Ajker Patrika

৮ মাস পর মায়ের কোলে শিশুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ১২
৮ মাস পর মায়ের কোলে শিশুটি

চার বছর বয়সী ইমরানকে অপহরণ করা হয়েছিল রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে। অপহরণকারী হিসেবে প্রতিবেশী ইসমাইল হোসেন জীবন ওরফে আকাশকে সন্দেহ করছিলেন ইমরানের পরিবারের সদস্যরা। ইমরানের মা রাশিদা বেগম আকাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইমরানকে তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁর অনৈতিক প্রস্তাব মেনে নিলে ছেলেকে রাশিদার কোলে ফিরিয়ে দেবেন বলেও জানান ইসমাইল।

তাতে রাজি না হওয়ায় আট মাস ধরে ছেলের খোঁজও পাচ্ছিলেন না রাশিদা। কিন্তু পরিবারে শিক্ষিত কেউ না থাকায় অসহায় এই মা আইনি পদক্ষেপও নিতে পারছিলেন না। সম্প্রতি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারীর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি)। তাদের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা থেকে ইসমাইলকে গ্রেপ্তারের পর নেত্রকোনা থেকে ইমরানকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ডিবি দক্ষিণ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মর্মস্পর্শী এ ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আশরাফ হোসেন।

আশরাফ হোসেন জানান, উদ্ধারের পর ইমরান শুরুতে তার মা কিংবা পরিবারের কাউকেই চিনতে পারছিল না। একেক সময় সে নিজের একেক নাম বলছিল। এ সময় ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেন রাশিদা। একপর্যায়ে মাকে চিনতে পেরে ইমরানও কাঁদতে শুরু করলে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ডিসি আশরাফ আরও জানান, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শিশুসন্তানকে নিয়ে দক্ষিণখানে মা-বাবার ভাড়া বাসায় ওঠেন রাশিদা। পাশের বাসার বাসিন্দা ইসমাইলের নজর পড়ে রাশিদার দিকে। রাশিদাকে বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েও সাড়া পাননি ইসমাইল। তাকে বশে আনতে চিপস-চকলেট কিনে দিয়ে ইমরানের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২১ সালের ১৫ জুন ইমরানকে অপহরণ করে নিয়ে যান ইসমাইল।

অনেক খুঁজেও ছেলেকে না পেয়ে ইসমাইলকে সন্দেহ করেন রাশিদা। ইসমাইল জানান, ইমরানকে তিনি কাগজপত্র করে বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে তাঁর প্রস্তাবে রাজি হলে ইমরানকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। কিন্তু রাশিদা রাজি না হওয়ায় তাঁকে গালিগালাজও করেন ইসমাইল। এভাবেই কেটে যায় আটটি মাস। রাশিদার কান্না শুনেও মন গলেনি ইসমাইলের। পরিবারে শিক্ষিত কেউ না থাকায় আইনি পদক্ষেপের পরামর্শও পাচ্ছিলেন না রাশিদা। তাই এ নিয়ে জিডি-মামলা কিছুই করতে পারেননি।

ডিসি আশরাফ জানান, বিষয়টি জানার পর তাঁরা ছায়া তদন্ত করে জানতে পারেন ইসমাইল একজন প্রতারক। একেক সময় একেক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেন তিনি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিশেষ অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার যাত্রাবাড়ী গ্রাম থেকে ইমরানকে উদ্ধার করা হয়। ইসমাইলের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত