Ajker Patrika

মশারি জালে পোনা নিধন

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১২: ২১
মশারি জালে পোনা নিধন

ভোলার চরফ্যাশনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মশারি জাল দিয়ে মেঘনা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে অবাধে গলদা চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন জেলেরা। প্রকাশ্যে পোনা আহরণ করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এদিকে এ জালে ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা।

উপজেলা মধ্য অফিস বলছে, চিংড়ির রেণু ধরা বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নদীতে পোনা ধরা নিষিদ্ধ। যদিও তা মানছেন না চরফ্যাশনের জেলেরা।

গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বেতুয়া নতুন স্লুইসগেটের দক্ষিণ পাশে নদীতীরবর্তী এলাকায় গলদা চিংড়ির রেণু আহরণ করছেন ৪০-৫০ জেলে। তাঁদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

মেঘনা নদীর পাড়ে গলদা চিংড়ি রেণু বাছাইয়ে কাজ করেন স্থানীয় বাসিন্দা হোসনেয়ারা বেগম (৩৬)। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গলদা চিংড়ি পোনা ৫০ পয়সা করে বিক্রি করেছি। এ পোনা ধরা যে অবৈধ, তা শুনেছি। কিন্তু বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পেটের দায়ে রেণু ধরতে হচ্ছে।

একই কথা জানিয়েছে চিংড়ি রেণু আহরণকারী মো. নাজিম (১২) ও মুনতাসির (১৩)।

প্রতি মৌসুমে চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা বুড়াগৌরাঙ্গ নদী থেকে চিংড়ি রেণু আহরণ করেন চরফারুকি এলাকার হান্নান ও হেজন আলী। হেজন আলী বলেন, ‘মশারি ও ঠেলা জালে চিংড়ি রেণু ধরা পড়ে। একজন জেলে প্রতিদিন ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার পোনা ধরতে পারেন। আড়তদারের কাছে ১০০ পোনা ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। মহাজনেরা অগ্রিম ঋণ দেওয়ায় পোনা ধরায় উৎসাহী হয়ে উঠছেন জেলেরা।’

ব্যবসায়ী ছাবের আহমেদ বলেন, ‘মেঘনা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর গলদা চিংড়ির রেণু অল্প সময়ে বড় হয়। এ জন্য খুলনা, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চিংড়িঘেরের মালিকদের কাছে মেঘনার পোনার কদর বেশি। জেলেদের কাছ থেকে রেণু কিনে ব্যবসায়ীরা ঘেরমালিকদের কাছে বিক্রি করেন। এ ব্যবসায় তাঁদের লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।’

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মহসিন আলী বলেন, ‘প্রতি মৌসুমে এখানে কোটি টাকার গলদা চিংড়ির পোনা বিক্রি হয়। রেণু আহরণের সময় অন্য মাছের পোনাও ধ্বংস হয়। তাই নদীতে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পোনা আহরণ বেড়েই চলেছে।’

চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারুফ মিনার বলেন, ‘এখন নদী থেকে গলদা-বাগদা রেণু ধরা অবৈধ। জানুয়ারি থেকে রেণু ধরা বন্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বেহুন্দি, খুঁটি, ডগা জাল আটক করা হচ্ছে। যে কারণে অবৈধ জালের পরিমাণ অনেক কমেছে। চিংড়ির রেণু আহরণ করতে গিয়ে ২১০টি প্রজাতির অন্য রেণু নষ্ট হচ্ছে। যাঁরা অবৈধভাবে রেণু আহরণ করছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। একশ্রেণির অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীর কারণে নদী থেকে পোনা ধরা বন্ধ করা যাচ্ছে না। পোনা আহরণ বন্ধে প্রয়োজনে অভিযান জোরদার করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত