Ajker Patrika

সেচসংকট, প্রণোদনার অভাবে আগ্রহ কমেছে বরবটি চাষে

এস আলম সুমন, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ১২
সেচসংকট, প্রণোদনার অভাবে  আগ্রহ কমেছে বরবটি চাষে

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দুই ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৪০০ চাষি বাণিজ্যিকভাবে প্রতিবছরই বরবটি চাষে সফলতা পেয়ে আসছেন। কিন্তু প্রায় দেড় যুগ ধরে বরবটি চাষে ব্যাপক সফলতা থাকলেও পানি সেচের সংকট এবং সরকারি প্রণোদনা না থাকায় আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্ধেকেরও কম জমিতে বরবটির চাষ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ও বরমচাল ইউনিয়নে ২০ হেক্টর কৃষিজমিতে বরবটি চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে চায়নিজ, কেগোর নাটকি, লাল বেনি জাতের বরবটি চাষ করা হয়। ২০২১ সালে ৪৫ হেক্টর জমিতে এবং ২০২০ সালে ৪০ হেক্টরে বরবটি চাষ হয়েছিল। এক বিঘা জমিতে দুই টন বরবটি ফলন হয়।

চাষিরা জানান, আবাদের দুই মাস পর ফলন ভালো হলে এক দিন পরপর ১ বিঘা থেকে ১০ থেকে ১২ মণ বরবটি সংগ্রহ করা যায়। প্রতিদিন একেকজন চাষি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বরবটি পাইকারি বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ক্রেতারা উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার-বরমচাল সড়কে অবস্থিত শ্রীপুর মাদ্রাসা বাজারে বরবটি কিনতে আসেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ওই এলাকায় অস্থায়ী বরবটির পাইকারি হাট বসে। চলতি বছর পাইকারেরা এসে ৩০-৩২ টাকা কেজি দরে বরবটি কিনে নিয়ে যান।

বরমচালের পশ্চিম সিঙ্গুর গ্রামের বাসিন্দা খোর্শেদ আলম বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে বরবটি চাষ করেছি। প্রায় ৩০ বছর ধরে এই চাষাবাদ করে আসছি। চলতি বছরে বরবটি চাষে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পোকার আক্রমণ ও অতিরিক্ত তাপে অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। সেচব্যবস্থা ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পরামর্শ পেলে উপকার পেতাম।’

স্থানীয় চাষি জাহাঙ্গীর মিয়া ও সুরুজ আলী জানান, এক দিন পর পর ছয়-সাত মণ বরবটি পাইকারি বিক্রি করেন। এ বছর দাম ভালো। তবে ফলন অনেক কম হয়েছে। বরবটি চাষে খরায় পানির অভাবে ও পোকার আক্রমণে ক্ষতি অনেক হয়েছে।

সাইদুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয় না। আমার পাঁচ বিঘা জমির মধ্যে দুই বিঘায় বরবটি গাছে পোকায় ছিদ্র করে ফেলেছে। পাতা হলুদ হয়ে গাছও নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও গাছের গোড়ায় এক ধরনের রোগে গাছ নষ্ট হওয়ায় ফসল আসেনি।’

চাষিরা জানান, পৌষ মাস থেকে বৈশাখ পর্যন্ত তুলনামূলক বৃষ্টি কম হওয়ায় খেতে সেচের পানির সংকটে পড়তে হয়েছে। সরকারিভাবে এসব এলাকায় সেচের জন্য নলকূপ ও পাম্প দেওয়া হলে এ সময় আমাদের সেচসংকট কাটবে। এ বছর কম জমিতে বরবটি আবাদ হয়েছে।

সিলেট থেকে বরবটি কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই এলাকা থেকে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার বরবটি ব্যবসা হয়। এখান থেকে সিলেটের বিভিন্ন বাজার থেকে পাইকারি বিক্রেতারা গাড়ি দিয়ে এসে বরবটি নিয়ে যান। এখানকার বরবটির চাহিদা অনেক।

চাষিদের পরামর্শ না দেওয়া এবং সেচসংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তা মাঠে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দেন। সরকারিভাবে বরবটি চাষে কোনো প্রণোদনা নেই। পোকার আক্রমণ রোধে পরিবেশবান্ধব সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারে উৎসাহ দিই, যাতে ফসলে কীটনাশক প্রয়োগের ব্যবহার কম করেন চাষিরা।’

তিনি আরও বলেন, বরবটির পাতা হলুদ হওয়ার কারণ হলুদ মোজাইক ভাইরাসের সংক্রমণ। এ ভাইরাসের সংক্রমণরোধে চাষিদের সচেতন করা হয়েছে। সেচের বিষয়টি বিএডিসি সেচ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষে বিষয়। তারা সেটি দেখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত