Ajker Patrika

হাতি-ঘোড়ার হাটে আম

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ০৯: ১২
Thumbnail image

সারি সারি রিকশাভ্যান। সেগুলোর ওপর সাজানো প্লাস্টিকের ক্যারেট। প্রতিটি ক্যারেট ভর্তি কাঁচা-পাকা আমে। হাটের যেদিকে চোখ যাবে, সেদিকেই আম। এ যেন আমের সমুদ্র। আমের মৌসুমে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমের হাট।

দুই বছর আগেও হাটটি বসত বানেশ্বর ভূমি অফিস চত্বরে। কিন্তু এখন সেখানে জায়গা না হওয়ায় বসছে বানেশ্বর কলেজের বিশাল মাঠে। রোজ অন্তত ৬ কোটি টাকার আম বেচাবিক্রি হচ্ছে সেখানে। কিন্তু হাটটির আসলে বয়স কত, প্রশ্ন শুনে আম নিয়ে আসা দুর্গাপুরের কিসমত মাড়িয়া গ্রামের চাষি নূর ইসলাম বললেন, ‘তা তো বুইলতে পারব না। জন্মের পর থন দেখছি।’ নূরের কথা শেষ না হতেই পাশ থেকে তাঁর ভাতিজা জীবন ইসলাম বললেন, ‘এইডি কুনু প্রশ্ন? আম যত দিন, হাটও তত দিন।’ হাটের বয়স বিষয়ে এখনকার মানুষের বক্তব্য, ‘আমাহেরে জন্মের আগের থন এই হাট। বাপ-দাদারাও এই হাটে আম বেচিছে।’

বানেশ্বরের হাটের বয়স নিয়ে এলাকার মানুষের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এ হাটের বয়স ২০০ বছরের বেশি। পুঠিয়ার রাজারা এটি চালু করেছিলেন। অবশ্য প্রথমে হাটটি ছিল বানেশ্বর থেকে আরও দেড় কিলোমিটার পূর্বে শিবপুরে, নারদ নদের শাখা সন্ধ্যা নদীর তীরে। গবেষকদের তথ্যমতে, পুঠিয়ার রাজাদের জন্য হাতি-ঘোড়া আসত শিবপুর হাটে। পাশাপাশি উঠত আম। বণিকেরা এখান থেকে আম নিয়ে সন্ধ্যা নদী ধরে তাহেরপুর ও চলনবিল হয়ে চলে যেতেন যমুনায়। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নদীর মৃত্যু হলে হাটটি চলে যায় বানেশ্বরে। এখান থেকে নারদ নদ ছিল মাত্র ২০০ গজ দূরে। যোগাযোগের জন্য ছিল খাল। ফলে বানেশ্বরের হাটটি স্থায়ী রূপ পায় এবং পাশে গড়ে ওঠে জনবসতি।

একসময় পুঠিয়ার রাজাদের রাজত্ব শেষ হয়। বানেশ্বর হাটে হাতিও আসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তত দিনে এই অঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন শুরু হয়ে গেছে। তাই হাটে ঘোড়া উঠত। একপাশে ঘোড়া, আরেক পাশে শাকসবজির হাট। গরু-মহিষের গাড়ির বাবলা কাঠের চাকাও উঠত হাটে। আর আমের মৌসুমে আম এবং শীতকালে উঠতে থাকে খেজুরের গুড়। হালে শুধু আমের জন্যই সারা দেশে পরিচিতি পেয়েছে বানেশ্বরের এই ঐতিহ্যবাহী হাট।

শুধু পুঠিয়া উপজেলায় নয়, পার্শ্ববর্তী বাঘা, চারঘাট, দুর্গাপুর এবং পবা উপজেলা থেকেও আম যায় বানেশ্বরে। চাষিদের আম নিয়ে রিকশাভ্যানগুলো হাটে ঢুকলেই হাতে টাকার বান্ডিল নিয়ে এগিয়ে আসেন ব্যাপারীরা। শুরু হয় দর-কষাকষি। চাষিদের কেউ ওজন করেন, কেউ ‘চোখের ওজনে’ ঠিকা বিক্রি করেন আম। তারপর টাকা নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন।

গায়ে তাজা আঠা লেগে থাকা এসব কাঁচা আম নিজেদের আড়তে নিয়ে রাখেন ব্যাপারীরা। আড়ত থেকে আম কিনে ট্রাকভর্তি করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ব্যাপারীদের একটা অংশ চাষিদের কাছ থেকে কাঁচা আম কিনে ভূমি অফিসের সামনে বসে খুচরা বিক্রি করেন। বেশির ভাগ ক্রেতা এখানকার আম কিনে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠান আত্মীয়স্বজনের কাছে। এ জন্য বানেশ্বরে সব কুরিয়ার সার্ভিসেরই শাখা আছে। আমের ঝুড়ি প্রস্তুত করে দেওয়ার জন্য আছেন শ্রমিকেরাও। বানেশ্বর হাটের এই আমযজ্ঞ চলে মে মাসের শুরু থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত