Ajker Patrika

নিত্যপণ্যে নাভিশ্বাস ভোক্তার

শাকিলা ববি, সিলেট
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ১০
Thumbnail image

‘চাল, ডাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, তেল, সাবান যেটা কিনত যাই, ওটারওই দাম বাড়াইল। দুই দিন বাদে বাদে তাঁরা দাম বাড়াইন। এক সপ্তাহর মধ্যে তিন দরে আলু কিনছি। একদিন ১২ টেকা, একদিন ১৫ টেকা, একদিন ২০ টেকা। দাম বাড়ছে কেনে দোকানদাররে জিগাইলে কইন, ইটা মুন্সিগঞ্জি আলু, ইটা রংপুরি আলু এর লাগি দাম বাড়ছে। পেঁয়াজ কিনতা গেলে দেশি, এলসি, কাটা পেঁয়াজ কইয়া দাম বেশি রাখে। একেকদিন একেক দাম। আমরা তো খাইয়া বাঁচা লাগব। এর লাগি বাধ্য হইয়া দাম দিয়া কিনা লাগে।’ গতকাল বুধবার সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় বাজার করতে এসে অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলেন শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাজার ঘুরে তাঁর ক্ষোভের কারণ জানা গেল। রমজান মাস আসতে এখনো অনেক দেরি। কিন্তু এরই মধ্যে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। শাক-সবজি, চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, মাছ, গরুর মাংস, ডিম মুরগিসহ সব নিত্যপণ্যের দামই বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।

নিয়ন্ত্রণহীন বাজারের এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে ভোক্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন।

সিলেটের বিভিন্ন বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ প্রতি কেজি দেশি ৩৫ টাকা, আমদানি করা ৪৮ টাকা, রসুন দেশি ৫০ টাকা, আমদানি করা ১২০ টাকা, পামওয়েল লিটার ১৪০ টাকা, সয়াবিন ১৫৫ টাকা (প্যাকেট), বোতল ১৬৫ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, আলু ১৫ টাকা, আদা ৮০ টাকা, আটা প্রতি কেজি প্যাকেট ৪৮ টাকা, খোলা আটা প্রতি কেজি ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এভাবে পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ার বিষয়ে বাসদ সিলেট জেলার সদস্য প্রণব জ্যোতি পাল বলেন, ‘সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাগলা ঘোড়া এখন নিয়ন্ত্রণহীন। আর এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবন সংকট থেকে গভীর সংকটে পতিত হচ্ছে। অন্য দিকে সরকার মূল্যবৃদ্ধির লাগাম ধরে রাখতে না পেরে চরম ব্যর্থতার নজির সৃষ্টি করেছে। সবকিছুর পেছনে আমাদের নীতি-আদর্শহীন, মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ে কেউ তেমন একটা বলতে চান না। তাহলে হয়তো নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। অথবা ব্যবসায়ীদের প্রভাব এত বেশি যে, তারা এখন সরকারের নীতিনির্ধারক, গণমাধ্যম ও অর্থনীতিবিদের তাদের জালে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে।’

তিনি বলেন, দেশের মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা একবার পেঁয়াজ, একবার চাল, একবার সয়াবিন তেল, একবার আলুর দাম বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে মানুষের পকেট কাটছে। দেশ রসাতলে যাক, সাধারণ মানুষ নিত্য ভোগ্যপণ্য মূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ট হোক-এদিকে মোটেও সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই। বরং বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নিজের ও সরকারের অসহায়ত্ব প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট শাখার সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি। প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। রমজানকে সামনে রেখে কেউ জন্য পণ্য মজুত করে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে না পারেন সেদিকে খেয়াল রাখছি। পাইকারদের ক্রয়মূল্যের ভাউচার চেক করছি। কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে ব্যবসায়ীদের বলে দিচ্ছি। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করলে জরিমানা করা হচ্ছে।’

এ সরকারি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে এই বাজারমূল্য নির্ধারণে সিলেটের পাইকারি ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো হাত নেই। কারণ সিলেটে উৎপাদন কম, তাই অন্য জায়গা থেকে পাইকাররা নিত্যপণ্য আনেন। তাই দাম নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে হবে ও এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভোক্তাদের অধিকার যেখানে ক্ষুণ্ন হবে আমরা সেখানেই অভিযান চালাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত