শের আলি বুখারি
এটা নজিরবিহীন সময়। গত বৃহস্পতিবার আরেকটি বড় অভিযান চলল। ইসরায়েল লেবাননের রাজধানী বৈরুতে একটি বিশাল বিমান হামলা চালিয়ে হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে। হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক প্রধান ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের এ রাজনৈতিক হত্যা সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীটির জন্য একটি গুরুতর ধাক্কা। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এতে হিজবুল্লাহর আন্দোলন গুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
ইরানের চালানো ছায়াযুদ্ধের অন্যতম শরিক হলো হিজবুল্লাহ। এটি মূলত ১৯৮০-এর দশকের লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধ এবং লেবাননের গৃহযুদ্ধের (১৯৭৫-৯০) ঘটনা থেকে উদ্ভূত। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব নেওয়ার পর থেকে নাসরুল্লাহ ইরানের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ইরান থেকে আন্দোলনের জন্য আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তার পাশাপাশি অস্ত্রও পেয়েছেন। ২০০৬ সালে তিনি লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ এবং বৈরুত অবরোধের নেতৃত্ব দেন। এতে ইসরায়েলি সেনারা লেবানন ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার পর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা লেবানন এবং এর বাইরেও বেড়েছে। তিনি ইসরায়েলকে নৃশংস শত্রু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে একটি বড় আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ নিহত এবং ৯৬ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। হতাহতদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে হিজবুল্লাহ অধিকৃত লেবানন থেকে উত্তর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায়। নাসরুল্লাহকে হত্যার আগে ইসরায়েলিরা লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা এবং পেজার ও ওয়াকিটকিসহ যোগাযোগ যন্ত্রে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ৩৭ জন নিহত এবং ৩ হাজার জন আহত হয়েছে। গত জুলাইয়ের শেষে তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল।
এটাও স্পষ্ট যে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের জায়গা অবৈধ দখলের বৈধ প্রতিরোধের অবসান ঘটাতে এই অঞ্চলে যুদ্ধ বাড়াতে চান। নেতানিয়াহু এটাও স্পষ্ট করেছেন, তিনি ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে একমত নন। আন্তর্জাতিকভাবে সম্মতি থাকলেও না। ইসরায়েলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লক্ষ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ছায়াযুদ্ধের নেটওয়ার্ককে দুর্বল করতে এবং সমগ্র অঞ্চলে ইরানের সক্ষমতা কমানোর জন্য সংঘর্ষকে বাড়িয়ে চলা।
ইরান এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নৃশংস গণহত্যা এবং লেবাননে হামলার বিষয়ে ধৈর্যধারণ করছে। এটি তেহরানে হানিয়াকে হত্যার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো বড় কাজ করেনি। আমাদের দেখতে হবে, নাসরুল্লাহর হত্যার পরে ইরান কী করে। কারণ, নাসরুল্লাহ তেহরানের জন্য হানিয়ার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন, ইরান নিজ ভূখণ্ডে যুদ্ধ এড়াতে চায়। অন্যদের মত, উপযুক্ত প্রতিশোধের মাধ্যমে ইসরায়েলি উসকানি রোধ করার রাজনৈতিক ইচ্ছা ও ক্ষমতার অভাব রয়েছে ইরানের। কারণ যা-ই হোক না কেন, ইসরায়েল ও তার মিত্ররা এটিকে তেহরানের একটি বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখে। তারা বিশ্বে বিচ্ছিন্ন। আন্তর্জাতিক স্তরে অল্প কিছু বন্ধু থাকলেও তাদের প্রযুক্তি নিকৃষ্ট।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের কথিত ‘আত্মরক্ষার অধিকার’-এর কথা বলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় ইসরায়েলকে কেবল সমর্থনই করেনি, এখন লেবাননে তাদের পদক্ষেপের জন্য পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদি ইসরায়েলি আগ্রাসন ইরানকে জড়িত করে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই দখলদার ইসরায়েলের পাশে থেকে লড়াই করবে।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস—উভয়েই ইসরায়েলকে সমর্থন করেন। এমনকি দেশটি যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার পরও। ইসরায়েলপন্থী লবি মার্কিন রাজনৈতিক জীবনে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ইসরায়েল প্রশ্নাতীতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের সমর্থন উপভোগ করে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১২ মাসের মধ্যে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের দখলদারত্ব শেষ করার জন্য একটি সঠিক সময়সীমা বেঁধে প্রস্তাব পাস করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বারা আনা গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইছেন। মানবাধিকার সংস্থা বিতসেলেম, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল—সবাই বলেছে, ইসরায়েল বর্ণবাদের অপরাধে দোষী, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সমান। ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন স্পষ্টত সর্বস্তরে বাড়ছে এবং গাজা (ও লেবাননে) যুদ্ধবিরতি ছাড়া এবং বাস্তবে ও প্রতীকীভাবে ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি ছাড়া এটি কমার সম্ভাবনা নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরানপন্থীদের একটি অ্যাকাউন্ট আছে, যার অনুসারী কয়েক হাজার। তারা বলছে, তেহরান ও তার ছায়াযোদ্ধারা ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিকল্পনার সম্ভাব্য ঝুঁকি ও প্রতিক্রিয়া বুঝতে ভুল করেছে। এর ফলে স্বল্প মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদের কাছ থেকে ইরানের জন্য সত্যিকারের হুমকি রয়েছে। যা-ই হোক, ইরান হামাস বা হিজবুল্লাহ নয় এবং আধুনিক অস্ত্র, জনশক্তি ও সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত। সেই সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের সমর্থন রয়েছে। ইসরায়েল যদি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ঝুঁকি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে এক কিয়ামতের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া ও চীন উভয়ই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মর্যাদা ও সুবিধা বাড়িয়েছে। উভয়েই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নীতির বারবার সমালোচনা করেছে, যা ইসরায়েলের হাতকে শক্তিশালী করেছে। মজার বিষয় হলো, মস্কো ও বেইজিং যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নেতৃত্ব দিচ্ছে। চীনই একমাত্র পেরেছিল হামাস ও ফাতাহর মধ্যে একটি সন্ধির ব্যবস্থা করতে। যা-ই হোক, পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ইউক্রেন ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করতে ইরান ও তার ছায়াযোদ্ধাদের সমর্থন করছে রাশিয়া ও চীন। ওয়াশিংটন অবশ্য রাশিয়া ও চীনের প্রভাব খর্ব করতে বদ্ধপরিকর।
আরব বিশ্বে ২০২০ সালের আব্রাহাম অ্যাকর্ড সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও সৌদি আরবের সঙ্গে তা করতে পারেনি। ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান স্পষ্ট করেছেন যে ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। মার্কিন শাসকেরা ভেবে নিয়েছিলেন, বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তি এবং একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। পাশাপাশি ইরান ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে একটি জোট গঠন সম্ভব হবে। কিন্তু সে আশা ভেস্তে গেছে।
প্রায় সম্পূর্ণরূপে মার্কিন আর্থিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সমর্থন এবং মধ্যপ্রাচ্যে তার শক্তিশালী প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের কারণে স্বল্পমেয়াদি বিজয় সত্ত্বেও ইসরায়েলকে নিঃসন্দেহে শিগগির বা পরে ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকারকে মেনে নিতে হবে। ফিলিস্তিনিরা গ্লোবাল সাউথে অপ্রতিরোধ্যভাবে সমর্থন পাচ্ছে। গ্লোবাল নর্থেও তার জন্য পটভূমি তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের গণহত্যায় অযোগ্য সমর্থন দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সদিচ্ছা ও খ্যাতি হারিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের সবার জন্য হুমকির মধ্যে ইসরায়েল অন্তর্ভুক্ত। এটাই বড় বাস্তব। বর্তমান আগ্রাসী যুদ্ধের দ্বারা ইসরায়েল তা কমাতে পারবে না।
(মিডল ইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
শের আলি বুখারি, পাকিস্তানি সাংবাদিক
এটা নজিরবিহীন সময়। গত বৃহস্পতিবার আরেকটি বড় অভিযান চলল। ইসরায়েল লেবাননের রাজধানী বৈরুতে একটি বিশাল বিমান হামলা চালিয়ে হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে। হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক প্রধান ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের এ রাজনৈতিক হত্যা সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীটির জন্য একটি গুরুতর ধাক্কা। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এতে হিজবুল্লাহর আন্দোলন গুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
ইরানের চালানো ছায়াযুদ্ধের অন্যতম শরিক হলো হিজবুল্লাহ। এটি মূলত ১৯৮০-এর দশকের লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধ এবং লেবাননের গৃহযুদ্ধের (১৯৭৫-৯০) ঘটনা থেকে উদ্ভূত। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব নেওয়ার পর থেকে নাসরুল্লাহ ইরানের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ইরান থেকে আন্দোলনের জন্য আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তার পাশাপাশি অস্ত্রও পেয়েছেন। ২০০৬ সালে তিনি লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ এবং বৈরুত অবরোধের নেতৃত্ব দেন। এতে ইসরায়েলি সেনারা লেবানন ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার পর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা লেবানন এবং এর বাইরেও বেড়েছে। তিনি ইসরায়েলকে নৃশংস শত্রু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে একটি বড় আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ নিহত এবং ৯৬ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। হতাহতদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে হিজবুল্লাহ অধিকৃত লেবানন থেকে উত্তর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায়। নাসরুল্লাহকে হত্যার আগে ইসরায়েলিরা লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা এবং পেজার ও ওয়াকিটকিসহ যোগাযোগ যন্ত্রে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ৩৭ জন নিহত এবং ৩ হাজার জন আহত হয়েছে। গত জুলাইয়ের শেষে তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল।
এটাও স্পষ্ট যে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের জায়গা অবৈধ দখলের বৈধ প্রতিরোধের অবসান ঘটাতে এই অঞ্চলে যুদ্ধ বাড়াতে চান। নেতানিয়াহু এটাও স্পষ্ট করেছেন, তিনি ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে একমত নন। আন্তর্জাতিকভাবে সম্মতি থাকলেও না। ইসরায়েলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লক্ষ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ছায়াযুদ্ধের নেটওয়ার্ককে দুর্বল করতে এবং সমগ্র অঞ্চলে ইরানের সক্ষমতা কমানোর জন্য সংঘর্ষকে বাড়িয়ে চলা।
ইরান এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নৃশংস গণহত্যা এবং লেবাননে হামলার বিষয়ে ধৈর্যধারণ করছে। এটি তেহরানে হানিয়াকে হত্যার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো বড় কাজ করেনি। আমাদের দেখতে হবে, নাসরুল্লাহর হত্যার পরে ইরান কী করে। কারণ, নাসরুল্লাহ তেহরানের জন্য হানিয়ার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন, ইরান নিজ ভূখণ্ডে যুদ্ধ এড়াতে চায়। অন্যদের মত, উপযুক্ত প্রতিশোধের মাধ্যমে ইসরায়েলি উসকানি রোধ করার রাজনৈতিক ইচ্ছা ও ক্ষমতার অভাব রয়েছে ইরানের। কারণ যা-ই হোক না কেন, ইসরায়েল ও তার মিত্ররা এটিকে তেহরানের একটি বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখে। তারা বিশ্বে বিচ্ছিন্ন। আন্তর্জাতিক স্তরে অল্প কিছু বন্ধু থাকলেও তাদের প্রযুক্তি নিকৃষ্ট।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের কথিত ‘আত্মরক্ষার অধিকার’-এর কথা বলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় ইসরায়েলকে কেবল সমর্থনই করেনি, এখন লেবাননে তাদের পদক্ষেপের জন্য পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদি ইসরায়েলি আগ্রাসন ইরানকে জড়িত করে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই দখলদার ইসরায়েলের পাশে থেকে লড়াই করবে।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস—উভয়েই ইসরায়েলকে সমর্থন করেন। এমনকি দেশটি যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার পরও। ইসরায়েলপন্থী লবি মার্কিন রাজনৈতিক জীবনে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ইসরায়েল প্রশ্নাতীতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের সমর্থন উপভোগ করে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১২ মাসের মধ্যে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের দখলদারত্ব শেষ করার জন্য একটি সঠিক সময়সীমা বেঁধে প্রস্তাব পাস করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বারা আনা গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইছেন। মানবাধিকার সংস্থা বিতসেলেম, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল—সবাই বলেছে, ইসরায়েল বর্ণবাদের অপরাধে দোষী, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সমান। ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন স্পষ্টত সর্বস্তরে বাড়ছে এবং গাজা (ও লেবাননে) যুদ্ধবিরতি ছাড়া এবং বাস্তবে ও প্রতীকীভাবে ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি ছাড়া এটি কমার সম্ভাবনা নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরানপন্থীদের একটি অ্যাকাউন্ট আছে, যার অনুসারী কয়েক হাজার। তারা বলছে, তেহরান ও তার ছায়াযোদ্ধারা ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিকল্পনার সম্ভাব্য ঝুঁকি ও প্রতিক্রিয়া বুঝতে ভুল করেছে। এর ফলে স্বল্প মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদের কাছ থেকে ইরানের জন্য সত্যিকারের হুমকি রয়েছে। যা-ই হোক, ইরান হামাস বা হিজবুল্লাহ নয় এবং আধুনিক অস্ত্র, জনশক্তি ও সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত। সেই সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের সমর্থন রয়েছে। ইসরায়েল যদি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ঝুঁকি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে এক কিয়ামতের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া ও চীন উভয়ই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মর্যাদা ও সুবিধা বাড়িয়েছে। উভয়েই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নীতির বারবার সমালোচনা করেছে, যা ইসরায়েলের হাতকে শক্তিশালী করেছে। মজার বিষয় হলো, মস্কো ও বেইজিং যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নেতৃত্ব দিচ্ছে। চীনই একমাত্র পেরেছিল হামাস ও ফাতাহর মধ্যে একটি সন্ধির ব্যবস্থা করতে। যা-ই হোক, পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ইউক্রেন ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করতে ইরান ও তার ছায়াযোদ্ধাদের সমর্থন করছে রাশিয়া ও চীন। ওয়াশিংটন অবশ্য রাশিয়া ও চীনের প্রভাব খর্ব করতে বদ্ধপরিকর।
আরব বিশ্বে ২০২০ সালের আব্রাহাম অ্যাকর্ড সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও সৌদি আরবের সঙ্গে তা করতে পারেনি। ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান স্পষ্ট করেছেন যে ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। মার্কিন শাসকেরা ভেবে নিয়েছিলেন, বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তি এবং একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। পাশাপাশি ইরান ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে একটি জোট গঠন সম্ভব হবে। কিন্তু সে আশা ভেস্তে গেছে।
প্রায় সম্পূর্ণরূপে মার্কিন আর্থিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সমর্থন এবং মধ্যপ্রাচ্যে তার শক্তিশালী প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের কারণে স্বল্পমেয়াদি বিজয় সত্ত্বেও ইসরায়েলকে নিঃসন্দেহে শিগগির বা পরে ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকারকে মেনে নিতে হবে। ফিলিস্তিনিরা গ্লোবাল সাউথে অপ্রতিরোধ্যভাবে সমর্থন পাচ্ছে। গ্লোবাল নর্থেও তার জন্য পটভূমি তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের গণহত্যায় অযোগ্য সমর্থন দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সদিচ্ছা ও খ্যাতি হারিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের সবার জন্য হুমকির মধ্যে ইসরায়েল অন্তর্ভুক্ত। এটাই বড় বাস্তব। বর্তমান আগ্রাসী যুদ্ধের দ্বারা ইসরায়েল তা কমাতে পারবে না।
(মিডল ইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
শের আলি বুখারি, পাকিস্তানি সাংবাদিক
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪