Ajker Patrika

ভেজাল কীটনাশক, বীজ ও সার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
ভেজাল কীটনাশক, বীজ ও সার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

নীলফামারীর সৈয়দপুরে ভেজাল বীজ, সার ও কীটনাশকের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকেরা। তাঁরা বলছেন, চকচকে মোড়ক দেখে বাড়তি দামে বীজ কিনছেন, কিন্তু বেশির ভাগ বীজ থেকে চারা গজাচ্ছে না। সেই সঙ্গে বাজার থেকে কেনা কীটনাশক ও সার জমিতে দফায় দফায় প্রয়োগ করেও মিলছে না সুফল।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কৃষি অফিসের তদারকি না থাকায় নিম্নমানের বীজ আর ভেজাল সার ও কীটনাশকে ছেয়ে গেছে বাজার। তবে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ না করে কৃষকেরা দোকানদারদের কাছ থেকে সার, বীজ ও কীটনাশক কেনেন। তাঁরা অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৬টি শর্তে সার, কীটনাশক ও বীজ বিক্রিতে দোকানদারদের লাইসেন্স দেওয়া হয়। উপজেলায় বিসিআইসি ও বিএডিসি মিলিয়ে বীজের ১৩টি, সারের ২৭ ও কীটনাশকের ২১০টি লাইসেন্সধারী দোকান রয়েছে। এর বাইরে লাইসেন্স ছাড়া দোকান আছে প্রায় ৩০০টি।

বিভিন্ন হাটবাজারের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি সংস্থার বীজের পাশাপাশি বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানির বীজ বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানের বীজ ও কীটনাশক বিক্রি করা হচ্ছে, যাদের নেই সরকারি বীজ প্রত্যয়নকারী সংস্থার সনদ। দোকানিরাও নিজের মতো করে বীজ উদ্ভাবন করে তা চমকপ্রদ মোড়কে বিক্রি করছেন।

বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলি গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় ঢেলাপীর হাটের একটি দোকান থেকে নামী কোম্পানির সবজির বীজ ১৪০ টাকায় কিনেছিলাম। এরপর দোকানদারের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক তিন দিন ভিজিয়ে রাখি। সেই সঙ্গে দুই দিন জাগ দিয়ে রাখি যেন কোনো বাতাস না ঢুকে। এসব করেও দেখি অধিকাংশ বীজ থেকে চারা গজাচ্ছে না। মাত্র ২৫ ভাগ বীজ থেকে চারা গজিয়েছে। চারা না গজানোয় আবার নতুন করে 
বীজ কিনতে হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েও প্রতিকার পাইনি।’

খাতামধুপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের হাসান আলী বলেন, ‘বাজারের প্রায় সব কীটনাশক ভেজাল। কয়েক দিন আগে বেগুনের পোকা মারার জন্য কীটনাশক কিনে জমিতে প্রয়োগ করি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। কীটনাশক কিনে টাকা খরচ হয়, কিন্তু কোনো উপকারে আসে না। আমরা ভেজাল কীটনাশকের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছি।’

উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, ভালো ফলনের জন্য বাজার থেকে সার কিনে প্রতারিত হয়েছেন। জমিতে সার দেওয়ার পরও কোনো সুফল পাননি।

এ নিয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নীলফামারীর সহকারী পরিচালক শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে জানান, কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ভেজাল বীজ, কীটনাশক ও সারের ব্যাপারে প্রয়োজনে বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনা করা হবে।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মমতা সাহা বলেন, ‘কেউ যদি ভেজাল, নিম্নমানের বীজ ও কীটনাশক বিক্রি করেন, সেটি আমাদের অগোচরেই করে থাকেন। আর কৃষকেরাও আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে দোকানদারদের কাছ থেকে বীজ, সার ও কীটনাশক কেনেন।’

বাজার থেকে কেনা বীজ থেকে চারা না গজানোর বিষয়ে মমতা জানান, এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত