাথরের মতো আটকে আছে, যা থেকে কোনোভাবেই মুক্তি মেলা সম্ভব নয়।
পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে আলংকারিক প্রয়োগে কখনো কখনো জগদ্দল পাথরকে ব্যক্তির সঙ্গেও প্রতিতুলনা করা হয়; অর্থাৎ তিনিই জগদ্দল পাথর যিনি কাউকে কষ্ট দেন বা নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায়ও আমরা এ শব্দবন্ধের উল্লেখ পাই। তিনি তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘ভারতবর্ষ ইংরেজের সভ্যশাসনের জগদ্দল পাথর বুকে নিয়ে তলিয়ে পড়ে রইল নিরুপায় নিশ্চলতার মধ্যে।’
আবার তাঁর যোগাযোগ উপন্যাসের এক স্থানে বলেছেন, ‘আর সংসারের উপর চেপে আছে ওর নিজের আইবুড়ো-দশা, জগদ্দল পাথর, তার যত বড় দুঃখ, তত বড় অপমান। কিছু করবার নেই, কপালে করাঘাত ছাড়া।’ পূর্বোক্ত ব্যাখ্যা অনুসারে কবিগুরুর উপরিউক্ত বাক্যদ্বয়ে ‘জগদ্দল পাথর’-এর অর্থ পাঠকের কাছে অবশ্যই সুস্পষ্ট।
প্রাসঙ্গিকভাবে পাঠকদের আরেকটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভালো তা হলো, নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল গ্রামে জগদ্দল বিহার নামে একটি বৌদ্ধবিহার রয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের ৯১৭ বছরের প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের ব্যতিক্রমধর্মী কিছু সংযোজন রয়েছে এই জগদ্দল বৌদ্ধবিহারে। এই বিহারের চারপাশেও অনেক ভারী ভারী পাথর রয়েছে।
এই পাথরগুলোর দৈর্ঘ্য এবং অবস্থানগত দিক থেকে এটিও সহজেই অনুমেয় যে এগুলো কারও পক্ষে উত্তোলন করা সম্ভব নয়। এই পাথরগুলো যেন এ ধরার বুকে ভূমিকম্প বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলস্বরূপ চেপে বসেছে। এই অবস্থাদৃষ্টেই এর নামকরণ হয়েছে জগদ্দল বৌদ্ধবিহার। ইউনেসকো ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্ভাব্য তালিকায় জগদ্দল বৌদ্ধবিহারের নাম রয়েছে।
রাজীব কুমার সাহা, আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫