Ajker Patrika

ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে দুই সিটির ২২ ওয়ার্ড

আবির হাকিম, ঢাকা
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ০৯: ২০
ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে দুই সিটির ২২ ওয়ার্ড

আসন্ন বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রাজধানীর দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের ১১০ স্থানে ডেঙ্গুর প্রকৃত অবস্থা নিয়ে মাঠপর্যায়ে চালানো প্রাক্-মৌসুম এডিস সার্ভেতে এ আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত এ জরিপে উত্তর সিটির ৬৩টি এবং দক্ষিণ সিটির ৯৬টি বাড়িতে এডিস মশা অতিরিক্ত মাত্রায় চিহ্নিত হয়েছে।

জরিপে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২২টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন মাত্রার ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুই সিটি করপোরেশন নানা উদ্যোগ নিলেও তা যথেষ্ট ও যুগোপযোগী নয় বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা আর বাকি ৫ দশমিক ১ শতাংশ এডিস মশা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে নির্মাণাধীন ভবনে, যা ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ, বহুতল ভবনে ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, একক ভবনসমূহে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ, সেমিপাকা/বস্তি এলাকায় ৯ দশমিক এবং পরিত্যক্ত (ফাঁকা) জমিসমূহে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) উচ্চমাত্রার ডেঙ্গু ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো পুরান ঢাকার মদন মোহন বসাক রোড ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড। দয়াগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ৪০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ডিস্ট্রিলারি রোড ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড। মশার ঘনত্ব পরিমাপক ব্রুটো ইনডেক্স অনুযায়ী এসব এলাকায় মশার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি।

মধ্যম মাত্রার ডেঙ্গু ঝুঁকিতে থাকা ডিএসসিসির ওয়ার্ডগুলো হলো রাজারবাগ ও চামেলিবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত ১৩ নম্বর ওয়ার্ড; ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা এবং পূর্ব রায়েরবাজার নিয়ে গঠিত ১৫ নম্বর ওয়ার্ড; শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলামোটর এলাকা নিয়ে গঠিত ২১ নম্বর ওয়ার্ড এবং লালবাগ ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। মধ্যম মাত্রার ডেঙ্গু ঝুঁকিতে থাকা ডিএনসিসির ওয়ার্ডগুলো হলো পল্লবী ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ৬ নম্বর ওয়ার্ড, মহাখালী ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ২০ নম্বর ওয়ার্ড এবং লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ড। ব্রুটো ইনডেক্স অনুযায়ী, এসব এলাকায় মশার ঘনত্ব ১০ থেকে ১৯ শতাংশ।

এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ আরও ওয়ার্ডগুলো হলো ডিএসসিসির ৮, ১৪, ২০, ৩৫, ৪৬ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড এবং ডিএনসিসির ১০, ১৩, ১৬, ২৭, ৩০ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড। ব্রুটো ইনডেক্স অনুযায়ী, এসব এলাকায় মশার ঘনত্ব ১০ শতাংশ।

এদিকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসির ঝুঁকিপূর্ণ সাতটি ওয়ার্ডে আজ মঙ্গলবার থেকে ১২ মে পর্যন্ত বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এ বিষয়ে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। দ্বিগুণ জনবল নিয়ে আমরা তিন দিনব্যাপী বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করব।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেসব এলাকায় মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে, সেসব এলাকার ড্রেন ও জলাশয়ে আবারও গাপ্পি মাছ ছাড়া হবে। এর আগেও এমন উদ্যোগ নিয়েছিল দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুব কম সময়ের মধ্যে আমাদের সব খালে গাপ্পি মাছ ছাড়ার কাজ শেষ হবে, এতে মশার লার্ভা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ ছাড়া আলাদা করে নির্মাণাধীন ভবন এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থান তদারকি করছি।’

গবেষণানির্ভর দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প ছাড়া ডেঙ্গু নির্মূল করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিবছর মৌসুমের শুরুতে এসে উদ্যোগ নিয়ে কোনো লাভ হবে না। ডেঙ্গু এবং মশাবাহিত অন্যান্য রোগ নির্মূল করতে হলে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত