Ajker Patrika

সব প্রস্তুতির পর সাগরে যাওয়ার বাগড়া বরফের

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
সব প্রস্তুতির পর সাগরে যাওয়ার বাগড়া বরফের

‘মাসের পর মাস বইয়া থাহি সিজনের জন্য। সিজন আইলেই সাগরে মাছ ধরতে জামু। জালভর্তি ইলিশ ধরমু। মাইয়া-পোলাগো মোহে হাসি ফুটামু... কিন্তু সিজনের শুরুতে টানা ৬৫ দিন মাছ ধরায় নিষেধ থাকে। নিষেধাজ্ঞার পর যে কয়বার সাগরে গেছি, প্রত্যেকবার সিগন্যাল পাইয়া ঘাটে আইছি। এরপর আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা শ্যাষ হইছে এহন সাগরে খ্যাও মারার জন্য বাজার-সদাই নিয়া ঘাটে বইয়া আছি। কবে মাছ ধরতে যামু কইতে পারি না।’

বরগুনার পাথরঘাটার জেলে আব্দুল আজিজ দুই দিন ধরে অপেক্ষার পর বরফ না পেয়ে আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ছয় দিন পার হলেও উপকূলীয় অঞ্চল পাথরঘাটায় এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। এ কারণে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাওয়া ট্রলারগুলো বরফসংকটে ভুগছে।

এতে শতাধিক ট্রলারে হাজারো জেলের সাগরযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েও বরফ না থাকায় পাথরঘাটা বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে অপেক্ষায় রয়েছেন মাঝি সোহরাব হোসেন, জাকির হোসেন, আব্দুল্লাহসহ সমুদ্রগামী হাজারো জেলে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণে অনেক জেলেই মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ঋণগ্রস্ত। এই পরিস্থিতিতে নদ-নদীতে ও সাগরে ইলিশ ধরতে যেতে না পাড়ায় হতাশ জেলেরা।

ট্রলার মালিক মো. মাসুম আকন বলেন, ‘১৫ দিনের জন্য চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় ২ লাখ টাকার বাজার-সদাই ট্রলারে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে দুই দিন ধরে বরফের জন্য সিরিয়াল দিয়ে আছি।’ এ ছাড়া এই সংকটময় মুহূর্তে অনেকেই অতিরিক্ত দামে বরফ বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ করেন জেলেরা।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে যাওয়ার জন্য বাজারভর্তি শতাধিক ট্রলার বরফকলের সামনে বরফের জন্য সিরিয়াল দিয়ে বসে আছে। যারা বরফ সংগ্রহ করতে পেরেছে তারা রাত ১২টার পর সাগরে ইলিশ শিকারের জন্য রওনা দেবে।

মধুমতি ফ্রস্টের নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হক রিয়াজ বলেন, পাথরঘাটায় বরফের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের এক দিন আগে থেকেই পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে।

সিয়াম আইসমিলের পরিচালক মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, এক ক্যান বরফ পাকা হতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা। বন্যার পর গত বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যুৎ এলেও আবার সন্ধ্যায় চলে যায়। এরপর গতকাল শুক্রবার সকাল পাঁচটায় আসে। এতে বরফ উৎপাদন করে সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

পাথরঘাটা পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আব্দুস সালাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে যায় ও খুঁটি ভেঙে যায়। এতে সংযোগ চালু করতে একটু সময় লেগেছে।

শিগগির সমস্যা সমাধান হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত