Ajker Patrika

বিনা পুঁজিতে ব্যবসা

পিরোজপুরের কচুরিপানা রপ্তানি হচ্ছে ২৫ দেশে

মো. তামিম সরদার, পিরোজপুর
পিরোজপুর জেলার বিল অঞ্চল নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের শত শত পরিবার এখন নিজেদের ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে কচুরিপানার মাধ্যমে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিরোজপুর জেলার বিল অঞ্চল নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের শত শত পরিবার এখন নিজেদের ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে কচুরিপানার মাধ্যমে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কচুরিপানা। যা একসময় ছিল অযত্নের আগাছা। আজ সেটি হয়ে উঠেছে জীবিকার মাধ্যম। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিরোজপুর জেলার বিল অঞ্চল নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের শত শত পরিবার এখন নিজেদের ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে এই কচুরিপানার মাধ্যমে। তারা নদীনালা, খালবিল ও পুকুর থেকে ফেলনা এই জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহের পর শুকিয়ে, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বের ২৫টির বেশি দেশে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষায়, ‘বিনা পুঁজিতে ব্যবসা।’ কারণ, কচুরিপানা কেনার খরচ নেই বললে চলে। শুধু সংগ্রহ, শুকানো ও পরিবহনের খরচ লাগে। এই কাজে যুক্ত হয়েছেন নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও। সকাল হলে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে তাঁরা ছোটেন বিলের দিকে কচুরিপানা সংগ্রহ করতে। একেকজন প্রতিদিন কয়েক কেজি কচুরিপানা সংগ্রহ করে শুকিয়ে বাজারজাত করছেন। প্রতি কেজি শুকনা কচুরিপানার দাম ৫০ টাকা। গাওখালীর সোনাপুর এলাকায় প্রতি মাসে প্রায় ১০ টন কচুরিপানা বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

এই কাঁচামাল দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুরসহ কয়েকটি অঞ্চলের কুটির শিল্পে পাঠানো হয়, যেখানে তৈরি হয় রঙিন পাটি, হাতব্যাগ, ফুলদানি, টুপি, জায়নামাজ এবং বিভিন্ন হস্তশিল্পের সামগ্রী। সেখান থেকে এগুলো রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে।

স্থানীয় চাষি মোকছেদ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে কেউ জমি চাষ করে না, শুধু বিল থেকে কচুরিপানা তুলে শুকিয়ে বিক্রি করলেই রোজগার হয়। তবে সমস্যা হলো, যোগাযোগব্যবস্থা। একটা ভ্যান চলার মতো রাস্তা নেই, নৌকা একমাত্র ভরসা। রাস্তা ও কালভার্ট তৈরি হলে এখানকার দারিদ্র্য অনেকটা দূর হতো।’

গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া পর্যন্ত সবাই এই কাজের সঙ্গে জড়িত। এটি এখন শুধু আয়ের উৎস নয়, বরং একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যম। আয়মান হাওলাদার নামের এলাকার এক যুবক বলেন, ‘এই কচুরিপানার ডগা দিয়ে বানানো হয় রঙিন ঝাড়, পাটি, পাপোশ এমনকি জায়নামাজ। বাইরের দেশে এসবের অনেক চাহিদা।’

এই সম্ভাবনাকে আরও কার্যকর করার প্রক্রিয়া জানাতে গিয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা এখান থেকে শুকনা কচুরিপানা কিনে রংপুরে পাঠাই। সেখানে নানা রকম কুটির শিল্পে এগুলো ব্যবহার করা হয়। উৎপাদিত পণ্য ও কাঁচামাল বিদেশে যায়।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুনেছি যে গাওখালী এলাকার কচুরিপানা বিদেশে যাচ্ছে। এটা খুবই ইতিবাচক। যদিও এগুলো চাষ করে নয়, বরং প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কচুরিপানা। আমরা খতিয়ে দেখছি, কীভাবে এই উদ্যোগে কৃষকদের সহায়তা করা যায়।’

অবহেলার জলজ উদ্ভিদ এখন আর ফেলনা নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে সম্ভাবনার সোনার ফসল। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলে এই অঞ্চলের কচুরিপানানির্ভর অর্থনীতি শুধু স্বাবলম্বী নয়, বরং এক নতুন ধরনের গ্রামীণ শিল্পবিপ্লবের পথে নিয়ে যেতে পারে সোনাপুরসহ আশপাশের পুরো অঞ্চলকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল পুনর্বিন্যাস আনছে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে কক্সবাজার ভ্রমণ: ৫ নেতাকে শোকজ করল এনসিপি

‘বাবার অসুস্থতায় পরামর্শ নিতে’ চিকিৎসকের বাসায় নারী, দুজনকে পুলিশে দিল স্থানীয়রা

১৪৬ যাত্রী নিয়ে ব্যাংককের পথে এক ঘণ্টা উড়ে মিয়ানমার থেকে ফিরে এল বিমানের সেই ফ্লাইট

৬ বছর পর চীন সফরে যাচ্ছেন মোদি, আসবেন পুতিনও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত