Ajker Patrika

মাসে ৪৩ শিশুকে হত্যা, নির্যাতনের শিকার ৯৬

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১০: ৪৪
Thumbnail image

তিন বছরের এই ফুটফুটে শিশু নামিরা ফারিজ। মা আর সৎ বাবার সঙ্গে রাজধানীর দক্ষিণখানে বেড়ে উঠছিল শিশুটি। গত ১১ মে নামিরাকে বাসায় রেখে পরীক্ষা দিতে যান মা তাসলিম জাহান লিমা। বিকেলে বাসায় ফিরে নামিরাকে অসুস্থ দেখতে পান জাহান। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, খাওয়ার সময় কান্না করায় নামিরার সৎ বাবা আজহারুল ইসলাম তাকে গুরুতর আঘাত করেন। সেই আঘাতের কারণেই নামিরার প্রাণ গেছে।

অপরাধ কী, তা বুঝে ওঠার আগেই প্রতিবছর শত শত শিশু এভাবে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে হত্যার শিকার হয়েছে ৩৪৭ শিশু। প্রতি মাসে গড়ে ৪৩টি শিশু হত্যার শিকার হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর বিপরীতে মামলা হয়েছে ১৫২টি। একই সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭৭০টি শিশু। নির্যাতনের এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩৯৮টি। শিশু ও মানবাধিকারকর্মী এবং আইনজীবীরা বলছেন, সামাজিকভাবে শিশুকে কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কারণেই শিশুহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় মামলা কম হয়।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলেন, ‘আমাদের দেশে সামাজিকভাবেই শিশুদের কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ জন্য তাদের ওপর নির্যাতন বেশি হয়। ঠিক একই কারণে মামলাও কম হয়। তা ছাড়া, মামলায় দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা জটিলতার কারণে মানুষ মামলাও করতে চায় না।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর যে ৩৪৭ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের ৮০ জনের বয়সই ছয় বছরের নিচে।

আর ৬৪ জনের বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। সংস্থাটি বলছে, গত বছর হত্যার শিকার হয়েছিল ৫৯৬টি শিশু। এর মধ্যে ৬ বছরের কম বয়সী ১৪০ জন, ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু ১৩৪ জন, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ২৬৩ জন।

এমন প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ (৩ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। আর ৪ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পালিত হবে শিশু অধিকার সপ্তাহ। এ বছর শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘গড়বে শিশু সোনার দেশ, ছড়িয়ে দিয়ে আলোর রেশ’।

মানবাধিকার ও শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, বিভিন্ন দিবস পালন করা হলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সামাজিক এবং পারিবারিক ব্যবস্থা এখনো শিশুবান্ধব নয়। যার ফলে শিশু নির্যাতন কমছে না। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উই ক্যান বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, ‘আমাদের দেশে বিয়ের পরে বাচ্চা কেন হচ্ছে না, এটা নিয়ে সমাজ যতটা ভাবে, বাচ্চাটাকে কীভাবে সুন্দর সুরক্ষিত পরিবেশে বড় করবে, তা ভাবে না।’

শিশু অধিকার ফোরাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে হত্যার শিকার হয় ১৪৫ শিশু। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৬৬ জন, ২০১৮ সালে ২২৫, ২০১৭ সালে ৩৩৯, ২০১৬ সালে ২৬৫, ২০১৫ সালে ২৯২, ২০১৪ সালে ৩৬৬, ২০১৩ সালে ২১৮ ও ২০১২ সালে ২০৯টি শিশু।

পরিসংখ্যানের চেয়ে শিশু নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র আরও বেশি বলে মত দেন জিনাত আরা হক। তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা তার পরিবার এবং পরিচিতজনদের মাধ্যমেই নির্যাতনের শিকার হয়। যার ফলে শিশুটির অভিভাবকেরাও বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করে।

মিতি সানজানা বলেন, শিশু আইনে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সবাইকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয় ৷ আর শ্রম আইনে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে ধরা হয়। বয়সের ব্যাপারগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সুস্পষ্ট নয়। যে কারণে পরিসংখ্যানে অনেক তথ্য আসছে না।

এ বছর প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনে ০-১৮ বছর বয়সীদের সংখ্যা আলাদাভাবে জানানো হয়নি। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ০-১৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা ৪ কোটি ৭২ লাখ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, ‘আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ শিশু। কিন্তু তাদের নিরাপত্তাই আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না। অসহিষ্ণু সমাজে শিশুরাই বেশি নির্যাতনের শিকার।’

এ বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, ‘শিশু নির্যাতন বন্ধে আমরা সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করছি। যেকোনো অবিচার বন্ধে এবং শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা শিশু অধিকার সপ্তাহটাও পালন করছি। সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত