Ajker Patrika

আমাদের পূজা সেনগুপ্ত

মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২২, ১০: ২২
আমাদের পূজা সেনগুপ্ত

দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু শহরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল- ২০২২’। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ‘তুরঙ্গমী’র আর্টিস্টিক ডিরেক্টর নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত।

তথ্যটি শুনতে যত সহজ মনে হচ্ছে, বিষয়টি তত সহজ ছিল না। নাচ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা বেশ কঠিন। কঠিন এই অর্থে, আমাদের নাচের যে পরম্পরা এখন, তার ধারা বেশ ক্ষয়িষ্ণু। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ যখন নিজেদের নাচের গ্রুপ নিয়ে পুরো পৃথিবী চষে বেরোচ্ছে, আমাদের নাচ তখন কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের মুখবন্ধ হিসেবেই সীমাবদ্ধ। পূজা সেনগুপ্ত সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন এবং করছেন।

‘তুরঙ্গমী’ শব্দটির অর্থ যে মেয়ে ঘোড়া চালাতে পারে। অর্থাৎ নারী অশ্বারোহী বা ঘোড়সওয়ার। পূজার দাদু তাঁর নাম রাখতে চেয়েছিলেন তুরঙ্গমী। কিন্তু কোনো কারণে সে নাম আর রাখা হয়নি। পরবর্তী সময়ে পূজা সে ঘটনা শুনে সিদ্ধান্ত নেন, ‘…বড় হয়ে যে কাজগুলো করব, সে কাজগুলো তুরঙ্গমী নামে পরিচিত হবে।’ সে কারণে ২০১৪ সালে তুরঙ্গমীর জন্ম। এটি তরুণদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম।

নাচের ভাষা বিশ্বজনীন বলে আন্তর্জাতিকভাবে নাচের পরিধি বেশ বড়। পূজা সেনগুপ্ত যখন নাচকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন আমাদের দেশে নাচের পেশাদার ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। সে জন্য এক দিকে নিজের নাচের চর্চা আর সৃজনশীলতা অনুশীলনের পাশাপাশি নিজের নাচের বাজারও তৈরি করতে হয়েছে। এরপর একটা বড় সংগ্রামের সময় পার করতে হয়েছে পূজাকে। প্রথাগতভাবে কোনো অনুষ্ঠানের শুরুর অংশ হতে চাননি তিনি। চেয়েছিলেন তাঁর নাচের জন্যই অনুষ্ঠান হোক। সে জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান তাঁকে বাদ দিতে হয়েছে। আয়োজকদের ‘না’ বলতে বলতে একসময় নিজের শর্তে নাচের অনুষ্ঠান করতে শুরু করেন পূজা সেনগুপ্ত।

দেশে এই অবস্থাটা শুরু হওয়ার পরই আসলে কঠিন জার্নিটা শুরু হয়। সেটা নাচের মাধ্যমে বিদেশে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। আলাপচারিতায় পূজা জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করা ছিল আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আমি সব সময় আমার কাজে এমন শিল্প উপকরণ আর শৈলী প্রয়োগ করেছি, যা সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব, যা বাংলাদেশের।’ সংস্কৃতির লোকায়ত অনুষঙ্গগুলো খুঁজে নিতে হয় মাটির গভীর থেকে। পূজা সেনগুপ্ত সে কাজটি করতে শুরু করেন গবেষণা।

তারই প্রতিফল আমরা দেখেছি দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যালে। এ ফেস্টিভ্যালে পূজা বেছে নিয়েছিলেন আরতি নাচ। আমাদের নিজস্ব সে নাচকে তিনি কাঠামোবদ্ধ করেছিলেন আন্তর্জাতিক দর্শকদের উপযোগী করে। সে নাচের সঙ্গে যোগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানটি। ফলে পুরো উপস্থাপনায় এক দিকে যেমন দেশীয় আমেজ ছিল, তেমনি ছিল আন্তর্জাতিক দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর এক বিপুল প্রচেষ্টা। নাচ শেষে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া বলে দিয়েছে, পূজা সেনগুপ্ত তাঁর প্রচেষ্টায় সফল।

আমাদের নাচের ভবিষ্যৎ কী—এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম পূজার কাছে। অকপটে তিনি বলে গেলেন, ‘বাংলাদেশের নাচের অনেক ভালো একটা ভবিষ্যৎ হবে।’ একই সঙ্গে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মূলধারায় বাংলাদেশের নিজস্ব নৃত্যধারাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা আর দেশে নাচের পেশাদার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করাই তাঁর লক্ষ্য।

আমরা আশ্বস্ত আমাদের একজন পূজা আছেন। আমরা নির্ভার হতে চাই, তাঁর হাত ধরে আমাদের নিজস্ব নাচের মুদ্রা প্রস্ফুটিত হবে আন্তর্জাতিক পরিসরে।

 

পূজা সেনগুপ্তর সাক্ষাৎকার পড়ুন অনলাইনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত