Ajker Patrika

বিদেশি শিক্ষায় সবজি চাষ

সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা
বিদেশি শিক্ষায় সবজি চাষ

গ্রামের নাম গড়মা—গরবিনী বা গর্বিত থেকে শব্দটি এসেছে কি না, তা জানা যায় না। কিন্তু নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার গ্রামটি ইতিমধ্যে বেশ নাম কুড়িয়েছে। কৃষিকেন্দ্রিক গ্রাম গড়মা। বারহাট্টা উপজেলা শহরের একেবারে কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ গ্রামের প্রায় সবাই কৃষক। ধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সবজি চাষ করেন তাঁরা। প্রতি ঋতুতে সবুজ থাকে এ গ্রাম।

এ তথ্য পর্যন্ত গড়মা গ্রামের তেমন কোনো গর্বের বিষয় নেই।

কিন্তু পুরো দেশের মানুষ যখন বিদেশে যাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে, ঠিক তখন এ গ্রামের আজাদ মিয়া ফিরে এসেছেন মালয়েশিয়া থেকে। শুধু তা-ই নয়। ফিরে এসে তিনি বনে গেছেন পুরোদস্তুর কৃষক। আজাদ মিয়া মালয়েশিয়ার লিমকক উইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। তাঁর ভাই সাইদও ময়মনসিংহ পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাস করেছেন। লেখাপড়া শেষ করে দুই ভাই চাকরির পেছনে না ছুটে খোরাক অ্যাগ্রো ফার্ম নামক একটি কৃষিখামার গড়ে তুলেছেন। সেখানে তাঁরা চাষ করছেন বিদেশি সবজি। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে পালন করছেন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

খোরাক অ্যাগ্রো ফার্মে চাষ হচ্ছে বকচয়, চই, কিং চই, চায়নিজ বাঁধাকপি, জাপানি শসা, অ্যারাবিয়ান শসা, রঙিন ফুলকপি, ভিয়েতনামি লাল কাঁঠাল, চেরি টমেটো, বিটরুট, সাদা করলা, ক্যাপসিকাম। নিজেদের দেড় একর জমিতে এসব বিদেশি সবজির পাশাপাশি তাঁরা প্রায় সব ধরনের দেশি সবজিও চাষ করেন। এ খামারের ভেতর তাঁরা তৈরি করেছেন একটি গ্রিনহাউস। এতে আরও অনেক বিদেশি সবজি চাষ করার ইচ্ছা আছে আজাদের।

ভোর থেকে খামারের কাজ শুরু করেন আজাদ ও সাদ। তাঁদের সহযোগিতা করেন বাড়ির নারীরা। আজাদ জানিয়েছেন, এ মৌসুমে ৩০ শতাংশ জায়গায় বিদেশি সবজিসহ দেশীয় পদ্ধতিতে তিনি বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মৌসুম শেষে খরচ বাদে তাঁর লাভ থাকবে দুই লাখ টাকার ওপরে।

শুধু দেশি-বিদেশি সবজি চাষই নয়, আজাদ ও সাদ বাণিজ্যিকভাবে পাখি লালন-পালন করেন। খামারের এক প্রান্তে তাঁরা গড়ে তুলেছেন পাখি পালনের শেড। সেখানে বিশেষভাবে রাখা হয়েছে বিভিন্ন জাতে পাখি ও খরগোশ। সেগুলোর মধ্যে আছে লাভবার্ড, ককাটেল, বাজিগর, প্রিন্স, বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু ও বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি মোরগ। এ পাখিগুলোর কোনো কোনোটির প্রতি জোড়ার দাম ১০ হাজার টাকা বা তারও বেশি। নিজেদের দোকান থেকে স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয় এগুলো। কিন্তু বেশির ভাগ পাখি বিক্রি হয় অনলাইনে। এখান থেকেও প্রতি মাসে বেশ ভালো অঙ্কের টাকা আয় করেন আজাদ মিয়া ও সাদ।

নিজেদের পরিশ্রম ও সফলতার অভিনন্দন জুটেছে ইতিমধ্যে। স্থানীয় মানুষ তো বিস্মিত বটেই, সেই সঙ্গে খানিক বিস্মিত হয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান। তিনি বলেছেন, ‘তাঁরা যে উচ্চশিক্ষিত হয়েও কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেছেন এটি খুবই ইতিবাচক। শিক্ষিতরা কৃষিকাজে আগ্রহী হলে কৃষিতে বিপ্লব হবে।’

বারহাট্টা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নবজিৎ সাহা রায় আজাদ মিয়া ও তাঁর ভাইয়ের এ কৃষি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, খোরাক অ্যাগ্রো ফার্মকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ পাশে থাকবে সব সময়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত