Ajker Patrika

ধুলার রাজত্বে কাহিল মানুষ

খালিদ হাসান, শিবগঞ্জ (বগুড়া)
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২২, ১৪: ০৭
Thumbnail image

চলছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণকাজ। তাই সড়কের ধুলাবালিতে বিপর্যস্ত এলাকাবাসীসহ রাস্তায় চলাচলকারীরা। দিনে তিনবার পানি ছিটানোর পরও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না ধুলাবালি থেকে।

এ চিত্র এখন শিবগঞ্জের মোকামতলা, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, চোকির ঘাট, কাগইলের রাস্তা, চণ্ডীহারা, মহাস্থান, গোকুলসহ বগুড়া সদরের বনানী পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জায়গার।

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে রাস্তার কাজ চলাকালে ধুলাবালির কারণে যেন পরিবেশ দূষিত না হয়, সে জন্য মাসিক সমন্বয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের টাঙ্গাইল জেলার এলেঙ্গা থেকে বগুড়া হয়ে রংপুরের মর্ডানমোড় পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪ কিলোমিটার রাস্তা চার লেনে উন্নীতকরণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের মার্চ থেকে। এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এর অধীনে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ শুরু হয়।

এই প্রকল্পের বগুড়ার বনানী থেকে শিবগঞ্জের মোকামতলা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার অংশের কাজ পেয়েছে কেএমসি-মনিকো জয়েন্ট ভেঞ্চার নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ শেষ করতে প্রথমে তিন বছর সময় বেঁধে দেওয়া হলেও কাজের ধীরগতির কারণে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুনরায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা বলছেন, গেল তিন বছরে মহাসড়কের এই অংশে ৪১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

২০১৯ সাল থেকে কাজ চলমান। সেই থেকে এলাকা ধুলায় একাকার। মহাসড়কের আশপাশের ঘরবাড়ি, দোকান, গাছপালা ধুলায় ছেয়ে গেছে। দূর থেকে যান আসছে কি না তা বোঝার উপায় নেই। এমনকি নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় চালক, যাত্রী ও পথচারীদের। এ ছাড়া মহাসড়কসংলগ্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করা ও মসজিদে নামাজ আদায় করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আশপাশের দোকানিরাও পড়েছেন বিপাকে।

মোকামতলা এলাকার বাসিন্দা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক শাজাহান আলী বলেন, ‘মহাসড়কে উঠলেই জামাকাপড় ধুলাতে সাদা হয়ে যায়। ধুলার কারণে বাইরে বের হওয়াই যাচ্ছে না। আর কত দিন এই কষ্ট সইতে হবে জানি না।’

ওই রাস্তায় চলাচলকারী জাহান পরিবহনের এক যাত্রী জানান, মাস্ক পরে কোনো রকম নাক ও মুখ ধুলাবালি থেকে রক্ষা পেলেও জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাথার চুল ধুলায় সাদা হয়ে যায়।

মহাস্থান এলাকার গোলাম রব্বানী শিপন জানান, মহাসড়কে কাজ চলমান থাকা অবস্থায় ২৪ ঘণ্টায় এ মহাসড়কে ধূলিঝড়ের মতো ধুলাবালি ওড়ে। প্রায় সবসময়ই এ রাস্তায় যানবাহন চলাচল করে। প্রতিবার গাড়ি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায় রাস্তা।

চণ্ডীহারা বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি জানান, রাস্তার ধুলার কারণে মাঝেমধ্যে শুকনো কাশি হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষেও ধুলা পড়ছে।

মোকামতলা বন্দরের কনফেকশনারির দোকানি আবু রায়হান বলেন, ‘ধুলাবালির কারণে দোকানের জিনিসপত্র পুরোনো মনে হয়। সবসময় পরিষ্কার করতে হচ্ছে। আমরা ধুলার কারণে অতিষ্ঠ।’

শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তারকনাথ কুণ্ডু জানান, যেকোনো ধুলাবালি মানুষের ফুসফুসের ক্ষতি করে। যা পরবর্তী সময়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়ার পরিচালক, সুফিয়া নাজিম বলেন, ‘রাস্তার কাজ চলাকালে ধুলাবালির কারণে যেন পরিবেশ দূষিত না হয়, সে জন্য মাসিক সমন্বয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও সড়ক বিভাগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি।’

প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব জানান, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া এ কাজের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তিন বছর। কিন্তু পরে তা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বনানী থেকে মোকামতলা অংশের রাস্তার কাজ প্রায় ৪১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। কাজের কারণে সৃষ্ট ধুলাবালি থেকে রক্ষা পেতে এই অংশে দিনে তিনবার করে পানি ছিটানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত