Ajker Patrika

ফারদিন হত্যা মামলা: ১০ মাস পর বুয়েটের নাম জানতে চাইলেন তদন্ত কর্মকর্তা

নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০: ৪৬
ফারদিন হত্যা মামলা: ১০ মাস পর বুয়েটের নাম জানতে চাইলেন তদন্ত কর্মকর্তা

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলার অধিকতর তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য এ পর্যন্ত আটবার সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালতের ঠিক করে দেওয়া সর্বশেষ তারিখ অনুযায়ী, ২৯ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু তদন্তের এই পর্যায়ে এসে তদন্ত কর্মকর্তা জানতে চেয়েছেন ফারদিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো নাম। 

ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা জানান, তদন্তের ১০ মাস পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা হোয়াটসঅ্যাপে একটি চিরকুটের ছবি পাঠান তাঁকে। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে ফারদিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো নাম, শিক্ষাবর্ষ, বিভাগ, রোল ও হলের নাম। 

এত দিন পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার এসব প্রশ্নে হতভম্ব ফারদিনের পরিবার। এই ঘটনায় তাঁরা মামলা তদন্তের গতি ও সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বলেন, এটা খুবই হতাশাজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড। ১০ মাসের মাথায় এসে অধিকতর তদন্ত কর্মকর্তা এসব বিষয় জানতে চান! এর আগে এই মামলা তদন্ত করেছে ডিবি। তারা ডিবি ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে এটা জানতে পারেনি?

১০ মাস পরে এসে এগুলো জানতে চাইলে বোঝা যায়, তদন্তের ব্যাপারটা কী হবে এবং বিচার প্রক্রিয়াটা কোন জায়গায় যাচ্ছে। 

ফারদিন নূর পরশ

রাজধানীর রামপুরা থেকে ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন ফারদিন। তিন দিন পর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। ১০ তারিখে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় তাঁর বন্ধু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়াতুল্লাহ বুশরাসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন ফারদিনের বাবা। মামলার চার মাস পরে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। অব্যাহতি দেওয়া হয় মামলার আসামি বুশরাকে। এতে নারাজি জানান ফারদিনের বাবা। আদালত গত বছরের এপ্রিলে এই মামলার অধিকতর তদন্তের ভার দেয় সিআইডিকে।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর আটবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ পিছিয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি আবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। এর মধ্যে কয়েক দফায় ফারদিনের বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন সিআইডির কর্মকর্তা এবং তাঁর সামনে বুশরাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। 

মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া ও ডিবির চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে শুরু থেকেই সন্দেহ ও আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন ফারদিনের বাবা। এই মামলাটিও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার পথে এগোচ্ছে এমন শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলার রায় যেমন ১০৫ বার পিছিয়েছে, এটাও তেমন হবে। একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করতে খুনি ও অপহরণকারীকে বাঁচিয়ে দিতে শহরের কোনো সিসিটিভি ফুটেজ তারা বের করতে পারেনি। তারা সিসিটিভি ফুটেজ সামনে না এনে, শুধু মোবাইল ডেটাবেইস দিয়ে লোকেশন ইন্ডিকেট করেছে। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অংশ হিসেবে রূপরেখা অনুযায়ী তারা ফারদিনের একটা সিঙ্গেল মুভমেন্ট তৈরি করতে চেয়েছিল। 

ফারদিনের বাবার অভিযোগ ও শঙ্কার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক বেলায়েত হোসেন ও তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার খালিদুল হক হাওলাদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সিআইডির মুখপাত্র বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, ‘তদন্তের বিভিন্ন পর্যায় থাকে। তদন্ত চলার সময় যখন যাকে প্রয়োজন বা তথ্যের জন্য যেটা প্রয়োজন হবে, তখন সেটা করতে হবে। এটা প্রথম দিকেই হোক বা শেষের দিকেই হোক। হয়তো তারা ভুল বুঝে থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের তদন্তের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের কোনো সুযোগ নেই। উনি যেটা সন্দেহ করেছেন, সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই। এই মামলাটি খুব কাছে থেকে সিনিয়র অফিসাররা মনিটর করতেছে। এখানে এসবের কোনো অবকাশ নেই। তদন্ত শেষ পর্যায়ে আসলে আমরা তখন জানাব।’

কেমন আছেন বুশরা 
ফারদিন হত্যা মামলার আসামি আমাতুল্লাহ বুশরা গ্রেপ্তারের পর ৬৫ দিন কারাগারে ছিলেন। ডিবির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পরে তাঁকে স্থায়ী জামিন দেন আদালত। তবে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সিআইডি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জামিনে মুক্তির পর থেকে বুশরা আবার পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেছেন। তবে তিনি সব সময় শান্ত ও চুপচাপ থাকেন। বুশরার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘আমার মেয়ে নিয়মিত পড়াশোনায় ফিরেছে। ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে, ক্লাস-পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে সে সব সময় চুপচাপ থাকে। তাকে আগের মতো প্রাণবন্ত দেখা যায় না। তার মনের ভেতরে কী চলে, সেগুলো কখনো আমাদের বলে না। আমরাও জোর করি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত