Ajker Patrika

যাঁর জীবন ছিল সংগ্রামময়

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৩৬
যাঁর জীবন ছিল সংগ্রামময়

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম নেতা, কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড মণি সিংহের প্রয়াণদিবস ৩১ ডিসেম্বর। ১৯৯০ সালের এই দিনে অসুস্থ অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

মণি সিংহ ১৯০১ সালের ২৮ জুলাই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা ছিলেন নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর এলাকার জমিদার বংশের মেয়ে। পরবর্তী সময়ে মণি সিংহ তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে টঙ্ক প্রথার বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ১৯২১ সালে মণি সিংহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িত হলেও ১৯২৫ সালেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

১৯২৮ সাল থেকে কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে নিজেকে সমাজ পরিবর্তনের কর্মকাণ্ডে উৎসর্গ করেন। শোষণ-বঞ্চনামুক্ত বৈষম্যহীন দেশ গড়ার সংগ্রামে তিনি ছিলেন আমৃত্যু নির্ভীক যোদ্ধা।

১৯৩০ সালে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সুসং দুর্গাপুরে টঙ্ক আন্দোলনের সময়ও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুরো পাকিস্তান আমলজুড়েই মণি সিংহকে হয় কারাগারে নয়তো আত্মগোপনে কাটাতে হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ৭৭ বছর বয়সী মণি সিংহকে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে ৬ মাস জেলে রাখা হয়েছিল।

মণি সিংহ একজন বড় কমিউনিস্ট নেতা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন একজন বড় মনের মানুষও। তিনি এই ভূখণ্ডে কমিউনিস্ট পার্টির ভিত্তিই শুধু মজবুত করেননি, এখানে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাতেও পুষ্টি জুগিয়েছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক কমিউনিস্ট নেতা দেশত্যাগে বাধ্য হলেও মণি সিংহসহ কয়েকজন মাটি কামড়ে থেকে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছেন। ১৯৫১ সালে মণি সিংহ পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম প্রকাশ্য সম্মেলনে তিনি সিপিবির সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর নামের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির পরিচয় একাকার হয়ে গিয়েছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধকালে বামপন্থীদের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে তিনি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া সহজ হয়েছিল।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁকে সমীহ করতেন, ‘বড় ভাই’ বলে সম্বোধন করতেন। গত শতকের ষাটের দশকের গোড়ার দিকে মণি সিংহের সঙ্গে শেখ মুজিবের গোপন বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশের পরবর্তী রাজনীতির জন্য একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা।

আমার পরম সৌভাগ্য যে, আমি মণি সিংহের স্নেহ পেয়েছি।

১৯৭৩ সালে সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়ে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী কামরুল হোসেন কামুর পক্ষে প্রচারণা করতে গিয়ে তিনি আমাদের বোদার বাড়িতে তিন রাত ছিলেন। তখন আমার বাবা-মায়ের সঙ্গেও তাঁর হৃদ্যতা তৈরি হয়েছিল। বাবার সঙ্গে কথা বলে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। ঢাকায় আসার পর যোগাযোগ আরও নিবিড় হয়েছে।

তাঁর মতো নেতার জন্ম-মৃত্যুদিন জাতীয়ভাবে পালন না করা দুঃখজনক। মণি সিংহকে বিস্মরণ জাতি হিসেবে আমাদের দৈন্যের প্রকাশ।

বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

বিড়াল নির্যাতনের ঘটনায় গ্রামীণফোন ও অ্যারিস্টোফার্মা কেন আলোচনায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত