Ajker Patrika

দূষণে মরছে অভয়াশ্রমের মাছ

নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২২, ১৩: ৪৯
দূষণে মরছে অভয়াশ্রমের মাছ

নাটোরের নলডাঙ্গায় বর্ষা মৌসুমেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। ফলে পানির অভাবে খাল-বিলে ও ডোবায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। অনেকে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন, আবার বাড়তি খরচ থেকে বাঁচতে অনেকে বারনই নদে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে পানিতে অক্সিজেন-সংকটের কারণে নদের ছোট-বড় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ ও পোনা মারা যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উজানে রাবার ড্যামের মাধ্যমে বারনই নদের পানি আটকানো হয়েছিল। ফলে পানির স্রোত কমে যাওয়ায় এবং পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে হাজারো মাছ মরে ভেসে উঠছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় কম বৃষ্টি হওয়ায় খাল-বিলে ও ডোবায় পানি ছিল না। তাই পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েন কৃষক। সেচ দিয়ে পাট জাগের ব্যবস্থা করতে পারলেও অনেকে সেটি করতে পারেননি। তাই বাড়তি খরচ না করে তাঁরা বারনই নদের পানিতে জাগ দিয়েছেন। ফলে পানিদূষণে ছয়টি অভয়াশ্রমের মা মাছ ও পোনা মারা যাচ্ছে।

উপজেলার ঠাকুর লক্ষ্মীকূল গ্রামের পাটচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে পাট চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর ডোবা নালায় পানি না থাকায় শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে তাঁর অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাঁর মতো এই এলাকার অনেক কৃষক পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা বারনই নদে জাগ দিয়েছেন।

এদিকে, ২৩ জুলাই রাতে বারনই নদের দুই ধারে ট্যাংরা, পুঁটি, চিংড়ি, গুচিসহ অনেক মাছ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা সেগুলো ধরে নিয়ে যান।

শ্যামনগর অভয়াশ্রমের পাহারাদার সমজান আলী সমু বলেন, পাট জাগ দেওয়ায় পানিতে অক্সিজেনের সংকট হয়। ফলে অভয়াশ্রমের ৫-১০ কেজি ওজনের মা মাছ মরে ভেসে ওঠে। ১০ কেজি ওজনের গ্রাসকার্প ভেসে উঠলে তাঁর নাতিও ধরে নিয়ে যায়। শুধু তাঁর নাতি নয়, হাজারো মানুষ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে নিয়ে গেছে।

বারনই নদের পাশে বসবাসকারী সন্তোষ কুমার বলেন, ওই দিন সকালে গোসল করতে গিয়ে দেখেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। তিনিও প্রায় চার কেজি মাছ ধরেছেন।

তবে পরিবেশ বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) দপ্তর সম্পাদক ফজলে রাব্বী বলেন, বারনই নদে গণহারে পাট জাগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সেটি না করা গেলে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী একসময় বিলুপ্ত হবে। তাই মা মাছ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বলেন, এ নদে দেশীয় মাছের প্রজনন বাড়াতে ছয়টি অভয়াশ্রম রয়েছে। কিছুদিন আগে নদে পাট জাগ দেওয়ায় অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়। এই সংকট সমাধানে তাঁদের করণীয় কিছু নেই। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফৌজিয়া ফেরদৌস বলেন, এবার ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির অভাবে ডোবা-নালায় পানি না থাকায় বাধ্য হয়ে কৃষকেরা নদে পাট জাগ দিচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, বারনই নদে অভয়াশ্রমের মা মাছ রক্ষায় ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত