Ajker Patrika

মরুর দেশে ফুটবলের নাচন

ইলিয়াস কমল, ঢাকা
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২২, ১২: ২৬
মরুর দেশে ফুটবলের নাচন

১২ বছরের সংগ্রাম আর সমালোচনা অতিক্রম করে আজ কাতারে শুরু হচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। মরুর বুকে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল, সেটির স্বাদ নিতে দর্শকেরা বসেন গ্যালারির আসনে, টিভি বা বড় পর্দার সামনে। কাতার-ইকুয়েডরের ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে বহু চমকের এই বিশ্বকাপ।

চমকের শুরু অনেক আগ থেকেই। ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর ফিফা ঘোষণা করে, ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজন করবে কাতার। মধ্যপ্রাচ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ঘোষণার কিছুদিন পরই শুরু হয় সমালোচনা। দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠে আসে বিশ্বকাপ ঘিরে। তৎকালীন ফিফার সভাপতি সেপ ব্লাটার বলেছিলেন, ‘আরব অঞ্চলের ২২টি দেশ, যারা কখনোই এমন টুর্নামেন্ট আয়োজন করার সুযোগ পায়নি সেখানে হবে বিশ্বকাপ।’ সম্প্রতি অবশ্য তিনি সুর পাল্টেছেন। এর মধ্যে নীল নদ দিয়ে বয়ে গেছে লক্ষ-কোটি কিউসেক পানি। আট বছর আগে ফিফা সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করা ব্লাটার এবার বলেছেন, ‘কাতার খুবই ছোট দেশ, ফুটবল এবং বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য উপযুক্ত নয়।’ এর জন্য নিজেকেও দায়ী করেছেন ব্লাটার, ‘এটা খারাপ সিদ্ধান্ত এবং সেই সময়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমিই দায়ী।’ অবশ্য বর্তমান ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কাতার বিশ্বকাপের আয়োজকদের নিয়ে সমালোচনাকারীদের সমালোচনাও করেছেন। বিষয়টি সমালোচকদের ‘ভণ্ডামি’ বলে মন্তব্য করে তিনি গতকাল বলেছেন, ‘এই নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা সম্পূর্ণ একতরফা, শুধুই ভণ্ডামি।’

টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিনে নিজেকে কাতারের পক্ষেই তুলে ধরলেন ফিফা সভাপতি, ‘নিজেকে কাতারিদের মতো মনে করছি, মনে হচ্ছে আমিও মধ্যপ্রাচ্যের, আমি আফ্রিকার, আমি সমকামী, আমি প্রতিবন্ধী; এমনকি আমি একজন প্রবাসী শ্রমিক।’

কাতারের স্থানীয় কর্মকর্তাদের দাবি, ‘বর্ণবাদ’ নিয়ে তাদের দেশ ‘দ্বিমুখী’ আচরণের শিকার হচ্ছে। তবে এসব সমালোচনা ধোপে টিকবে না বল মাঠে গড়ালে—এমনটাই প্রত্যাশা আয়োজক ও দর্শকদের। সব সমালোচনার পরিসমাপ্তি হতে যাচ্ছে আজ রাত ১০টায়। মাসব্যাপী ফুটবল উৎসবের শুরু কাতার–ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে।

কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে আসা দর্শকদের জন্য কিছু ধর্মীয় বিধিনিষেধ থাকলেও আয়োজনের কমতি নেই। গত ১২ বছরে দেশটিতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট, ভিলার মতো স্থাপনা। সাংস্কৃতিক অসামঞ্জস্য থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বকাপ দেখতে আসা দর্শকদের জন্য ঘর ভাড়াও দিতে পারবেন। মরুর দেশ হলেও সাগরঘেরা কাতারে ফুটবলমোদীদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে একাধিক ক্রুজেরও। সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে ফুটবলের বিশ্বসেরা তারকাদের পায়ের ঝলক উপভোগের জন্যই এমন আয়োজন।

বিভিন্ন দেশের পতাকা উঁচিয়ে, স্বদেশি সংস্কৃতির চিহ্ন নিয়ে দোহার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো দর্শকেরাও উচ্ছ্বসিত নিজেদের দেশের ফুটবল নিয়ে। ২০ বছর পর আবারও এশিয়ায় বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বসিত এই অঞ্চলের সমর্থকেরা। কাতারে অসংখ্য বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকেরও একটি আনন্দের উপলক্ষ হয়ে এসেছে বিশ্বকাপ। দোহায় থাকা বাংলাদেশি শ্রমিক সবুজ সরদার আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘কাতারে আসার পর থেকে আনন্দ বা উৎসবের তেমন সুযোগ আমরা পাইনি। এবার বিশ্বকাপে অনেক আনন্দ করতে পারব।’

ফুটবলের এই আনন্দযজ্ঞ দেখতে আসা দর্শকেরা যেন যাতায়াতের ভোগান্তিতে না পড়েন, সে জন্য নেওয়া হয়েছে প্রশংসনীয় সব উদ্যোগ। বিশ্বকাপের আটটি স্টেডিয়ামের মধ্যে পাঁচটিতেই সরাসরি মেট্রোট্রেনের যোগাযোগ রয়েছে। ৫৫ কিলোমিটারের মধ্যে সব স্টেডিয়াম হওয়ায় ঘুরতেও হবে তাদের তুলনামূলক কম। ‘হায়া’ কার্ড ব্যবহার করে ভ্রমণকারীরা মাঠ থেকে মাঠে ভ্রমণ করতে পারবেন।

চাইলে এক ম্যাচ দেখে অন্য ম্যাচ দেখাও সহজ এই আয়োজনের মাধ্যমে। বিশ্বকাপে আসা খেলোয়াড় ও সমর্থকদের নিরাপত্তায় ১০ হাজারের বেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ দিয়েছে কাতার। সব প্রস্তুতি শেষ, এখন শুধু বিশ্বকাপের বাঁশি বাজার অপেক্ষা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত