Ajker Patrika

স্বপ্ন চুরমার ৩০০ লোকের

সিলেট প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ১০
Thumbnail image

স্বপ্ন ছিল ইউরোপের দেশ রোমানিয়া যাওয়ার। সেখানে উন্নত জীবনযাপনের পাশাপাশি দেশে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাবেন। সেই টাকায় সংসারে ফিরবে সচ্ছলতা।

কিন্তু এক প্রতারকের ফাঁদে পড়ে সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে সিলেটের ৩০০ ব্যক্তির। তাঁদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন আমিন রহমান ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমান।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মাহবুবুর রহমান মঞ্জু রোমানিয়া যাওয়ার জন্য জমি বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা দেন আমিন রহমান ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমানকে। তাঁকে বলা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর রোমানিয়ার ফ্লাইট। এ জন্য তিনি আগের দিন ঢাকায় যান। কিন্তু ওই দিন বিকেল চারটা থেকে আমিনের মুঠোফোন বন্ধ পান। এরপর অনেক চেষ্টা করেও তাঁর মুঠোফোনে সংযোগ পাননি। তখন তিনি বুঝতে পারেন, টাকা নিয়ে আমিন পালিয়ে গেছেন। পরে হতাশ হয়ে সিলেট ফিরে আসেন। মঞ্জু বলেন, ‘বাড়ির জায়গা বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা দিয়েছি রোমানিয়া যাওয়ার জন্য। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি এই প্রতারকের কারণে।’

আমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গোটারগ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিনও। তিনি বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা আমিনের হাতে তুলে দিই। আমাকে ওয়ার্ক পারমিটের কাগজ দেখিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তিও করেন আমিন। আগামী ৩ মার্চ আমার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিচিত একজনের মাধ্যমে ভারতে রোমানিয়া অ্যাম্বাসিতে ভিসার কপি পাঠালে সেখান থেকে জানানো হয় ওই ভিসা নকল।’

রুহুল আমিন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমিন রহমান ট্রাভেলসের কর্মকর্তা রাজিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ভিসা সঠিক আছে। অ্যাম্বাসি অনেক সময় আসল ভিসাও জাল বলে থাকে। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আমিনের মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে বুঝতে পারি আমি প্রতারিত হয়েছি।’

সিলেটে কানাডা কিংবা রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে মঞ্জু ও রুহুলের মতো প্রায় তিন শ ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন আমিন রহমান ট্রাভেলসের মালিক। প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি ১ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এ অভিযোগে তিনজনকে আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মানবপাচার ও প্রতারণা মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। গতকাল রোববার মামলা নথিভুক্ত করে পুলিশ।

জানা গেছে, সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে হক সুপার মার্কেটে অবস্থিত ‘আমিন রহমান ট্রাভেলস’। ৯০ দিনের মধ্যে রোমানিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় ‘আমিন রহমান ট্রাভেলস’। ওই বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারিতরা ট্রাভেলসে যোগাযোগ করেন।

তখন ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমান জানান, রোমানিয়ায় যেতে হলে ৬ লাখ টাকা লাগবে। প্রথমে বুকিং মানি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ও ওয়ার্ক পারমিট আসার পর দিতে হবে আরও ৫০ হাজার টাকা। বাকি ৫ লাখ দিতে হবে ভিসা হওয়ার পর।

আমিনের কথামতো রোমানিয়ায় যেতে আগ্রহীরা তাঁর সঙ্গে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে টাকা দেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রোমানিয়ায় ফ্লাইট দেওয়া শুরুর কথা থাকলেও ওই দিন বিকেল চারটা থেকে মুঠোফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেন তিনি। পরে প্রতারিত অনেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁদের পাসপোর্টে লাগানো ভিসাও ছিল জাল। এ ছাড়া অনেককে ভিসা হওয়ার কথা বললেও তাদের পাসপোর্ট ফেরত দেননি আমিন।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ‘১৮ জন থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে তাঁদের মধ্য থেকে ফখরুল ইসলাম নামে একজন বাদী হয়ে আমিন রহমানকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত