Ajker Patrika

কেউ বলছেন অশনিসংকেত কেউ দেখছেন ইতিবাচক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ায় ৪০তম বিসিএসের কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের ২৫৬টি পদে কাউকে সুপারিশ করতে পারেনি পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। অন্যদিকে সিভিল সার্ভিসের এই ব্যাচের নিয়োগ পরীক্ষায় পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশসহ বেশ কয়েকটি ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ যাঁরা প্রকৌশলসহ অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন, তাঁদের অনেকে সংশ্লিষ্ট পেশায় যেতে চাইছেন না। অনেকেরই চাওয়া আমলাতন্ত্রের অংশ হওয়া। এই প্রবণতা বাড়তে দেখা গেছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নিযুক্তির আগের কয়েকটি পরীক্ষায়ও। 
৩৬তম বিসিএসে ২ হাজার ৩২৩ প্রার্থীকে বিভিন্ন ক্যাডার পদের জন্য সুপারিশ করে পিএসসি। এর মধ্যে প্রায় ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ পদে চিকিৎসা, প্রকৌশল ও কৃষির মতো কারিগরি বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা প্রশাসন, পররাষ্ট্র বা পুলিশের মতো সাধারণ ক্যাডারে ঢুকেছেন। ৩৭তম বিসিএসে এই হার ৬ দশমিক শূন্য ৮ এবং ৩৮তম বিসিএসে ৭ দশমিক ৭১। ৩৯তম বিসিএস ছিল শুধু চিকিৎসক ক্যাডারে নিয়োগের জন্য। সর্বশেষ ৪০তম বিসিএসে এই হার কত, তা এখনো জানা যায়নি। তবে পররাষ্ট্র, পুলিশ ও প্রশাসনের মতো সাধারণগুলোতে বিশেষায়িত বিষয়ে পড়াশোনা করা প্রার্থীদের উপস্থিতি ভালোই ছিল বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, অনেক আগে থেকেই প্রকৌশল শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা সিভিল সার্ভিসে এলেও চিকিৎসকেরা সেইভাবে আসতেন না। ইদানীং তাঁরাও প্রশাসনসহ ক্ষমতাশালী ক্যাডারে আসছেন। কারণ, তাঁরা দেখছেন এই সব ক্যাডারে দাপট, ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। এই আসা ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এ প্রবণতার রাশ টানতে হলে সরকারকে আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে একটি দীর্ঘমেয়াদি জনশক্তি পরিকল্পনা করতে হবে। কার পেছনে কত খরচ করে কী রিটার্ন পাওয়া যাবে, এ বিষয়গুলোও সেখানে থাকতে হবে। তবে এসব চিকিৎসক-প্রকৌশলীর মতো মেধাবীরা যে বিদেশে চলে যাচ্ছেন না, এটাও ইতিবাচক বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।

প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-চিকিৎসক (প্রকৃচি)-এর কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে পেশাজীবীদের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। আন্তক্যাডার বৈষম্যের কারণে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসক অন্য ক্যাডারে চলে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আদালতের নির্দেশনা থাকলেও দিনদিন এই বৈষম্য কমার বদলে আরও বেড়ে যাচ্ছে। এ প্রবণতাকে একটি দেশের জন্য অকল্যাণকর বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রকম চলতে থাকলে একসময় বিশেষায়িত পেশায় অনেকে আসতে চাইবেন না। 
তবে বিষয়টি অন্যভাবে দেখছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। চিকিৎসক, কৃষিবিদ ও প্রকৌশলীদের সাধারণ ক্যাডারে আসাটাকে তিনি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ভারতে আইসিএসের মাধ্যমে অনেক প্রকৌশলীই সিভিল সার্ভিসে আসছেন। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে যাঁরা পড়েন তাঁরা অনেক মেধাবী। আর এই মেধাবীরা সিভিল সার্ভিসে আসা ইতিবাচক।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন মনে করেন, প্রতিবছর হাজার হাজার প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছেন। বিশেষায়িত পেশা ছেড়ে যে সবাই নির্দিষ্ট ক্যাডারে আসছেন, বিষয়টি তা নয়। ছোট একটা অংশ সাধারণ ক্যাডারে আসছেন।

পিএসসির সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার এ বিষয়ে বলেন, বিশেষায়িত পেশা ছেড়ে সাধারণ ক্যাডারে আসা ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক, সেটা পিএসসির বিষয় নয়। এখানে কোনো জেলার কোটা নেই বলে সবার সমান সুযোগ রয়েছে। যাঁরা মেধাবী তাঁরাই ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত