Ajker Patrika

গল্পটা আত্মহত্যা বা হত্যার নয়

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২২, ১০: ১৯
গল্পটা আত্মহত্যা বা হত্যার নয়

বিষয়টা নাজনিন আর মামুনকে নিয়ে নয়। আবার বিষয়টা ওদের দুজনকে নিয়েও হতে পারে।

এই গল্পের নায়ক-নায়িকা হতে পারে শিক্ষক-ছাত্র। আবার হতে পারে শিক্ষক-ছাত্রী। প্রথমটি নারী ও পুরুষ, দ্বিতীয়টি পুরুষ ও নারী। হতে পারে ‘বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা’, হতে পারে ‘তরুণের প্রৌঢ়া স্ত্রী’।

একটা গল্প পড়লে আমাদের মন আনন্দে ভরে যায়। ওই যে রবিঠাকুর সেই কবে বলে গেছেন, ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’। হ্যাঁ, নাজনিনের গল্পটা শেষ হয়েও শেষ হয়নি। মামুনের গল্পটাও না।

শেষ হবে কী করে? গলায় ওড়না প্যাঁচানো কোনো মৃতদেহ পেলেই কি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়? কিংবা গলায় ওড়না প্যাঁচানো মৃতদেহ দেখলেই কি বলে দেওয়া যায়, সেটা খুন? এর পরে কি ফেসবুক-পড়শীদের জীবন থেমে থাকে? যারা তাদের নিয়ে যা-তা বলে যাচ্ছিল, তারা কি এরপর চুপ হয়ে যাবে? নিজের বিশেষজ্ঞ মতামত কি আর দেবে না?

আসলে আজকের গল্পটা আত্মহত্যা বা হত্যার নয়। গল্পের প্লটে ওই খুনোখুনি বা নিজের জান নিজ হাতে নিয়ে নেওয়ার উপাদান আছে বটে, কিন্তু এরপর গল্পটা এগিয়ে যাবে অন্য পথে। সেই পথে—যে পথে কোনো সেন্সরবোর্ড বসে নেই। যদিও আক্কেল থাকলে সেন্সরবোর্ডের কোনো দরকার পড়ে না। যারা নিজেরাই বুঝতে পারে, কোনটা করা ঠিক, কোনটা নয়, কোনটা আয়ত্তের মধ্যে, কোনটা সীমানার বাইরে, তাদের জন্য সেন্সরবোর্ড মানেই বন্দিশালা। কিন্তু যাদের কাণ্ডজ্ঞান নেই, তারা এমন সব কাণ্ড করতে থাকে, যখন মনে হয়, কোথাও একটা সীমা থাকা দরকার।

আমাদের এক বৃদ্ধ মন্ত্রী কমবয়সী এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁদের ঘরে এসেছে সন্তান।

তাঁকে নিয়েও কম হাসাহাসি হয়নি সামাজিক মাধ্যমে। কখনো কখনো সে হাস্যরস আঘাত হেনেছে বেল্টের নিচে। হাসতে হাসতে কথার ছুরি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে মন্ত্রীমশাই এবং তাঁর তরুণী ভার্যার শরীরে।

আর নাজনিন? যাঁরা এ সময়টায় ফেসবুক স্ক্রল করেছেন, তাঁরা জানেন, কতটাই–না অপদস্ত হতে হয়েছে তাঁকে। ৪৪ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেছেন ২২ বছর বয়সী মামুনকে। ব্যস! আমাদের ফেসবুক বিশেষজ্ঞরা তখনই নেমে গেছেন অস্ত্রোপচারে। কে কতটা রং মাখিয়ে আঘাত করতে পারবেন, শুরু হয়ে গেছে তার প্রতিযোগিতা। এ যেন স্পেনের ষাঁড়ের লড়াই। অসহায় রাগী ষাঁড়টি রাগে ফোঁস ফোঁস করবে, আর মাতাদোররা সুযোগ পেলেই ‘শৈল্পিকভাবে’ ক্ষতবিক্ষত করতে থাকবে ষাঁড়টিকে। ষাঁড়ের মৃত্যুর আগে উল্লসিত দর্শকদের একজনও গ্যালারি ছাড়বে না।

ফেসবুকে কী লেখা যায়, কী লেখা যায় না, তার কোনো নিয়ম নেই। আগে কেউ বলত, বেশির ভাগ মানুষ শুনত। এখন সবাই শুধু বলে আর বলে। অন্য মানুষ যেন তার কথা শোনে, তা নিশ্চিত করার জন্য যতটা সম্ভব শব্দগুলো নগ্ন হয়।

এই নগ্ন শব্দের দখলে যখন গল্প চলে যায়, তখন মানুষ আত্মহত্যা করে, খুন করে, কিন্তু আসল খুনি তার কিছুই জানে না, জানতে চায় না, শুধু চুলকে যেতে থাকে পুরোনো ক্ষত, যেন রক্ত বের হয়—নিজের এবং অন্যের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত