Ajker Patrika

পঙ্কজের সাকুলেন্ট প্যারাডাইস

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
পঙ্কজের সাকুলেন্ট প্যারাডাইস

শখ করে বন্ধুদের নিয়ে কলেজের পাশে পৌষ মেলায় গাছের দোকান দিয়েছিলেন তিনি। পুঁজি ছিল মায়ের কাছ থেকে নেওয়া মাত্র ৩০০ টাকা। মেলা শেষে হিসাব করে দেখলেন, লাভ হয়েছে ২০০ টাকা। আর কিছু গাছ থেকে গেছে অবিক্রীত। তখন তাঁর বাগান করার চিন্তা মাথায় আসে। এরপর যত দিন গেছে, ততই গাছের সংগ্রহ বেড়েছে। এখন তাঁর বাগানের এক বিঘা জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে সাকুলেন্ট রাজ্য।

বাগানের পলি হাউসের নিচে কিছুটা উঁচু চৌকির ওপর তিনি চাষ করেছেন প্রায় ৩০০ প্রজাতির ৪০ হাজারের বেশি সাকুলেন্ট! এ সংখ্যার কথা শুনে সাকুলেন্ট বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো চমকে ওঠেন। তাই হয়তো নিজের বাগানের নাম রেখেছেন ‘সাকুলেন্ট প্যারাডাইস’।

এই স্বপ্নবাজ তরুণের নাম পঙ্কজ কুমার মহন্ত। বাড়ি মোল্লাপাড়া হাট, পুঠিয়া, রাজশাহী। সেখানেই বাবা, মা আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস। পঙ্কজ রাজশাহী কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

সাকুলেন্ট এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ, যা পানি সংগ্রহ করে জমা রাখে শরীরে। এ জন্য তাদের পাতা বেশ পুরু ও রসাল হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সাকুলেন্ট প্রজাতির উদ্ভিদের জন্য বিখ্যাত। হালে আমাদের দেশে বাসাবাড়ির সজ্জার জন্য কিংবা বাগানের জন্য এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ফলে পঙ্কজের সাকুলেন্ট বাগানের এখন পৌষ মাস। শখ পূরণের পাশাপাশি এ বাগান থেকে প্রতি মাসে তিনি আয় করছেন ৫০ হাজার টাকা। অন্যদিকে পুরো বাগানের গাছের দাম ২০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগে।সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা দামের গাছ আছে তাঁর বাগানে। আর সাকুলেন্টের দাম ২৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা।

পঙ্কজের দাবি, এককভাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সাকুলেন্ট বাগান তাঁর। এটি যে শুধু দাবি নয়, তার পক্ষে অসংখ্য প্রমাণও মেলে। বিভূতি সরকার কিংবা ইয়াকুব হোসেনের মতো সাকুলেন্ট সংগ্রাহক এবং শাহাদাত ফেরদৌস ও ফেরদৌসী আলমের মতো বিখ্যাত গাছ বিক্রেতারাও পঙ্কজের বাগানকে ‘সবচেয়ে বড়’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে পঙ্কজ তাঁর বাগানে শুধু সাকুলেন্ট রাখেননি, সেখানে আছে প্রায় দেড় শ প্রজাতির ১০ হাজার ক্যাকটাস।

শুধু গাছ বিক্রিই নয়; এর যত্নআত্তি, সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শও দেন তিনি। সে জন্য সাকুলেন্ট প্যারাডাইস নামে একটি ফেসবুকে পেজও আছে তাঁর। আবার সাকুলেন্ট লাভারস অব বাংলাদেশ নামে একটি গ্রুপ আছে। নতুনেরা যেন কোনো সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য নিজের নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলও আছে তাঁর। বলা যায়, পঙ্কজের পুরো ব্যবসাই অনলাইনভিত্তিক। তিনি ভারত, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সাকুলেন্ট সংগ্রহের পর দেশে বংশ বৃদ্ধি করে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করেন। ফলে কমছে আমদানিনির্ভরতা।

বাগান নিয়ে নিজের আনন্দ-বেদনার গল্প জানতে চাইলে পঙ্কজ জানান, বাগানে কাজ করে মানসিক প্রশান্তি লাভ করেন। শুরুর দিকে অনেকে বলেছেন, এগুলো করে কী হবে, চাকরি করো। পরিবারের সহযোগিতার হাতও প্রথম দিকে তেমন শক্ত ছিল না। তবে এখন পরিবারের সবাই তাঁকে সহযোগিতা করেন। বাবা ও ছোট ভাই বাগানের কাজে সহায়তা করেন। 

লেখক: সহকারী ব্যবস্থাপক, সেলস অপারেশনস, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত