Ajker Patrika

যেখানে জবাবদিহি করতে হয় না!

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭: ১৯
যেখানে জবাবদিহি করতে হয় না!

আমাদের দেশে যে গ্রামীণ সড়কব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বইয়ে পড়া সেই গ্রাম্য মেঠোপথ আর সেভাবে দেখা যায় না। শহর থেকে যেকোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন সহজে যাওয়া যায়। কারণ দেশের অধিকাংশ এলাকার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক পরিণত হয়েছে ‘পাকা সড়কে’। এত উন্নয়নের পরেও মাঝেমধ্যে কিছু সংবাদ আমাদের ধন্দে ফেলে দেয়। ঘটনাগুলো মেনে নেওয়ার মতো নয়। আবার মেনে না নিয়েও কোনো উপায় থাকে না। যেমন সেতু আছে, কিন্তু তার দুই পাশের সংযোগ সড়ক নেই। আবার সড়ক আছে, কিন্তু সেতু নেই। তখন মনে হয় এত উন্নয়ন তাহলে হলো কোথায়? এ রকম বাস্তবতায় বলতে বাধ্য হতে হয়—অদ্ভুত এ দেশের অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা।

এ দেশে কয়েক সেকেন্ডে বা মিনিটে ইন্টারনেটের সুবাদে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, কিন্তু সড়ক থাকার পরেও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা যায় না। সড়কে চলাচল করতে ভোগান্তির শেষ নেই। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের তিন কিলোমিটার সড়কটি যেন আমাদের এ রকমই বার্তা দিচ্ছে। কারণ, এখানকার করজোনা বাজার থেকে নয়াচর ভায়া হিজুলিয়া খালপাড় পর্যন্ত সড়কে একটু বৃষ্টি হলেই পুরোটা পানি-কাদায় একাকার হয়ে যায়। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

আরও অবাক করা বিষয়, ওই তিন কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু করার জন্য ১১ বছর আগে ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছিল। সেই ভিত্তিপ্রস্তর করেন তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য। কাজটি ভিত্তিপ্রস্তরেই আটকে আছে, একচুল পরিমাণ এগোয়নি। এটা কীভাবে সম্ভব যে ১১ বছর পরেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি! আর গ্রামবাসীর দুঃখ-কষ্টেরও লাঘব হয়নি। এই সড়ক দিয়ে ১৬ গ্রামের লোকজনসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। আর সড়কটির কাজ হওয়ার কথা ছিল জেলা পরিষদের মাধ্যমে এবং তা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল এলজিইডির।

সড়কের ভিত্তিপ্রস্তর হলে, সেটার জন্য তো আগে প্রকল্প বরাদ্দ হওয়ার কথা। সেই প্রকল্পের টাকা কোথায় গেল? কারাইবা সেই বরাদ্দের টাকা নয়ছয় করেছে? নাকি প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ না করেই ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছে? এই প্রশ্নগুলো উত্থাপন না করে কোনোভাবে আসল ঘটনাটি জানা যাবে না যে কেন ১১ বছর পরেও সড়কটির কাজ হলো না।জবাবদিহি করার তালিকায় পড়েন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ও এলজিইডির কর্তাব্যক্তিরা। একই সঙ্গে এসব দেখভালের দায়িত্ব তো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের ওপরও বর্তায়। কিন্তু সঠিক তদারকির অভাবে অনেক সময় সরকারি বাজেট যে জলে যায়, এ ঘটনা তার বড় প্রমাণ।

সরকারি উদ্যোগে দেশে যে উন্নয়নের জন্য কাজ হচ্ছে, সেটা মিথ্যা নয়। কিন্তু সেই কাজগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে কি না, সেটা কে দেখবে? কারও কাছে জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকলে এ রকম ঘটনা অবশ্য ঘটারই কথা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত