Ajker Patrika

রেললাইনে বিপজ্জনক বাজার

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১০: ১৩
রেললাইনে বিপজ্জনক বাজার

ময়মনসিংহে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের ওপর বসছে বাজার। এতে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে উদাসীন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বাজার ঘিরে রয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগ।

সদর উপজেলায় রেললাইনের ওপর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব বাজার বসে। নগরীর সানকিপাড়া রেল ক্রসিং, মিন্টু কলেজ, বউ বাজার, আমিন বাজার, সুতিয়াখালীসহ কয়েকটি স্থানে বাজারগুলো বসানো হয়। এসব বাজারে ঝুঁকি নিয়েই ক্রেতা-বিক্রেতা পণ্য কেনাবেচা করছেন। এতে বড় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির শঙ্কা বাড়ছে।

সানকিপাড়া বাজারে আসা হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে এসে মাঝে মধ্যে বিপাকে পড়তে হয় ট্রেনের জন্য। একটু পরপরই ট্রেন আসে। তখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়।’

পণ্য কিনতে আসা লামিয়া জান্নাত নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, সানকিপাড়া বাজারের কোনো নিয়মনীতি নাই। যত্রতত্র বাজার বসায় ক্রেতা-বিক্রেতারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

সানকিপাড়া রেলক্রসিং বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রাজন মিয়া জানান, তিন চার বছর ধরে ব্যবসা করছেন তিনি। এ সময় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ট্রেন আসলে তড়িঘড়ি করে উঠতে হয়।

রেললাইনের পাশে ঝুঁকি নিয়েই ৭-৮ বছর ধরে ব্যবসা করছেন জালাল উদ্দিন নামে এক মুদি ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বাজারে বসলেই ব্যবসা হোক আর না হোক ১৫০ টাকার মতো অতিরিক্ত খরচ করতে হয়। বাজার কমিটি, ইজারাদার, ডিফেন্স পার্টি এবং নৈশপ্রহরীকে টাকা দিতে হয়।

মনির হোসেন আরেকজন বলেন, ‘ট্রেন আসলে দাঁড়িয়ে যাই, তাই সমস্যা হয় না। জায়গা স্বল্পতার কারণে অন্য কোথাও বসার সুযোগ নেই। তাই জীবন জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে বসতে হচ্ছে।’

মোজাফফর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রতিদিন ৭০ টাকা দিতে হয়। এর মধ্যে ময়লা ফেলার জন্য দিতে হয় ১০ টাকা। ট্রেন আসলে ছাতা গুটিয়ে ফেলি।’

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা দিন অনেক ট্রেন যাওয়া-আসা করে। ব্যবসায়ীদের ট্রেন আসার সময় মুখস্থ। তখন তাঁরা সতর্ক হয়।’

সানকিপাড়া রেলক্রসিং বাজার ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. জলিল জানান, প্রতিদিন মূল ইজারাদার ইমনকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে বাকি ৪-৫ শ টাকা তাঁর আয় থাকে। বাজারে গড়ে ৪ শতাধিক দোকান আছে। দোকান প্রতি দৈনিক ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা ইজারা নেওয়া হয়। রেললাইনের পাশে যারা বসে, তাঁদের কাছ থেকে ১০ টাকা নেওয়া হয়। ট্রেন আসলে ব্যবসায়ীদের বলে দেওয়া হলে তাঁরা সতর্ক হয়।

ইজারাদার আজিজুর রহমান ইমন বলেন, ‘এক বছরের জন্য ১৩ লাখ টাকায় সানকিপাড়া বাজার ইজারা নিয়েছি। বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য লোক রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের সতর্কতার সঙ্গে পণ্য কেনাবেচার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

সানকিপাড়া রেলগেট বাজার কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল কদ্দুস বলেন, ‘বাজার থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হয় না। ঝাড়ুদার, নৈশপ্রহরী ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু টাকা তোলা হয়।’

সানকিপাড়া বাজারের রেলগেট কিপার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘১০টি ট্রেন রাতে এবং ১৪টি ট্রেন দিনে চলে। ২৪টি ট্রেন ৪৮ বার যাতায়াত করে। রেললাইনের ওপর বাজার থাকায় সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।’

ময়মনসিংহ রেল বিভাগের প্রকৌশলী শাখার সহকারী প্রকৌশলী নারায়ন সরকার প্রসাদ বলেন, ‘ময়মনসিংহে রেলের সীমানায় ৮ থেকে ১০টি বড় বড় বাজার রয়েছে। বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও পুনরায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন কারণে রেল বিভাগকে পিছিয়ে আসতে হয়। এই সমস্যা দূর করতে হলে রাজনৈতিক জোরালো হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ আসিফ হোসেন ডন বলেন, ‘রেললাইনের পাশে বাজার থাকায় সমস্যার সৃষ্টি হলেও নানা কারণে সরানো যাচ্ছে না। তবে ইজারাদারদের বলা আছে, নিয়মনীতির মধ্যে বাজার পরিচালনা করার জন্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত