Ajker Patrika

লবণাক্ততায় মরছে গাছপালা

কামাল হোসেন, কয়রা
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ২৫
লবণাক্ততায় মরছে গাছপালা

খুলনার কয়রা উপজেলার নলপাড়া গ্রামের সোহরাব শেখের তিন বিঘা বসতবাড়ির পুরোটাতেই ছিল আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, সফেদাসহ নানা জাতের ফলের গাছ। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বছরে কয়েক হাজার টাকার ফল বিক্রি করতেন তিনি। বর্তমানে তাঁর বসতভিটায় একটি ফলের গাছও বেঁচে নেই।

লবণাক্ততার কারণে গত দুই বছরে প্রায় সব গাছ মরে বাড়িটি এখন ফাঁকা হয়ে গেছে। পুকুরের পাড়ে লাগানো দু-একটি বনজ বৃক্ষ বেঁচে থাকলেও বর্তমানে সেগুলোও মরতে শুরু করেছে। সোহরাব শেখ বলেন, দুর্যোগ আর নদীভাঙনের কারণে বাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানি ঢুকে এলাকার সব গাছপালা ধ্বংস করে দিয়েছে। মাটি এখনো লবণাক্ত। যে কারণে এই মুহূর্তে নতুন গাছ লাগিয়েও লাভ নেই।

এমন অবস্থা নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সব গ্রামে। এক সময়ের গাছপালা আর সবুজে ঢাকা এলাকা এখন বিরান হয়ে পড়ছে। প্রতি বছর বাঁধ ভেঙে এবং নদীর তীর উপচে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। এর ফলে মরে যাচ্ছে গাছপালা। জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের ফলেও বহু গাছপালা মারা পড়ছে। নদীর ক্রমাগত ভাঙন এলাকার বনাঞ্চল নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আর এর ভোগান্তি পোহাচ্ছে উপজেলার হাজারো মানুষ।

উপজেলার কাশিরহাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে বহু গাছপালা মরে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। এর ফলে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষের জীবনের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। বনাঞ্চল ছিল বলে এই এলাকার মানুষ আগে ঘূর্ণিঝড়কে ততটা ভয় পেত না। কারণ এটাকে তারা নিরাপত্তা দেয়াল হিসাবে মনে করত।

দশহালিয়া, পূর্ব মঠবাড়ি, ঘাটাখালি, গাববুনিয়া, গাজীপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছর বাঁধ ভেঙে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, গাছপালা। সেই সঙ্গে গ্রামের মানুষ ছুটছে নিরাপদ স্থানে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব গ্রাম থেকে বহু মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। বাঁধের পাশের বাসিন্দারা জানান, এই এলাকায় ১০-১৫ বছরে কতবার যে বাঁধ বানানো হয়েছে, তার হিসাব নেই। ভাঙন এগিয়ে আসার সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বাঁধ।

স্থানীয়রা জানান, ভাঙনে জনপদ বিলীন হওয়া আর বারবার ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে বহু গাছপালা মরছে। তারা জানান, এই এলাকায় আম, জাম, কাঁঠাল, সফেদা, তাল, খেজুর, নারিকেল, তেঁতুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মরে যাচ্ছে। ঘাটাখালি গ্রামে বাঁধের বাইরে বহু গাছ মরে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। গত বছর বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের তাণ্ডবে লবণাক্ত পানির প্রভাবে গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া বাঁধের কিনারে বসবাসকারী দীনবন্ধু মিস্ত্রি মরা গাছের দিকে তাকিয়ে বলেন, এক সময় এই নদীর তীরে অনেক গাছপালা ছিল। বাড়ির আশপাশে নানা জাতের ফল ও ফুলের বাগান ছিল। তখন এই এলাকার মানুষের মাঝে শান্তি ছিল। কিন্তু প্রতি বছর লবণাক্ত পরিবেশে গাছপালা মরে যাওয়ায় বসবাসের উপযোগী থাকছে না।

ঘাটাখালি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এই এলাকায় মৌসুমে লবণাক্ত পানি ওঠে। এর ফলে জমিতে কোনো ফসল ফলানো যাচ্ছে না, অন্যদিকে গাছও মরে যাচ্ছে। পাশেই সারি সারি মরে যাওয়া গাছপালা চোখে পড়ে। যে গাছে পাখি বাসা বাঁধত, সে গাছের মাথা শুকিয়ে পাতা ঝরে পড়ছে। কোথাও শুকনো গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে।

উপজেলার সর্বদক্ষিণে সুন্দরবনঘেঁষা ইউনিয়ন দক্ষিণ বেদকাশি। ওই ইউনিয়নের আংটিহারা ও জোড়শিং গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সিডর ও আইলার পর এলাকা আবার সবুজ বনায়নে ঢাকা পড়েছিল। মানুষ বাড়ির আঙিনায়, পুকুরের পাড় ও রাস্তার পাশে নানা জাতের ফলদ ও বনজ বৃক্ষ লাগিয়েছিল। চারদিকে ছিল অনেক গাছপালা। আম্পান আর ইয়াসের ভাঙনে লবণাক্ত পানি ঢুকে গাছগুলো মরে সাবাড় হচ্ছে। এখন মরুভূমির দশা হয়েছে এলাকায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও গত কয়েক বছরে দুর্যোগ ও নদীভাঙনের কারণে এলাকায় হাজার হাজার ফলদ ও ঔষধি গাছ মরে গেছে। বাঁধ ভেঙে প্রতিবার লবণাক্ত পানি ঢুকে তা বের হয় না। মাটিতেই বসে যায়। ফলে এলাকার মাটি ধীরে ধীরে লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আমরা মাটির উপরিভাগে বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত