মো. বিল্লাল হোসেন
৮১ বছর ছুঁইছুঁই জীবনে এখন তিনি বলতে পারেন না ঠিক কত বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। শুধু আবছা মনে পড়ে, অনেক দিন আগে, তখন তিনি বেশ ছোট, তাঁর বিয়ে হচ্ছে এক দোজো বরের সঙ্গে। কিছু বলার ছিল না। জীবনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন স্বামীর বাড়ি। তারপর কেটে গেছে অনেক সময়। জীবন নদীর মতো প্রবাহিত হয়েছে। সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে জীবনে এসেছে সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতন। নানা সময়ে জীবনের দিক পরিবর্তিত হয়ে চেনা-অচেনা হারিয়ে গেছেন অনেকেই।
হারিয়ে না-যাওয়া মানুষের মাঝে তিনি দেখতে পান, তাঁর হাতে ভূমিষ্ঠ হওয়া মানুষগুলো হেসেখেলে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীর আলো-বাতাসে। সেই মানুষেরা তাঁকে ডাকেন ‘নানাবুজি’ বলে। এ ডাক শুনলেই গভীরভাবে ফুসফুস ভরে নিশ্বাস নেন রাবেয়া বেওয়া। পেশায় নয়, নেশায় তিনি একজন ধাত্রী। গত প্রায় ৩৫ বছরে তাঁর হাতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে আনুমানিক ৩ হাজার শিশু, যারা আজ যুবক।
বাপের বাড়ি-স্বামীর বাড়ি
রাবেয়া বেওয়ার জন্ম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। আগেই বলেছি, ঠিক কত বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল, এখন তিনি নিজেও তা মনে করতে পারেন না। তবে বিয়ে হওয়ার পর স্বামী চান মোল্লার সঙ্গে খরসূতী গ্রামে চলে আসেন তিনি। এখন স্বামীর ভিটেতেই থাকেন রাবেয়া। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মা।
জীবনেই শুধু নয়
রাবেয়া বেওয়া যে শুধু একজন ধাত্রী, তা-ই নয়। এর পাশাপাশি তিনি আরও একটি কাজ করে থাকেন। সেটি হলো মৃত নারী ও শিশুদের গোসল করানো। তবে ধাত্রী হিসেবেই এলাকায় তিনি বিখ্যাত।
জীবনের গল্প
মেঘহীন আষাঢ়ের আকাশের মতো রাবেয়ার চোখ জলহীন। অথচ গল্পটা বলার সময় তাঁর চোখে জল থাকার কথা ছিল। তবে বোঝা যায়, চোখে জল না থাকলেও মনের গহিনে দীর্ঘশ্বাস আছে নিশ্চিত। রাবেয়া যখন প্রথমবার গর্ভবতী হন তখন তাঁর বয়স নিতান্তই কম। প্রসবব্যথায় কষ্ট পেয়েছেন, ছটফট করেছেন। কিন্তু পাশে পাননি অভিজ্ঞ কাউকে। ফলে নিজে জীবনে বেঁচে গেলেও রাবেয়া হারিয়েছিলেন তাঁর কোলজুড়ে আসা প্রথম সন্তানকে। সেই কষ্ট আর আক্ষেপ থেকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন মায়েদের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব, আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে। আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রামে তিনি ধাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছেন নীরবে-নিভৃতে। ময়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মো. আলাউদ্দিন শেখ জানান, এই দীর্ঘ কর্মময় জীবনে প্রায় ৩ হাজার শিশু প্রসব করিয়েছেন রাবেয়া বেগম। শ্রোতা হিসেবে ৩ হাজার সংখ্যাটা শুনে বিস্মিত হতেও ভুলে গিয়েছিলাম। রাবেয়া বেওয়া কি এ সংখ্যাটার কথা জানেন? এক, দুই করে কি গুনে রেখেছেন তাঁর হাতে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুদের নাম কিংবা ধাম? এমন ঘটনাও ঘটেছে যে এক দিনে তিনি চারটি আলাদা পরিবারে চারটি শিশু প্রসব করিয়েছেন।
অভিজ্ঞতাই পাথেয়
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দীর্ঘ ধাত্রীজীবনে কখনো তাঁর মাধ্যমে কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি। গর্ভবতীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখলেই তিনি চিকিৎসক ডাকতে বলেন সঙ্গে সঙ্গে। কখনো কখনো গর্ভবতীর পরিবারকে বাধ্য করেন যত দ্রুত সম্ভব গর্ভবতীকে হাসপাতালে পাঠাতে। ব্যক্তিগত এবং দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা রাবেয়া বেওয়াকে সচেতন করেছিল। আজ থেকে বছর দশেক আগে ধাত্রীদের জন্য একটি বিখ্যাত এনজিওর আয়োজন করা ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। রাবেয়া বেওয়ার নিখুঁত ও স্বাস্থ্যকরভাবে শিশু ভূমিষ্ঠ করার দক্ষতা দেখে সে ট্রেনিংয়ে আসা চিকিৎসকসহ সবাই বেশ অবাক হয়েছিলেন।
অর্থ কিংবা উপহারে না
একটি শিশু প্রসব করানোর জন্য রাবেয়া বেওয়াকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়। এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে কোনো অর্থ তিনি নেন না। কেউ কোনো উপহার দিতে চাইলেও তিনি পারতপক্ষে সেটা নেন না। গরিব বলে তিনি কাউকে এড়িয়ে গেছেন তেমন কোনো ঘটনা কেউ বলতে পারেন না।
অবসর নয়, অভিজ্ঞতা বিলান
বয়স আশি পেরিয়েছে। কিন্তু তাঁর কর্মতৎপরতায় কোনোভাবে মনে হয় না রাবেয়া বেওয়া ‘অশীতিপর বৃদ্ধা।’ এখন আর আগের মতো নিজে সন্তান প্রসব করান না। কিন্তু উপস্থিত থাকেন। ভরসার জায়গা হিসেবে অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করেন কর্মরত মানুষদের।
নানাবুজি
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার প্রায় পনেরোটি গ্রামের একটি প্রজন্ম রাবেয়া বেওয়াকে নানাবুজি বলে ডাকেন। এমনও আছে যে বাবা ও ছেলে দুজনই তাঁকে নানাবুজি বলে ডাকছেন। কারণ দুজনের ধাত্রী একজনই—তিনি রাবেয়া বেওয়া। এই পনেরোটি গ্রামে তিনি ভীষণ সম্মানিত মানুষ। নানাবুজির গল্প অর্থ-বিত্ত-সচ্ছলতার গল্প নয়। মানুষের। মানবিকতার।
৮১ বছর ছুঁইছুঁই জীবনে এখন তিনি বলতে পারেন না ঠিক কত বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। শুধু আবছা মনে পড়ে, অনেক দিন আগে, তখন তিনি বেশ ছোট, তাঁর বিয়ে হচ্ছে এক দোজো বরের সঙ্গে। কিছু বলার ছিল না। জীবনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন স্বামীর বাড়ি। তারপর কেটে গেছে অনেক সময়। জীবন নদীর মতো প্রবাহিত হয়েছে। সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে জীবনে এসেছে সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতন। নানা সময়ে জীবনের দিক পরিবর্তিত হয়ে চেনা-অচেনা হারিয়ে গেছেন অনেকেই।
হারিয়ে না-যাওয়া মানুষের মাঝে তিনি দেখতে পান, তাঁর হাতে ভূমিষ্ঠ হওয়া মানুষগুলো হেসেখেলে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীর আলো-বাতাসে। সেই মানুষেরা তাঁকে ডাকেন ‘নানাবুজি’ বলে। এ ডাক শুনলেই গভীরভাবে ফুসফুস ভরে নিশ্বাস নেন রাবেয়া বেওয়া। পেশায় নয়, নেশায় তিনি একজন ধাত্রী। গত প্রায় ৩৫ বছরে তাঁর হাতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে আনুমানিক ৩ হাজার শিশু, যারা আজ যুবক।
বাপের বাড়ি-স্বামীর বাড়ি
রাবেয়া বেওয়ার জন্ম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। আগেই বলেছি, ঠিক কত বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল, এখন তিনি নিজেও তা মনে করতে পারেন না। তবে বিয়ে হওয়ার পর স্বামী চান মোল্লার সঙ্গে খরসূতী গ্রামে চলে আসেন তিনি। এখন স্বামীর ভিটেতেই থাকেন রাবেয়া। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মা।
জীবনেই শুধু নয়
রাবেয়া বেওয়া যে শুধু একজন ধাত্রী, তা-ই নয়। এর পাশাপাশি তিনি আরও একটি কাজ করে থাকেন। সেটি হলো মৃত নারী ও শিশুদের গোসল করানো। তবে ধাত্রী হিসেবেই এলাকায় তিনি বিখ্যাত।
জীবনের গল্প
মেঘহীন আষাঢ়ের আকাশের মতো রাবেয়ার চোখ জলহীন। অথচ গল্পটা বলার সময় তাঁর চোখে জল থাকার কথা ছিল। তবে বোঝা যায়, চোখে জল না থাকলেও মনের গহিনে দীর্ঘশ্বাস আছে নিশ্চিত। রাবেয়া যখন প্রথমবার গর্ভবতী হন তখন তাঁর বয়স নিতান্তই কম। প্রসবব্যথায় কষ্ট পেয়েছেন, ছটফট করেছেন। কিন্তু পাশে পাননি অভিজ্ঞ কাউকে। ফলে নিজে জীবনে বেঁচে গেলেও রাবেয়া হারিয়েছিলেন তাঁর কোলজুড়ে আসা প্রথম সন্তানকে। সেই কষ্ট আর আক্ষেপ থেকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন মায়েদের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব, আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে। আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রামে তিনি ধাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছেন নীরবে-নিভৃতে। ময়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মো. আলাউদ্দিন শেখ জানান, এই দীর্ঘ কর্মময় জীবনে প্রায় ৩ হাজার শিশু প্রসব করিয়েছেন রাবেয়া বেগম। শ্রোতা হিসেবে ৩ হাজার সংখ্যাটা শুনে বিস্মিত হতেও ভুলে গিয়েছিলাম। রাবেয়া বেওয়া কি এ সংখ্যাটার কথা জানেন? এক, দুই করে কি গুনে রেখেছেন তাঁর হাতে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুদের নাম কিংবা ধাম? এমন ঘটনাও ঘটেছে যে এক দিনে তিনি চারটি আলাদা পরিবারে চারটি শিশু প্রসব করিয়েছেন।
অভিজ্ঞতাই পাথেয়
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দীর্ঘ ধাত্রীজীবনে কখনো তাঁর মাধ্যমে কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি। গর্ভবতীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখলেই তিনি চিকিৎসক ডাকতে বলেন সঙ্গে সঙ্গে। কখনো কখনো গর্ভবতীর পরিবারকে বাধ্য করেন যত দ্রুত সম্ভব গর্ভবতীকে হাসপাতালে পাঠাতে। ব্যক্তিগত এবং দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা রাবেয়া বেওয়াকে সচেতন করেছিল। আজ থেকে বছর দশেক আগে ধাত্রীদের জন্য একটি বিখ্যাত এনজিওর আয়োজন করা ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। রাবেয়া বেওয়ার নিখুঁত ও স্বাস্থ্যকরভাবে শিশু ভূমিষ্ঠ করার দক্ষতা দেখে সে ট্রেনিংয়ে আসা চিকিৎসকসহ সবাই বেশ অবাক হয়েছিলেন।
অর্থ কিংবা উপহারে না
একটি শিশু প্রসব করানোর জন্য রাবেয়া বেওয়াকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়। এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে কোনো অর্থ তিনি নেন না। কেউ কোনো উপহার দিতে চাইলেও তিনি পারতপক্ষে সেটা নেন না। গরিব বলে তিনি কাউকে এড়িয়ে গেছেন তেমন কোনো ঘটনা কেউ বলতে পারেন না।
অবসর নয়, অভিজ্ঞতা বিলান
বয়স আশি পেরিয়েছে। কিন্তু তাঁর কর্মতৎপরতায় কোনোভাবে মনে হয় না রাবেয়া বেওয়া ‘অশীতিপর বৃদ্ধা।’ এখন আর আগের মতো নিজে সন্তান প্রসব করান না। কিন্তু উপস্থিত থাকেন। ভরসার জায়গা হিসেবে অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করেন কর্মরত মানুষদের।
নানাবুজি
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার প্রায় পনেরোটি গ্রামের একটি প্রজন্ম রাবেয়া বেওয়াকে নানাবুজি বলে ডাকেন। এমনও আছে যে বাবা ও ছেলে দুজনই তাঁকে নানাবুজি বলে ডাকছেন। কারণ দুজনের ধাত্রী একজনই—তিনি রাবেয়া বেওয়া। এই পনেরোটি গ্রামে তিনি ভীষণ সম্মানিত মানুষ। নানাবুজির গল্প অর্থ-বিত্ত-সচ্ছলতার গল্প নয়। মানুষের। মানবিকতার।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
২০ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫