Ajker Patrika

স্বপ্ন যখন সবার জন্য শহর গড়া

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২২, ১০: ২৯
স্বপ্ন যখন সবার জন্য শহর গড়া

ঘিঞ্জি পরিবেশে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সারি সারি ঘরবাড়ি। তার মাঝেই ছোট্ট পরিপাটি একটি পাঠাগার। নাম ‘শহীদ রুমি স্মৃতি পাঠাগার’। রাজধানীর কড়াইল বস্তির এই পাঠাগারে প্রতি শুক্র ও শনিবার জড়ো হয় শিশু, কিশোর, কিশোরী আর নারীরা। কেউ আঁকে ছবি, কেউ লেখে গল্প, কেউবা চিঠি। চলে আড্ডা, গল্প বলা, আবৃত্তি আর গানের আসর। তবে যে যা-ই করুক না কেন, সবার কাজের মধ্যে থাকে একটি আকুতি, একটি চাওয়া, একটি স্বপ্ন। এই পুরো আয়োজনের নেপথ্যে যিনি কাজ করছেন, তিনি হলেন সাদিয়া শারমিন। ২০১৬ সাল থেকে কড়াইল বস্তিতে সহযোগিতামূলক গবেষণার কাজ করছেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক শেষে জার্মানির হ্যাবিট্যাট ফোরাম বার্লিনের গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে শিক্ষকতা করছেন সাদিয়া শারমিন। স্থাপত্যের শিক্ষার্থী হলেও কখনোই প্রথাগত স্থপতি হওয়ার পথে হাঁটেননি তিনি। আজকের পত্রিকাকে সাদিয়া বলেন, ‘প্রথাগত স্থাপত্য অনুশীলনের বাইরে গিয়ে আমরা নতুনভাবে ভাবতে চাইছি। আমরা ইন্টারডিসিপ্লিনারি প্র্যাকটিস গড়ে তুলতে চাই, যেন আমরা যে কাজটা করব, সেখানে স্থপতি ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সম্পৃক্ততা থাকে।’

এই আগ্রহের জায়গা থেকে ‘ঢাকা মেমোরি’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন সাদিয়া শারমিন। এই সংগঠনের মাধ্যমে শহরকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশার কথা তুলে আনতে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মশালা পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শহীদ রুমি স্মৃতি পাঠাগারের সদস্যদের নিয়ে পাঠ কর্মশালা। এই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের শহরে লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের হাতে ‘লেটার অব দ্য সিটি’র কর্মশালায় ‘প্রতিদিনের গল্প’ বইটি তুলে দিচ্ছেন সাদিয়া শারমিনবস্তিতে বসবাসকারী নারীদের প্রতিদিনের ভোগান্তি নিয়ে ‘প্রতিদিনের গল্প’ নামের একটি বই লিখেছেন সাদিয়া শারমিন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনের গল্প বইটিকে আমরা একটি ক্রিয়েটিভ অ্যাডভোকেসি টুল হিসেবে ব্যবহার করছি। বইটিতে আমরা সরাইলে বাস করা নারীদের গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। রাস্তাঘাটে নারীদের হয়রানি, ছেলেমেয়ের পার্থক্য, যোগ্যতা প্রকাশে বাধা—এমন অনেক ঘটনা প্রতিদিন মেয়েদের জীবনে ঘটে। আসলে শুধু সরাইল বা ঢাকা নয়, আমাদের দেশের প্রতিটি শহরেরই চিত্র এটা। আমরা স্বপ্ন দেখি এই চিত্রটা বদলে দেওয়ার। এমন শহর আমরা গড়তে চাই, যেটা হবে সবার।’

শহর এলাকার বাইরে গিয়ে গ্রামাঞ্চলেও কর্মশালা পরিচালনা করছেন সাদিয়া শারমিন। কিশোরগঞ্জে পরিচালিত হচ্ছে তাঁদের ‘লাইট হাউস’ প্রকল্প। এর লক্ষ্য নারীর প্রতি বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়া।

সাদিয়া শারমিন জানিয়েছেন, একজন স্থপতি হয়ে নিজের ধারণা চাপিয়ে না দিয়ে তিনি চেষ্টা করছেন বসবাসের এলাকা ঘিরে সবার প্রত্যাশার কথাগুলো তুলে আনতে। তাঁর প্রজেক্টে কেউ বলেছেন, তিনি তাঁর শহরে স্বাধীনভাবে ঘুরতে চান, কেউ বলেছেন তিনি মানসম্মত বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট চান, কেউ বলেছেন তিনি সবুজে ঘেরা শহর চান। এই কথাগুলোকেই সাদিয়া শারমিন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে চান। সাদিয়া শারমিন বলেন, ‘আমরা জানি, এর কোনোটাই রাতারাতি হয়ে যাবে না। এর জন্য সময় দরকার। একটু একটু করে আমাদের শহরকে ঘিরে আমাদের প্রত্যেকের স্বপ্নগুলো পূরণ হবে, এটাই আমাদের বিশ্বাস।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত