Ajker Patrika

সেই বর্বরতার স্মৃতি এখনো কাঁদায়

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৫৩
সেই বর্বরতার স্মৃতি এখনো কাঁদায়

১৯৭১ সালের মার্চের শেষ অথবা এপ্রিলের শুরুর কোনো একদিন। সে দিন দুপুরে হঠাৎ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীর মালিপাড়ার ঘরে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রাণে বাঁচতে মানুষজন ছুটতে থাকেন পাশের কৈবল্যধাম আশ্রমে। সেখানেও আসতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী। বাধ্য হয়ে মানুষজন আবারও দিগ্‌বিদিক ছুটতে থাকেন।

বেশির ভাগ মানুষ চলে গেলেও প্রিয় আশ্রমেই থেকে যান মহারাজ তৃতীয় মোহন্ত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ ২৪ জন। পাক হানাদারবাহিনীর বর্বরতার বলি হতে হয় তাঁদের সবাইকে। ওই দিন রাতেই এই ২৪ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বেশ কয়েক দিন সেখানেই পড়েছিল তাঁদের ছিন্নভিন্ন লাশ।

আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপে কৈবল্যধাম আশ্রমের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য অজয় মিত্র শংকু গণহত্যার এমন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই এই গণহত্যা চালিয়েছিল পাক হানাদারবাহিনী। তবে দিন-তারিখ সঠিকভাবে জানতে পারিনি আজও। অনেক দিন আশ্রমের এখানে-ওখানে পড়ে ছিল সবার লাশ। হানাদারবাহিনী সরে গেলে তবেই সেই লাশগুলো সৎকার করা হয়।’

কৈবল্যধাম আশ্রমটির অবস্থান পাহাড়ের ওপর। বেশ কিছু সিঁড়ি ডিঙিয়ে আশ্রমের মূল ভবনে ঢুকতে দেখা যায়, বাঁপাশের দেয়ালে কালো বোর্ডে সাদা অক্ষরে লেখা ২৪ জনের নাম। তাঁদের মধ্যে আছেন মোহন্ত থেকে পূজারি, পাচক থেকে নিরাপত্তারক্ষী। তালিকার ওপরে বড় হরফে লেখা, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যাঁরা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাঁদের তালিকা ও পরিচয়।’ আশ্রমের মূল ভবনের সরু সিঁড়ি মাড়িয়ে দোতলায় উঠতেই চোখ আটকে যায় নামফলকে। সেই ফলকের মাঝখানের গুলির দাগটা এখনো যেন তাজাই রয়ে গেছে।

আশ্রমের ব্যবস্থাপক বাবুল সেনগুপ্ত ও সেবার্থী ললিতকুমার কর্মকার বলেন, নামফলকের কক্ষটি ছিল তৃতীয় মোহান্ত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যয়ের। তাঁকে লক্ষ্য করেই এই গুলি ছোড়া হয়েছিল।

সে দিনের বর্বরতার সাক্ষীদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। বহু খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল পাশের মালিপাড়ার বাসিন্দা সুনীল চন্দ্র দাশকে। পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে প্রাণে না মারলেও সারা জীবনের জন্য বলতে গেলে পঙ্গুই করে দিয়েছে। মাথায় বন্দুক এবং পায়ে বুট দিয়ে আঘাত করা হয় সুনীলকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত