Ajker Patrika

২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যটক

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ১৮: ৫৪
২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যটক

সম্প্রতি কয়েকটি নেতিবাচক ঘটনা ও করোনার বিধিনিষেধের প্রভাব পড়েছিল কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পে। ভরা মৌসুমেও ছিল না আশানুরূপ পর্যটক। দুই মাস পর পাল্টেছে সেই চিত্র। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে কোথাও তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। সবখানেই ভরপুর পর্যটক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৬ ডিসেম্বরের তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে প্রায় চার লাখ পর্যটক এসেছিলেন। এরপর গত সপ্তায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন, পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়তে থাকে। গতকাল দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যটক এসেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল সকালে সরেজমিন সৈকতের লাবণি ও সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা যায়, পর্যটকে টইটুম্বুর সৈকতপাড়। কোথাও তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। সবাই মেতে উঠেছে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। কেউ সাগরের নোনাজলে গা ভেজাচ্ছেন; কেউ আবার বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে সৈকত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এসব স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে স্বজন ও ফটোগ্রাফাররা মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিজয় দিবসের তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে অবকাশে এসে বিপাকে পড়েছিল পর্যটকদের বড় একটি অংশ। সে সময় হোটেলে থাকার কক্ষ না পেয়ে পর্যটকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। লাখো পর্যটক সৈকতে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মানুষের বাসাবাড়িতে রাত্রি যাপন করেছিলেন। এ সময় কিছু হোটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, নির্দিষ্ট ভাড়ার কয়েক গুণ বেশি কক্ষভাড়া আদায়ের। একই ধরনের অভিযোগ ছিল রেস্তোরাঁগুলোর বিরুদ্ধেও। এ ছাড়া পরিবহনসহ নানা ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তিতে অস্থির পরিস্থিতি দেখা দেয় কক্সবাজারের পর্যটন খাতে।

এর আগে করোনা সংক্রমণ রোধে গেল দুই বছরে প্রায় সাড়ে ৯ মাস সমুদ্রসৈকতে পর্যটক সমাগম নিষিদ্ধ ছিল। এতে পর্যটকনির্ভর কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। গত বছরের ১৯ আগস্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলা প্রশাসন সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটনকেন্দ্র উন্মুক্ত করে দেয়।

গতকাল ঢাকার সূত্রাপুর থেকে সপরিবারে বেড়াতে এসেছেন ব্যবসায়ী আজমল হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত বছরও পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছিলাম। শহরের রাস্তাঘাটের কারণে যোগাযোগব্যবস্থায় একটু ত্রুটি থাকলেও অন্য পরিবেশের উন্নতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

এদিকে কক্সবাজার শহর ছাড়াও সৈকতের হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, শৈলদ্বীপ মহেশখালী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামুসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটক সমাগম ঘটেছে।

সাগরপাড়ের অভিজাত হোটেল কক্স টু ডের ব্যবস্থাপক (রিজার্ভেশন) লোকমান চৌধুরী অপু আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁদের ২৭০টি কক্ষ রয়েছে। সব কটিই শুক্র ও শনিবার ভাড়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এ সপ্তায় পর্যাপ্ত পর্যটক এসেছে বলে তিনি মনে করেন।

কলাতলী লেগুনা বিচের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) সুজন লস্কর জানান, তাঁদের ৫০টি কক্ষের সব কটিই দুই দিনের জন্য বুকিং রয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

পর্যটন উদ্যোক্তা ট্রিপ জোন ট্যুর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিকু পাল বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে ১০টি জাহাজে করে অন্তত ৫-৬ হাজার পর্যটক এসেছেন। সেখানকার ১৪৪টি হোটেলেও কোনো কক্ষ খালি নেই।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস, কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার আজকের পত্রিকা জানান, কক্সবাজার শহরের সাড়ে ৪০০ হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসে ১ লাখ ৭০ হাজারের মতো পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ পর্যটক এসেছেন। সম্প্রতি যেসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে পর্যটনে প্রভাব পড়েছিল, তা কাটিয়ে উঠছে। এ ছাড়া পর্যটকেরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, তার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তায় সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত