Ajker Patrika

শিউলি কি পারবে পরিবারের দায়িত্ব নিতে

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
শিউলি কি পারবে পরিবারের দায়িত্ব নিতে

কলেজছাত্রী শিউলি (১৭)। স্বপ্ন দেখে একদিন সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অসুস্থ মা-বাবার পাশে দাঁড়াবে। তার এই চাওয়া আর দশজনের মতো সহজ ছিল নয়। ইতিমধ্যেই সেটা বুঝে গেছে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী শিউলি রায়।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের ভ্যানচালক কমল রায়ের মেয়ে শিউলি। মাত্র আট বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে তার ডান হাত ও ডান পা ধীরে ধীরে বেঁকে যেতে থাকে। শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে শিউলি। কিন্তু প্রতিবন্ধী তকমা নিয়ে থেমে যেতে রাজি নয় সে। বিকলাঙ্গ হাত-পা নিয়েই শুরু করে জীবনযুদ্ধ। বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে শিউলি এখন বৈকুণ্ঠপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

শিউলির বাবা কমল রায় জানান, বয়স যখন আট-নয় বছর, তখন টাইফয়েড হয় শিউলির। পরে ডান হাত ও ডান পা কিছুটা বেঁকে যায়। চিকিৎসকের দ্বারস্থ হলে কিছুটা সুস্থ হয় শিউলি। কিন্তু ভ্যান চালিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খাওয়া কমল মেয়ের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন পরীক্ষা করে জানা যায়, সে কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত। সুস্থ হতে তিনি ভ্যান ও গরু বিক্রি করে চিকিৎসা করান। রোগে কাবু হয়ে এখন তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। কমল রায় বলেন, ‘ঠিকমতো ভাতই জোটে না, বাপ-বেটির চিকিৎসা কীভাবে সম্ভব?’

শিউলির মা ভারতী রানী বলেন, ‘মেয়েটা আমার ছোট থেকে সাত বছর পর্যন্ত ভালোই ছিল। হঠাৎ করে জ্বর হলো। সে সময় টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে না পেরে আমার মেয়ের একটা পা, একটা হাত প্রায় অচল হয়ে যায়।’ স্বামীর ভ্যান চালানোর আয়ে সংসার চলত একসময়। এখন স্বামীও অসুস্থ। সংসার চলবে কীভাবে—তা ভেবে ভারতী রানী শিউরে ওঠেন।

বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। প্রতিদিন ক্লাস শুরুর দুই ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে অতিকষ্টে হেঁটে কলেজে উপস্থিত হয় শিউলি। কলেজে যাওয়ার আগে কোনো দিন তার খাবার জোটে, কোনো দিন জোটে না।

অদম্য শিউলি বলে, ‘আগে ভ্যান চালিয়ে বাবা সাধ্যমতো চিকিৎসার খরচ চালিয়েছেন। এখন বাবাও অসুস্থ। আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। আগে বাবা টাকা দিতেন। তখন ভ্যানে করে কলেজে যেতাম, ক্লাস শেষে হেঁটে ফিরতাম। এখন বাবার ইনকাম নাই। ঠিকমতো খাবার পাই না। তবু আমি কলেজে যাওয়া বন্ধ করি নাই। আমি পড়াশোনা শেষ করে, চাকরি করে আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

কথা প্রসঙ্গে শিউলির শিক্ষক প্রভাষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সে খুব মেধাবী। সে ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। লিখতে দিলে তার হাত কাঁপে। তবু প্রতিদিন কষ্ট করে কলেজে আসে। আমরা কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি।’

চিরিরবন্দর উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বানু বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতে পেরে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। অসুস্থতা সত্ত্বেও তার ইচ্ছাশক্তি আমাকে বিস্মিত করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার পাশে থাকার পাশাপাশি তার সুচিকিৎসার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত